রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু, ঝালকাঠি : ঝালকাঠি পৌরসভার বাসন্ডা খালের ভাঙনে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পাড়ের বাদামতলী খেয়াঘাট থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কিস্তাকাঠি আবসন প্রকল্প পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার বিলীন হয়ে গেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে খালের পাড়ের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবার। হুমকীতে তিনটি লবণের মিল, দুটি মসজিদ ও পাকা স্থাপনা। পাশাপাশি খালের পাড় ভেঙে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি ঢুকে মানুষের বসতবাড়ি তলিয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অতুল মাঝির খেয়াঘাট থেকে কিফাইত নগরের গাবখান সেতুর টোলঘর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটারের একমাত্র পাকা সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। সংস্কারের অভাবে সড়কটির বিটুমিন ও খোয়া উঠে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বাসন্ডা খাল ঝালকাঠি পৌরসভার অবহেলিত ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডকে মূল শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এক সময় এ দুটি ওয়ার্ড সদরের বাসন্ডা ইউনিয়নের অন্তর্ভূক্ত ছিল। ৯০ এর দশকে ওয়ার্ড দুটি ঝালকাঠি পৌরসভার সাথে যুক্ত হয়। এদের প্রাচীন নাম পশ্চিম ঝালকাঠি মহারাজগঞ্জ। এক সময় ঝালকাঠি শহরের ব্যবসা বানিজ্যের মূল কেন্দ্র বিন্দু ছিল এই পশ্চিম ঝালকাঠি। বর্তমানে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাদামতলী থেকে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কিস্তাকাঠি আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত খালের পাড় কেন্দ্রীক সড়কটি বিলীন হওয়ায় দুই এলাকার বাসিন্দাদের বসত বাড়িও ভাঙ্গনের হুমকীতে পরেছে।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের একমাত্র পাকা সড়কাটি হয়ে প্রতিদিন সদরের গাবখান, শেখেরহাট, রাজাপুর-কাঁঠালিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ অতুল মাঝির খেয়া পার হয়ে জেলা শহরে প্রবেশ করে। অতুল মাঝির খেয়াঘাটটিও সংস্কার জরুরী হয়ে পড়েছে। এ ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়কই কাঁচা। এতে বর্ষায় মানুষের চলাচলে ভোগান্তির শেষ নেই। মীরবহর বাড়ি থেকে বারেক ফকিরের বাড়ি হয়ে পুরাতন ফেরিঘাট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটারের পাকা সড়কের নির্মাণাধীন কাজ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন। ঋষিবাড়ি থেকে তালুকদার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার অংশের সড়কেরও বেহাল দশা। এ ওয়ার্ডে পাকা নালা না থাকায় বর্ষা মৌসূমে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে।
এদিকে বাসন্ডা খালের ভাঙনের ফলে স্বাভাবিক জোয়ারের পানি ঢুকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের রামনগর বটতলা থেকে নেছারাবাদ মাদ্রাসা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নেছারবাদ, যুব উন্নয়ন ও রামনগর এলাকার বাসিন্দাদের শহরের বের হওয়ার এটি একমাত্র পথ ছিল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, খালের পাড় দিয়ে বয়ে যাওয়া কাঁচা সড়কটি নেই। খালপাড়ের কোথাও কোথাও সামান্য কিছু পথ থাকলেও অনেক স্থানেই তা বিলীন হয়ে গেছে। পথ না থাকায় মানুষের রেকর্ডীয় জমি ও বাড়ির উঠান দিয়ে পথচারিরা চলচল করছে। কোথাও আবার সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁশের সাকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলচল করছে। রামনগর বটতলা এলাকার দিয়ে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে সড়ক ডুবে আছে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফোরকান সিকদার বলেন, বাসন্ডা খালের ভাঙন রোধ করতে না পারলে আমাদের বসতবাড়ি এক সময় বিলীন হয়ে যাবে। বাসন্ডা সেতু থেকে আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত টেকসই বাঁধ দিয়ে সড়ক নির্মাণ করলে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব। এই ওয়ার্ডের অপর বাসিন্দা ডেইরী খামারী মানিক মিয়া বলেন, জোয়ারের পানি ঢুকে আমাদের বসত ভিটাসহ চলচলের পথ তলিয়ে যায়। মূল শহরের বাসিন্দাদের মত আমরাও পৌর ট্যাক্্র দেই। কিন্তু সুবিধা পাচ্ছিনা। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও শ্রমিক নেতা বাবুল হাওলাদার বলেন, দীর্ঘদিন এই ওয়ার্ডের একমাত্র পাকা সড়কটির অবস্থা বেহাল হওয়া সত্ত্বেও তা সংস্কারে হচ্ছেনা। এ এলাকার বাসিন্দারা বর্ষায় কাঁদা পানি মারিয়ে চলাচল করায় তাঁদের দূর্ভোগের শেষ নেই।
ঝালকাঠি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, বাসন্ডা খালের বাদামতলী খেয়াঘাট থেকে কিস্তাকাঠি আবসন পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশে বাঁধ দিয়ে সড়ক নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে কয়েকটি প্রকল্প দেয়া আছে। কিন্তু দাতা সংস্থা এত বড় প্রকল্পে অর্থ দিতে নারাজ। তবে এখানে পানি উন্নয়ন বিভাগের মাধ্যমে একটি প্রকল্প দেয়ার চেষ্টা করছি। তিনি আরও বলেন, উপ শহর প্রকল্পে বরাদ্দ না থাকায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অতুল মাঝির খেয়াঘাট থেকে কিফাইত নগর পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কসহ অন্যান্য সড়কের নির্মাণ কাজ থেমে আছে। আশা করছি আগামী ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের আবার কাজ শুরু হবে।
ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার বলেন, গত পাঁচ বছরে পৌরসভার মূল শহরের ৭টি ওয়ার্ডের সড়ক, কালভার্ট ও নালা পাকা করাসহ সার্বিক উন্নয়ন করেছি। আগামীতে ঝালকাঠি পৌরসভায় প্রায় ২শ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হবে। এই মেয়াদে ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসন্ডা খালের বাঁধ দেয়াসহ সকল অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করা হবে।