সালমান ফার্সী (সজল) নওগাঁ : নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নে একটি কালভার্ট নির্মাণের স্থান নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কৃষি মাঠের জলাবদ্ধতা যথাযথ স্থানে কালভার্ট নির্মাণের দাবিতে কয়েকটি গ্রামের শতাধিক কৃষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই কালভার্টের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
নওগাঁ সদর উপজেলার আবাদপুর, কাশিবাড়ি, নারচী, মশরপুর, কুমুড়িয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের শতাধিক কৃষক গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ আবেদন জানান।
লিখিত ওই আবেদনে বলা হয়, নওগাঁ সদর উপজেলার হাপানিয়া ইউনিয়ন ও মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি কৃষি মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের অধীনে একটি কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু যে স্থানে কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা কোনো কাজেই আসবে না। নির্বাচিত স্থানে কালভার্টটি নির্মাণ করা হলে সেখান দিয়ে কৃষি মাঠ ও বিলের পানি নিষ্কাশন সম্ভব নয়। এতে সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের আবাদপুর, ডাফাইল, মোহনপুর, কাশিবাড়ি, দশপাইকা, নারচি, উল্লাসপুর, কুমুড়িয়া, চত জাফরাবাদ, ভবানীগাঁথী, মশরপুর, চন্ডিক্ষেত্র, কুষাডাঙ্গা, শতপুর, চকবিক্রমসহ প্রায় ২০টি গ্রামের আওতায় থাকা কৃষি মাঠের অন্তত ২০ হাজার বিঘা জমির জলাবদ্ধতার সমস্যা রয়েই যাবে। অথচ যে স্থানে কালভার্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে সেখান থেকে মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ ফিট দূরে কালভার্টটি নির্মাণ করা হলে খুব সহজেই পানি নিষ্কাশন হবে।
সদর উপজেলার কাশিবাড়ি গ্রামের সাইদুল ইসলাম, আবাদপুর গ্রামের আছির উদ্দিন ও গোলাম মোস্তফা, একডালা গ্রামের শাহিন, মখরপুর গ্রামের হযরত আলীসহ ১০-১২ জন কৃষক বলেন, সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের আওতায় ছোট-বড় পাঁচটি কৃষি মাঠ বা বিল রয়েছে। এই সব মাঠের পানি হাপানিয়া-দুলবহাটি সড়কের লাখদহ ব্রীজ দিয়ে নিষ্কাশিত হয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। কিন্তু মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নে পাতনা মৌজায় পাতনা-নারচী সড়কের কারণে পানি আর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে সদর উপজেলার কানছগাড়ি, বড়বিল, পাটগাড়ি, কন্দরগাড়ি এবং ঠাকুরবাড়ি মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এর ফলে বর্ষাকালে এসব মাঠে কোনো ফসল আবাদ হয় না। এসব মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের একটি প্রকল্পের অধীনে মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের পাতনা এলাকায় পাতনা-নারচী সড়কের ওপর একটি কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে মহাদেবপুর উপজেলা প্রশাসনের প্রকল্প অফিসের অধীনে পাতনা এলাকার আন্দিরপুকুর তিনমাথা এলাকায় কালভার্ট নির্মাণের জন্য মাটি খননের কাজ শুরু হয়। স্থানীয় কৃষকদের দাবি পাতনা-নারচী সড়কে যে স্থানে কালভার্টটি নির্মাণ হচ্ছে সেখানকার নালাটি খুব সরু। কারণ ওই স্থানে নালাটির দুই পাশে পুকুর খনন করে নালাটি প্রায় বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। অথচ ওই স্থান থেকে মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ ফিট উত্তরে কালভার্টটি নির্মাণ করা হলে প্রশস্ত নালা দিয়ে সহজেই পানি নিষ্কাশিত হতে পারবে। সেখানে কালভার্ট নির্মাণ করা হলে পাঁচটি কৃষি মাঠে পানি নিষ্কাশিত হয়ে বিল মনসুরের বিশাল জলাশয়ে পড়লে আর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে না।
এ বিষয়ে ভীমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাম প্রসাদ ভদ্র বলেন, ‘যে স্থানে কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে একটি কালভার্ট নির্মান হওয়া দরকার। তবে তদন্ত করে ওই স্থানের চেয়ে আরও কোনো যৌক্তিক স্থানে কালভার্ট নির্মাণ করা হলে আমার কোনো আপত্তি নেই।’
মহাদেবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুলতান হোসেন বলেন, ‘প্রয়োজনীয়তার তাগিদে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে সেখানে একটি কালভার্ট নির্মাণের প্রকল্প বাস্তাবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে স্থানীয় কৃষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এখন কালভার্টের স্থান নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কৃষকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ স্থান নির্বাচনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি টেকনিক্যাল কমিটি তৈরী করে দিয়েছেন। ওই কমিটির রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।’