কন্যা সন্তান হলেই বিক্রি করে দেন তারা
রুবেলুর রহমান : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে পাঁচদিনের কন্যা সন্তানকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক পরিবারের বিরুদ্ধে। রোববার (২১ জুন) উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের তুলশীবরাট গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এর আগেও ওই পরিবারটি তাদের আরেক কন্যা সন্তানকে বিক্রি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর ইউনিয়নের তুলশীবরাটের মৃত আদম শেখের ছেলে সাইফুল ওরফে ছাবুল শেখ মানসিক প্রতিবন্ধী এবং তার স্ত্রীও মানসিক ভারসাম্যহীন। ফলে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কী বোঝেন না তারা। ওই দম্পতি এখন পর্যন্ত দুই ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাদের ভালোমন্দ দেখভাল করেন ছাবুল শেখের ভাই হাবিল শেখ। তার মাধ্যমেই সদ্য জন্ম নেয়া পাঁচদিনের কন্যা সন্তানকে সাতক্ষীরায় তাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। স্থানীয়রা ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রির কথা বললেও ওই পরিবারের সদস্যরা তা অস্বীকার করেছেন।
এর আগে গত বছর তারা আরেক কন্যা সন্তানকে উপজেলার পদমদীর বেরুলীতে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেছেন বলেও জানা গেছে। এছাড়াও বড় ছেলেকে ওই দম্পতি নিজে ও আরেক ছেলেকে তার ভাই খোকন লালন পালন করছেন।
স্থানীয়রা বলেন, ছাবুল ও তার স্ত্রীর মানসিক সমস্যা আছে। কিন্তু সন্তান জন্মের পরই হাবিলের সহযোগিতায় বিক্রি করা হয়েছে। গত শুক্রবার (১৯ জুন) ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মাত্র পাঁচদিনের শিশু সন্তানকে সাতক্ষীরার এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন তারা। রোববার (২১ জুন) সকালে শিশুটিকে নিয়ে গেছেন ওই ব্যক্তি।
এর আগেও তারা আরেক কন্যা সন্তানকে ২০ হাজার টাকায় বেরুলী এলাকায় বিক্রি করেছেন। তারা ছেলে সন্তান জন্ম নিলে রেখে দেন এবং মেয়ে সন্তান হলে বিক্রি করে দেন। আসলে হাবিলই সব কিছু করছেন, কারণ ছাবুল তো পাগল। তেমন কিছু বোঝেন না। আইনগতভাবে সন্তান দত্তক দিলে কারও কোনো কথা থাকতো না। এটা রীতিমত ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শিশুটির দাদি জমিরন বিবি জানান, ছেলে ছাবুল ও বউ দুজনই পাগল। নিজেরাই খাবার পায় না ও নিজেদের ভালোমন্দ বোঝে না। তাই সাতক্ষীরায় থাকা তাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের কাছে তার ছোট নাতনিকে দিয়েছেন। এখন খুশি হয়ে তারা পাগল ছেলেকে কিছু টাকা দিতে পারে।
হাবিল শেখ বলেন, আমার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী পাগল। নিজেদের ভালোমন্দ নিজেরাই বোঝে না। যে কারণে তাদের খোঁজখবর রাখি। তবে তাদের শিশু সন্তান বিক্রির অভিযোগ সঠিক নয়। খাবার ও পরিচর্যার অভাবে বাচ্চা মারা যাবে। এ কারণে লালন পালনের জন্য সাতক্ষীরায় এক অত্মীয়ের কাছে দিয়েছি।
তিনি বলেন, গত বছর আরেক কন্যা সন্তানকে উপজেলার বেরুলীতে এক আত্মীয়েল কাছে দিয়েছি। সে সময় তারা খুশি হয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল। তাদের
জামালপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, এলাকার হাবিল শেখ তার মানসিক ভারসাম্যহীন ভাই ছাবুল শেখের পাঁচদিনের শিশু সন্তানকে অন্যত্র বিক্রি করেছেন বলে শুনেছি। এটা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। হাবিলকে আজকের মধ্যে ওই বাচ্চা ফেরত আনতে বলেছি।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, বাচ্চা বিক্রির বিষয়টি শুনেছি। তবে দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি মোতাবেক তারা যদি বাচ্চা দত্তক দেয়, তাহলে ঠিক আছে। আর যদি বিধি মোতাবেক সেটা না হয়ে থাকে, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষ আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।