নওগাঁর রাণীনগরে পানি নিষ্কাশনের খারি (নালা) বন্ধ রাখায় কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ॥ দৃষ্টি নেই কর্তৃপক্ষের
আব্দুর রউফ রিপন, রাণীনগর (নওগাঁ) সংবাদদাতা: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহি বিল রক্তদহ। এই বিলটি রাণীনগর ও বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত। প্রায় ৩শত বিঘা জমি নিয়ে অবস্থিত এই বিলটির সিংহ ভাগই রাণীনগর উপজেলার পারইল, কালীগ্রাম ও সদর ইউনিয়নের অংশের মধ্যে। দীর্ঘদিন যাবত এই বিলের নিচু ও বিল সংলগ্ন এলাকার কয়েক হাজার বিঘা জমিতে স্থানীয়রা ইরি-বোরো ধান চাষ করে আসছে।
সূত্রে জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে এই বিলে প্রায় ২২টি খারি দিয়ে পানি প্রবেশ করে আর হাতে গোনা একাধিক ছোট-বড় খারি দিয়ে পানি বের হয়। তারপরও দীর্ঘদিন পানি বের হওয়া এই খারিগুলো খনন না করার কারণে মাটি জমে সরু হয়ে গেছে আবার কোনটি দিয়ে পানি বেরও হয় না। তাই বিল থেকে পানি বের হওয়ার প্রধান দুটি খারি হচ্ছে রাণীনগর-আবাদপুকুর সড়কের রতনডারী খারি (হাতিরপুল) ও সিম্বা খারি। কিন্তু রাণীনগর-আবাদপুকুর সড়কের সংস্কার, ২২টি ব্রিজ ও ৩টি সেতু নির্মাণের কাজ চলমান। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এই সড়ক, ব্রিজ ও সেতুর কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কাজগুলো বন্ধ থাকায় রতনডারী খারির হাতিরপুল ও সিম্বা ব্রিজ নির্মাণের কাজও বন্ধ রাখা হয়েছে। এই দুই ব্রিজের খারি বন্ধ করে যে পার্শ্ব রাস্তা তৈরি করা হয়েছে সেখানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়নি। অপরদিকে বর্ষা মৌসুম আসন্ন। যদি বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই এই দুই খারিসহ আরো ছোট-খাটো খারির মুখগুলো খুলে দেওয়া না হয় তাহলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে রক্তদহ বিলের নিচু ও তার সংলগ্ন কয়েক হাজার বিঘা জমির ইরি-বোরো ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
বোদলা গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন বিল থেকে পানি বের হওয়ার খারিগুলোর অবস্থা ভালো না হওয়ার কারণে প্রতি ইরি-বোরো মৌসুমে বর্ষার সময় আমরা খুবই শঙ্কিত থাকি। কারণ বিলের পানি বের হতে না পারায় প্রতি বছরই কিছু না কিছু জমির ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়। কিন্তু এবছর জমির ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। কারণ বিল থেকে পানি বের হওয়ার প্রদান দুটি খারির মুখ বন্ধ করে ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে কিন্তু বর্ষা মৌসুমের আগে যদি এই খারির মুখগুলো খুলে দেওয়া না হয় তাহলে বিলের নিচু জমিসহ আশেপাশের কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাবে। তাই অতিদ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে এই বিল এলাকাসহ উপজেলায় ১৮হাজার ৫৮৫হেক্টর জমিতে ইরি ধান চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও রোগ-বালাইয়ের তেমন আক্রমন না হওয়ায় এখন পর্যন্ত ধানগুলোর অবস্থা খুবই ভালো রয়েছে। এছাড়া রক্তদহ বিল ও তার আশেপাশের জমির ধানগুলোও খুবই ভালো হয়েছে কিন্তু বিল থেকে পানি বের হওয়ার খারির মুখগুলো বন্ধ করার ফলে বিলে বর্ষার পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে আনুমানিক দেড় হাজার বিঘা জমির ধান তলিয়ে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছি। আমি এই বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একাধিকবার লিখিত ভাবে জানিয়েছি কিন্তু তারা এখনো এই বিষয়ে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেননি।
উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন আমি এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেছি।
নওগাঁ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হামিদুল হক বলেন, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের কারণে কাজ বন্ধ না থাকলে বর্ষা মৌসুমের আগেই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যেতো। তবুও আমি এই বিষয়ে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা প্রদান করেছি।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য মো. ইসলাফিল আলম বলেন, রাণীনগর- আবাদপুকুর সড়কের কাজ নিয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অনেক দিন ধরে ছিনিমিনি খেলছে। শত কোটি টাকার এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ করার বিষয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই। শুধু চরম কষ্ট ভোগ করছে আমার এলাকার লাখ লাখ মানুষ। রক্ত বিল থেকে পানি বের হওয়ার খারিগুলোর মুখ খুলে দেওয়ার জন্য আমি অনেকবার সড়ক কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বলেছি। যদি তাদের কারণে বিলের জমির ধানগুলো বর্ষার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয় তাহলে সেই ক্ষতিপূরন তাদেরকে দিতে হবে তা না হলে আমার কৃষক ভাইরা আইনের আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হবেন।