নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: ধানসহ সব কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্যের দাবিতে নওগাঁয় মানববন্ধন ও সমাবেশ পালন করা হয়েছে। ‘কৃষি বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগানকে সামনে রেখে বুধবার শহরের মুক্তির মোড়ে এ কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ কৃষক সমিতি নওগাঁ জেলা শাখা।
কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা ছাড়াও সমাবেশে বক্তারা ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি ক্রয়কেন্দ্র ও খাদ্যগুদাম নির্মাণ করে সরকার নির্ধারিত প্রতি মণে ১ হাজার ৪০ টাকা দামে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় ও সকল কৃষককে কৃষি কার্ড প্রদান নিশ্চিত করার দাবি জানান।
সংগঠনের আহ্বায়ক মনসুর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নওগাঁ জেলা শাখার সভাপতি মহসিন রেজা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নওগাঁ জেলা সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন, কৃষক সমিতি নওগাঁ জেলা শাখার সদস্য সচিব আব্দুস সোবহান, সদস্য রেবেকা সরেন, ছাত্র ইউনিয়ন নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমেদ প্রমুখ।
মহসিন রেজা বলেন, বর্তমান সরকার মুখে নিজেদের কৃষিবান্ধব সরকার বলে দাবি করলেও আসলে তারা ব্যবসায়ী বান্ধব সরকার। এ দেশের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ জনগণ কৃষক। এই কৃষকদের প্রতি সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। দায়বদ্ধতা রয়েছে ব্যবসায়ীদের প্রতি। সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে ব্যবসায়ীরা। তাই ব্যবসায়ীরা মুনাফা থেকে বঞ্চিত হোক এটা সরকার চায় না।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীরা আজকে ফুলে-ফেঁপে আরও বড় পুঁজির মালিক হচ্ছে। আর দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি যে কৃষক, তারা কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে দিন দিন নিঃস্ব থেকে আরও নিঃস্ব হচ্ছে। কৃষকের এই অসহায় অবস্থাকে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে দেখা উচিত। ধানসহ সব কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
বাসদ নেতা জয়নাল আবেদিন বলেন, সরকার প্রতি মৌসুমে যে পরিমাণ ধান সংগ্রহের ঘোষণা দেয়, এতে কৃষকের কোনো লাভে আসে না। কৃষকদের লাভবান করতে চাইলে এবং বাজারে প্রভাব ফেলতে চাইলে প্রত্যেক কৃষকের কাছ থেকে তাঁর উৎপাদিত ৩০ শতাংশ ধান সরকারকে কিনতে হবে।
শফিকুল ইসলাম বলেন, একজন কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষিপণ্য উৎপাদন করে থাকেন। প্রায় প্রতিবছর কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম ও কৃষি শ্রমিকের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ধানসহ সব কৃষিপণ্যের উৎপাদনে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, কৃষিপণ্যের দাম উল্টো কমছে। ফলে যেসব মানুষ কৃষিপণ্য উৎপাদন করে জীবন নির্বাহ করে তাঁদের অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন ভেঙ্গে পড়ছে। তাঁদের জীবনমান দিন দিন কমে যাচ্ছে।
নওগাঁ কৃষক সমিতির আহ্বায়ক মনসুর রহমান বলেন, সরকার ধানের যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে দামেও কৃষক ধান বিক্রয় করতে পারলে কিছুটা লাভবান হতো। কিন্তু বর্তমানে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি মণে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কম দামে ধান বিক্রি করছে সরকার। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কৃষকেরা ধান উৎপাদনে উৎসাহ পাবেন না। এখনই নওগাঁর অনেক কৃষক ধান চাষ বাদ দিয়ে কৃষি জমিতে আম বাগান ও পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় দেশে বড় ধরণের বিপর্যয় দেখা দেবে।