নজরুল
ইসলাম তোফা :: সব জিনিস এবং বিষয়ের মর্যাদা সব মানুষের বোঝার ক্ষমতা বা
দক্ষতা থাকে না। যথাযথ স্থানে যথাযোগ্য ব্যক্তি অধিষ্ঠিত না হলে সত্য,
সুন্দর, মঙ্গল একেবারে ধুলিষ্মাৎ হয়। সেখানে স্হান করে নেয় যেন অত্যাচার,
জুলুম আর দুর্নীতি।সুুতরাং জীবনকে সুুুন্দর ও শোভন রূপে গড়ে তোলা না হলে
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়া যায় না।
এজন্য মানব জীবনে যেন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জ্ঞানের। জ্ঞানই শক্তি আর
জ্ঞানেই মুক্তি। কারণ, জীবন যাপনে সকল মানুষকে হাজারো সমস্যা মোকাবিলা করেই
'সম্মুখে অগ্রসর' হতে হয়। আপন জন্মের ব্যাপারেই মানুষের নিজের কোনো ভূমিকা
থাকে না। উঁচু বা নিচু, ধনী বা দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম হওয়াই যেন তার
ইচ্ছা ও কর্মের ওপর নির্ভর করে না। কিন্তু কর্ম জীবনে তার ভূমিকা এবং
অবদানের দায় তার নিজের উপর বর্তায়। এই পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃত বিচারে তার
জন্ম-পরিচয় তেমন গুরুত্ব বহন করে না বলেই মনে করি।
বরং মানুষ
কর্ম-অবদানের মাধ্যমেই পেয়ে থাকে বহু মর্যাদার স্হান বা আসন এবং হয়ে যান
একে বারেই বরণীয়-স্মরণীয়। পক্ষান্তরে আবার বলা যায়, এমন সমাজে এক দল লোক
রয়েছে, যারা কি না তাদেরই বংশ আভিজাত্যে নিজেদের জ্ঞানী এবং সম্ভ্রান্ত মনে
করে। তারা বংশ মর্যাদার অজু হাতে সমাজে বিশেষ মর্যাদা দাবিও করে। সুতরাং-
এমন আলোচনার মুল উদ্দেশ্যটা হলো অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্কর বা ভয়ঙ্করী। অতি জ্ঞানী
ভাবধরা গোবরে পোকার পাণ্ডিত্যেরই কিঞ্চিৎ বিশ্লেষণ মাত্র। অল্পবিদ্যা অর্থ
সামান্য লেখা পড়া বা জ্ঞান। আর "অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী" হচ্ছে সামান্য বিদ্যা
ক্ষতিকর, কারণ এতে অহঙ্কার জন্মে, কিন্তু জ্ঞান হয় না। ছোট বেলায় সবাই
পড়াশোনায় ব্যবহার করতো অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী (অল্প বিদ্যার গর্ব)। আবার তাকে
বাক্য তৈরিতেও নিয়ে যেতো। -"অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী বলেই অর্বাচীন- জব্বার মিয়া
এ বাংলাদেশের সেরা বৈজ্ঞানিক "ড. কুদরাত-এ-খুদা'র" বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের
সমালোচনায় অগ্রসর হয়েছিল।
সুতরাং সে সব মানুষের প্রয়াস বাস্তবতা
বিবর্জিত ও হাস্যকর। আসলে এখনো সমাজের নিচুতলায় জন্ম নিয়েও তারা কর্ম বা
অবদানে বড় কিংবা জ্ঞানী হতে পারছে। মানব সমাজের ইতিহাসে এ রকম উদাহরণ
অজস্র। কিন্তু "অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী" এই প্রবাদটা কম বেশি সকলের জানা
থাকলেও প্রয়োগটা কম। ''অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্কর বা ভয়ঙ্করী" কথাটি অতি মাত্রায়
সত্য।বলতে চাই যে অশিক্ষিত মানুষের চেয়ে অল্পশিক্ষিত মানুষরা সমাজের জন্যে
বেশি ক্ষতি কর। অশিক্ষিত মানুষরা কেউ কোন বিষয়ে না জেনে মন্তব্য করে না বা
তর্ক করে না। নিজেকে নিয়েও তারা জাহির করে না। পক্ষান্তরেই অল্প অশিক্ষিত
মানুষরা যা জানে না তা নিয়ে তর্ক করতে দ্বিধা করেনা। তারা তাদের স্বল্প
বিদ্যাকে পুঁজি করে পৃথিবীর সব কিছুকেই পরিমাপ করতে চায় আবার যেন ঠকবাজী
করে তা পরিমাপ করেও ফেলে।
সকল অল্প শিক্ষিত মানুষকে কটাক্ষ করে এমন
এই আলোচনার মুল বিষয় নয়। ‘অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী' এই প্রবাদ বাক্যটিকে এতদিন
কথার কথাতেই যেন দাঁড় করানো হতো৷ কিন্তু মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর উক্তি
দ্বারা বুঝা যায় যে, তাঁরও ইতিহাস ও ভিক্তি রয়েছে।তিনি বলেন, আমরা সবাই কম
বেশি জানি তা হলো অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী। কিন্তু কেন ভয়ঙ্করী তা জানি না।
মানুষদের জ্ঞান-বিজ্ঞানকেই বাড়িয়ে চলার সাধনার ক্ষেত্রে যেন চির দিনই
আমিত্বের অহংকার বড় বাধা হয়ে থেকেছে। মানুষ যেটুকু জানেন, তারচেয়ে সেটা বলা
এবং জানানোর জন্য 'চেষ্টা কিংবা গর্ব' করেন।মনে করে থাকেন যথেষ্ট জ্ঞান
অর্জন হয়েছে,- এটাই মানুষের অহংকার কিংবা তার- "নিজস্ব অল্প বিদ্যার
অহংকার"।
লেখক:
নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।