মাহবুবুজ্জামান সেতু, নওগাঁ : নওগাঁর মান্দায় গনেশপুর ইউ'পির শ্রীরামপুর খাঁ পাড়ার চলাচলের রাস্তা না থাকায় চরম ভোগান্তির স্বীকার হতে হচ্ছে পথচারীদের। গত ৫-৬ বছর পূর্বে আইল রাস্তাটি প্রস্থত করন করার পরপরই স্থানীয় প্রভাবশালী জমিদাররা তা কেটে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। রাস্তাটির আসেপাশে পথচারিদের তেমন একটা জমি না থাকার কারনে তারা প্রতিবাদ করার সাহস পাননা। এমনকি তারা নিজেদের চলাচলের সুবিধার্থে টাকার বিনিময়ে চিকন আইলের দুপার্শ্বে যে পরিমান দু-একহাত জমি হয় তার দাম দিয়ে কিনে নিতে চাইলে এবং এওয়াজ বদল বা জমির বদলে জমি দিতে রাজি হননা ওইসব জমিদার মহল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোমলমতি শিক্ষার্থ, স্থানীয় কৃষক, পথচারীরা হাট বাজার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ক্লিনিক, হাসপাতালে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় চারপাশে ধানক্ষেত আর ডোবা-নালা পেরিয়ে বাধ্য হয়ে অনেকটা পথ ঘুরে কৃষি জমির সরু আইল দিয়ে যাতায়াত করছেন। আর এভাবে চরম ভোগান্তির শিকার হলেও যেনো দেখার কেউ নেই।
ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ইদন খাঁ ওরফে চৈতার পুত্র খাজেম আলী খাঁন ও হাসান খাঁন, মধু খাঁ'র পুত্র কছির খাঁ, কছির খাঁ'র পুত্র হাফিজুল খাঁ, লবিরের পুত্র মাজেদুল এবং বাবুর আলী, শাপলা খাতুন, আদরীসহ বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা অনেকেই আক্ষেপ করে জানায়, বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার রাস্তা না থাকায় তাদের খুব কষ্ট করেই বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করতে হয়।
তাছাড়া অনেকেরই বাড়ি পাকা রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা দূরে হওয়ায় তাদেরকে বিদ্যালয়ে আসতে হয় পায়ে হেটে। তাতে তাদের কষ্ট নেই কিন্তু যখন বিদ্যালয়ে আসতে তাদের একটি বসতঘরের পায়খানার পাশ দিয়ে যেতে হয়, তখন তাদের খুব খারাপ লাগে।
ছাত্র অভিভাবকরা জানান, শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় সকল শিক্ষার্থীকে কৃষি জমির আইল আর ডোবা-নালার পাশ দিয়ে কাদা-পানি ভেঙ্গে বিদ্যালয়ে যেতে হয়।
আর জমির সরু আইল দিয়ে চলাচলের সময় মাঝে মধ্যেই পা ফসকে কাঁদা পানিতে পড়ে যেতে হয়।
কাঁদা পানিতে পড়ে অনেক সময় তাদের বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও তাদের পরিধেয় পোশাকও ভিজে যায় কখনও কখনও।
আবার বিদ্যালয়ে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় অনেক বাবা-মা বর্ষা কালে তাদের সস্তানদের বিদ্যালয়ে যেতে দেন না। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি দ্রুত প্রশস্থকরণ করা জরুরী।
উল্লেখ্য, অত্র শ্রীরামপুর গ্রামের পূর্ব- দক্ষিণ কর্ণারের সীমান্তবর্তী এলাকা "খাঁ পাড়া" এই পাড়ায় ১৫-২০ টি পরিবারের প্রায় শতাধিক লোকের বসবাস। আর এসব লোকের বাড়ি থেকে বের হয়ে কোথাও যাবার জন্য চলাচলের রাস্তা না থাকার কারনে তাদেরকে প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। বিশেষ করে কাঁচা সবজি, তরকারির আবাদ এসব এলাকায় বেশি হয়। আর এসব আলু,পটল, করলা, সীম, টোমেটু, বেগুন, কপি ইত্যাদি কৃষিপন্য বাজারজাতকরনে কৃষকদের বেকায়দায় পড়তে হয়। অর্থাৎ এই যান্ত্রিক যুগেও কৃষকদের কৃষিপন্য বাজারজাত করতে ভারশিকাতে করে বাজারে নিতে হয় সেসব পন্য। এর চাইতে আর কষ্টদায়ক ব্যাপার কি হতে পারে? শুধু তাই না, কোনো ইমার্জেন্সি রুগীকে হাসপাতালে নেয়ার প্রয়োজন হলে তাকে ঘাড়ে করে মেইন রোড পর্যন্ত নিতে হয়, তারপরে কোনো গাড়ি পাওয়া যায়। তার আগে কোনো বুদ্ধিই যেনো কাজে লাগেনা। তারা এই ভোগান্তী থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়। আর এজন্য শ্রীরামপুর খাঁ পাড়ায় বসবাসকারী লোকজন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে গনেশপুর ইউ'পি চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিন মন্ডল জানান, বিষয়টি আমি অবগত আছি, তবে এটি কোনো নকসার রাস্তা না হওয়ায় রাস্তাটি প্রশস্তকরণ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে রাস্তার পাশে যাদের জমি আছে তারা যদি বিষয়টি বিবেচনা করে সকলের চলাচলের সুবিধার্থে চিকন আইল রাস্তার দুপার্শ্বে বরাবরই দু-একহাত করে জায়গা দেয় তবে আমি আমার পরিষদের পক্ষথেকে কর্মসূচীর লোকজন দিয়ে রাস্তাটি দ্রুত প্রশস্তকরণ করে দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ। আর রাস্তাটি নির্মাণ করা হলে সকলের জন্যই সুবিধা হবে।