মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর মহাদেবপুরে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে আত্রাই নদীর মহিষবাথান ঘাট সহ বিভিন্ন পয়েন্টে বালু উত্তোলন বন্ধ করলেও উঠছেনা নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন। দীর্ঘদিন বালু উত্তোলনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ মারাত্বক হুমকীর মূখে পড়লেও বালু দস্যুরা ২-৪ দিন বন্ধ থাকার পর আবারও বীরদর্পে বালু উত্তোলন করছে। তাই তারা সুকৌশল অবলম্বন করে আপাতত বালু উত্তোলন বন্ধ করলেও তুলছেনা নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন। বালু লুটপাট মহোৎসবে প্রতিদিন শতশত বালুবাহি গাড়ী বা ট্রাক বেপরোয়া চলাচলে নষ্ট হচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট। নদীর তলদেশ গর্ত করে ড্রেজিং করে বালু উত্তোলন করায় হুমকীর মুখে পড়ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ ফসলী জমি।
এলাকাবাসী জানায়, ৩ মে শুক্রবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার থানা পুলিশ সংগে নিয়ে মহিষবাথান ঘাটে বালু উত্তোলন বন্ধ করেছে কিন্তু নদী থেকে ড্রেজার মেশিন তুলে ফেলা হয়নি। দু’একদিন পর তারা আবারও বালু উত্তোলন শুরু করবে। এলাকাবাসী বালু উত্তোলন বন্ধসহ নদী থেকে ড্রেজার মেশিন তুলে ফেলার দাবী জানান। এভাবে মহিষবাথান ঘাটে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকলে এলাকাবাসী মারাত্বক ক্ষতির মুখে পড়বে। বালুদস্যুরা প্রভাবশালী হওয়ায় কাউকে তোয়াক্কা করছে না। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায় সারা দেশে বিভিন্ন নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে। বগুড়া করতোয়া নদীতে ড্রেজার মেশিন পুড়ে দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। শুধু লোক দেখানো ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে কোন ফল হবে না।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপণা আইন ২০১০ এর ধারা ৫ এর ১ উপধারা অনুযায়ী পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না। ধারা ৪ (খ) অনুযায়ী সেতু কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারেজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন সরকারী ও বেসরকারী স্থাপনা হইলে অথবা আবাসিক এলাকা হইতে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন করা যাইবে না। কিন্তু বালু দস্যুরা কোন নীতিমালা তোয়াক্কা করে না। এলাকাবাসী নদী থেকে অবৈধ ড্রেজার মেশিন তুলে ফেলাসহ বাঁধ ভাঙ্গনের কবল থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বালু তোলার কাজে জড়িত কয়েকজন শ্রমিক জানান, প্রশাসনের লোকজন অভিযানে আসার আগেই এলাকায় খবর চলে আসে। এ কারণে কর্মকর্তারা আসার আগেই ব্যবসায়ীরা কিছু মেশিন সরিয়ে নেয়। অভিযানের পর সুযোগ বুঝে আবার বালু তোলা অব্যাহত রাখা হয়।
নদী পারের এক গৃহবধু জানান, সারা বছর বালু উত্তোলন করার ফলে বর্ষা মৌসুমে নদী ভরে যাওয়ার পর যখন নদীর পানি কমে যায় তখন বাঁধের সিসি ব্লক ধসে পড়ে। তিনি আরো জানান, বালু আনা নেয়ার জন্য ট্রাক্টর ব্যবহার করছে বালু ব্যবসায়িরা। এসব ট্রাক্টর গ্রামের রাস্তা-ঘাটের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। বালু বহনকারী ট্রাক-ট্রাক্টর চলাচলে ধুলো-বালি উড়ে রাস্তার দু-পার্শ্বের বাড়ি ঘর বসবাসের অযোগ্য ও জন স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবারক হোসেন এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, গত শুক্রবার ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছি এবং ঘর দরজা যা ছিল ভেঙ্গে দিয়েছি।