আতাউর শাহ্, নওগাঁ: নওগাঁ সদর হাসপাতালে লেগেছে দিন বদলের হাওয়া। বর্তমান তত্বাবধায়ক ডা: রওশন আরা খানম তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বের পাশাপাশি ক্রমাগত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে পাল্টে দিয়েছেন পূর্বের চিত্র। হাসপাতালে আর পূর্বের মতো দূর্গন্ধ নেই। নোংরা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে না।
বর্তমানে হাসপাতালের পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক বেশী পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। আরও একটি বিশেষ চিত্র দৃশ্যমান যা ইতি পূর্বে কেউ দেখে নাই। আর সেটি হলো এ যাবৎকালে শয্যা সংখ্যার অতিরিক্ত রোগী মেঝেতে থাকত। ডা: রওশন আরা তার মহানুভতা দিয়ে ওয়ার্ডের বারান্দার করিডোরে ৭৫ টি শয্যা বানিয়ে দিয়েছেন এবং শয্যার সাথে ফ্যানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
হাসপাতালে আসা সেবা প্রত্যাশীদের এখন আর রোগীদের মেঝেতে থাকতে হচ্ছে না। এটি তার অন্যতম একটি বিশেষ উদ্যোগ যা ইতি পূর্বে কখনও কেউ ভাবেনি এবং এই উদ্যোগ জনগনের নিকট অত্যন্ত প্রসংশিত হয়েছে। তিনি নওগাঁ সদর হাসপাতালে তত্বাবধায়কের দায়িত্বে আসার পর হাসপাতালের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে সংস্কার ও মেরামতের মাধ্যমে হাসপাতালের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন। তারই সার্বিক তত্বাবধানে হাসপাতালের বাহিরে ও ভেতরে পূরো মেঝে টাইলস লাগানো হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে। তিনি শুধুমাত্র পরিবেশগত পরিবর্তনেই নয় রোগীদের সেবার মানও বৃদ্ধি করতেও নিয়েছেন নানান যুগান্তকারী উদ্যোগ ।
অনুদানের মাধ্যমেও হাসপাতালের সম্পদ বৃদ্ধি করেছেন তিনি। যেমন এনালাইজার মেশিন, সাকার মশিন, নেবুলাইজার মেশিন, ইসিজি মেশিন, ওয়েট মেশিন প্লাষ্টিক চেয়ারসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি। চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট, ফার্মাসিষ্ট ও অন্যান্য কর্মচারীরাও একাত্মতার মাধ্যমে একনিষ্ঠ হয়ে আন্তরিকতার সহিত কাজ করে চলেছেন।
তার সব চাইতে মহৎ উদ্যোগ হচ্ছে এই হাসপাতালে যোগদান করে প্রথমেই তিনি যুগ যুগ ধরে অব্যাহত থাকা রোগীধরা দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। ফলে একদিকে যেমন, রোগীরা দালাল দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে না। অন্যদিকে রোগীদের পকেটের টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে না। এছাড়াও রোগীদের হয়রানির শিকার হয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না এবং সাধারন রোগীরা স্বল্প খরচে সরকারী হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ ডা: দ্বারা চিকিৎসাসেবা নিতে পারতিছেন।
অন্যদিকে, হাসপাতাল থেকে অধিক পরিমান রাজস্ব আয় বেড়ে যাওয়ায় তিনি তা সরকারী কোষাগারে প্রতি মাসে জমা দিচ্ছেন। তিনি প্রতি মাসে এ হাসপাতাল থেকে প্রায় ৮,০০০০০/-আট লক্ষ টাকার মত জমা দেন বলে জানা গেছে। যা আগে ছিল এর অর্ধেক। এই তত্বাবাধায়কের বলিষ্ট নেতৃত্বে এটি সম্ভব হয়েছে যা নি:সন্দেহে একটি যুগান্তকারী ও প্রসংশনীয় উদ্যোগ। তিনি নওগাঁ সদর হাসপাতালে যোগদান করার পর থেকে সময়ে অসময়ে ডাক্তারদের চেম্বারে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টেটিভ বা প্রতিনিধিদের হাসপাতালে অবাধ চলাচল প্রতিরোধ করেছেন। যার ফলে সেবা প্রত্যাশী রোগীদের চিকিৎসাসেবা আর ব্যাহত হচ্ছে না। নির্দিধায় তারা মন খুলে ডাক্তারদের সাথে সমস্যার কথা বলে চিকিৎসা সেবা নিতে পারতিছে বলেও জানা গেছে।
ডা: রওশন আরা নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিজ উদ্যোগে হেল্প ডেক্স বা অনুসন্ধান সেবা চালু করেছেন যা ইতি পূর্বে এ হাসপাতালে কোনদিনই চালু ছিল না। চিকিৎসক, নার্স, ও অন্যান্য কর্মচারীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করার ফলে বহি: বিভাগে সময় মেনে চিকিৎসগণরা রোগী দেখছেন। চিকিৎসগণরা ইনডোরে দু-বেলা রাউন্ড দিচ্ছেন অপারেশন থিয়েটারে প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের মেজর ও মাইনর অপারেশন করছেন। জরুরী বিভাগে ২৪ ঘন্টা একজন মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল এ্যাসিসটেন্ট, ও অন্যান্য কর্মচারীরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, কনসালটেন্টগণ যে কোন সময় জরুরী রোগীদের অনকলে এসে চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন। বহি: বিভাগে ও অন্ত বিভাগে নিয়মিত স্বাস্থ্য শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন তিনি। স্বাস্থ্য শিক্ষার জন্য তিনি একটি ৩২ ইঞ্চি এলইডি টিভি দিয়েছেন যা বহি:বিভাগের দৃশ্যমান জায়গায় বসানো হয়েছে।
বর্তমান তত্বাবধায়ক ডা: রওশন আরা খানম হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সেবা প্রত্যাশী রোগীদের সহিত ভাল আচরণ করার জন্য প্রতিনিয়ত আহবান জানান। বর্তমানে যিনি এই নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালের সকল কর্মকান্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন-তিনি হলেন অত্যান্ত বুদ্ধিমতি, বিচক্ষণ, পরিশ্রমী, বিনয়ী, মানবিক, উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহনকারী এবং দূরদর্শী কর্মপরিকল্পনার অধিকারী সম্পন্ন তত্বাবধায়ক ডা: রওশন আরা খানম।
তিনি মায়ের মমতায় এক ছাতার মধ্যে সকলকে নিয়ে এই নওগাঁ জেলা হাসপাতালটি সুন্দরভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছেন। তিনি সকল সরকারী/বেসরকারী বিভাগ, রাজনৈতিকনেতা, সংবাদকর্মী ও বিভিন্ন সংগঠনের সকলের সহিত যোগাযোগ ও সু-সম্পর্ক বজায় রাখেন বলে জানাগেছে। পাশাপাশি এই হাসপাতালের অবকাঠামোর এক অংশে নওগাঁ মেডিকেল কলেজ চালু হওয়ায় মেডিকেল কলেজের সকল কর্মকান্ডে আন্তরিকভাবে পূর্ন সহযোগীতা করে যাচ্ছেন ও তিনি।
সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: রওশন আরা খানম বলেন, মহান আল্লাহ্ আমাকে অনেক সৌভাগ্য দিয়েছেন যে, আমার নিজের জেলার এক মাত্র চিকিৎসার ভরসার স্থল এই নওগাঁ জেলার সদর হাসপাতালটির দায়িত্ব পেয়েছি। তাই এই হাসপাতালটিতে বিদ্যমান সকল অনিয়ম/সমস্যা দুর করার জন্য আন্তরিক ভাবে চেস্টা করে যাচ্ছি, যেন এই জেলার জনগণ অসুস্থ হলে একটি পরিছন্ন সুন্দর পরিবেশে সুষ্ট ও উন্নত চিকিগসা পায়। এ ছাড়া আমাদের বহুদিনের স্বপ্ন নওগাঁ মেডিকেল কলেজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উপহার দিয়েছেন। তাঁকে জানাই আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা। আমার নওগাঁ জেলা সদর হাসপাতালের অবকাঠামতে মেডিকেল কলেজের কার্যক্রম শুরু হবে তাই যাহাতে খুব ভালভাবে মেডিকেল কলেজের ক্লাস শুরু হয় সেই লক্ষ্যে একাডেমিক কার্যক্রমের জন্য হাসপাতালের কিছু অংশ ছেড়ে দিয়েছি, এবং ছাত্রছাত্রীদের পৃথক পৃথক হোস্টেলের জন্য একটি ৮ ইউনিট বিশিষ্ট নার্সসেস কোয়াটার ভবন ও ৪ ইউনিট বিশিষ্ট ডক্টরস্ কোয়াটার ভবন খালি করে দিয়েছি। সব কিছুই যেন সুন্দর ভাবে চলে সেই লক্ষে নিরলস্ ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।