মাহবুবুজ্জামান সেতু,নওগাঁ: নওগাঁর মান্দায় কাগজের ঠোঙ্গা ও জুতার ব্যাগ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে শতাধিক পরিবার। কাগজ থেকে ঠোঙ্গা তৈরীকে তারা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। সারা বছরই তারা ঠোঙ্গা তৈরী করেন। আর কাগজের ঠোঙ্গা তৈরী করে দারিদ্রকে জয় করেছেন গৃহবধু মঞ্জুয়ারা বেগম। তিনি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের ছোট বেলালদহ গ্রামের বাসীন্দা। স্বামী সিদ্দিক রহমান দিনমজুর। দুই মেয়েসহ চার সদস্যের সংসার তাদের। গৃহবধু মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, টানাপোড়ন অভাবে সংসারে একসময় দু’বেলা পেটপুরে ভাত জুটত না। একজনের পরামর্শে কাগজের ঠোঙ্গা, মিষ্টির কার্টুন, শপিং ব্যাগ তৈরি শুরু করেন মঞ্জুয়ারা। গত চার বছর পূর্বে তিনি এ কাজ শুরু করেন। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শতকরা ২৫ টাকায় ঠোঙ্গা তৈরি করেন তারা। আর ঠোঙ্গা তৈরীর উপকরণ আঠা, কাগজ, ষ্ট্যাপলার পিন এগুলো মহাজন সরবরাহ করে থাকেন। মঞ্জুয়ারা বেগম ও তার মেয়ে ঠোঙ্গা তৈরীতে সহযোগীতা করে। আর স্বামী সিদ্দিক রহমান দিন মজুরের কাজ করেন।স্থানীয় মহাজন প্রকাশ চন্দ্র তৈরীকৃত ঠোঙ্গা সংগ্রহ করে উপজেলার বিভিন্ন কনফেকশনারি, হোটেল-রেস্তোরাঁয় ও মার্কেটের দোকানগুলোতে সরবরাহ করে থাকেন। স্বল্প দামে তৈরিকৃত ঠোঙ্গা, কার্টুন এবং জুতার ব্যাগের চাহিদা রয়েছে এলাকায়। ঠোঙ্গা তৈরী করে তাদের সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। শুধু মঞ্জুয়ারা বেগমই নয়! তার মতো এলাকার আনোয়ারা বেগম, নাছিমা বিবি, সুলতানা বিবি, ভেবড়া গ্রামের আতাউর রহমানর, শ্রীরামপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন, শহীদুল ইসলামসহ শতাধিক পরিবার এ কাগজের ঠোঙ্গা তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
ঠোঙ্গা তৈরীর কারিগর মঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, বড় মেয়ে নাসরিন এবারে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ছোট মেয়ে নাজনীন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা অবসর সময়ে ঠোঙ্গা, কার্টুন, শপিং ব্যাগ তৈরি করতে সাহায্য করেন।
আর এসব তৈরি করে সংসারে অনেকটা স্বচ্ছলতা এসেছে। তবে নিজের পুঁজি খাটিয়ে ঠোঙ্গা তৈরী করলে আরো বেশি দামে বিক্রি হতো। কিন্তু প্রয়োজনীয় টাকা না থাকায় নিজের পুঁজি খাটিয়ে কাজ করা সম্ভব হচ্ছেনা।
শ্রীরামপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন বলেন, স্বামী-স্ত্রী মিলে কাগজের ঠোঙ্গা তৈরী করি। আর এসব সতিহাটসহ আশপাশের বাজারে সরবরাহ করে থাকি। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে মোটামুটি সংসার ভালোই চলে।
মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউপি চেয়ারম্যান নওফেল আলী বলেন, মঞ্জুয়ারার পরিবার এক সময় খুব কষ্ট করেছে। তারা এখন কাগজের ঠোঙ্গা তৈরি করে কিছুটা স্বচ্ছলতা সাথে জীবিকা নির্বাহ করছে। তাদের মেয়েরা এখন ভাল করে পড়াশুনা করতে পারছে। ঠোঙ্গা তৈরীর সাথে যারা জড়িত উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগীতা প্রদান করা হলে তাদের জন্য অনেক সুবিধা হয়।