নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: নওগাঁ সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের মাঝে বিনামূল্যে ভিজিএফ চাল বিতরণে ওজনে কম দেয়া ও ফাড়িয়া ব্যাবসায়ীদের দিয়ে চাল কেনার অভিযোগ উঠেছে শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকাবাসি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। চেয়ারম্যান ময়নুল হক মুক্তার বিরুদ্ধে দ্রæত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
জানা যায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে শিকারপুর ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় ১ হাজার ৭শ’ জন হতদরিদ্রদের মাঝে বিনামূল্যে ভিজিএফ চাল বিতরণ করা হবে। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ২০ কেজি চালের পরিবর্তে প্রতিটি কার্ডধারীকে ১৭ থেকে ১৮ কেজি চাল দেয়া শুরু হয়। এ নিয়ে অনেক হতদরিদ্রদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া চেয়ারম্যান ময়নুল হক মুক্তা’র মদদে ইউনিয়ন পরিষদ চত্তরে চলছে চাল বেঁচা কেনার কাজ। এমন অভিযোগ ভিত্তিতে সরেজমিনে দেখা গেছে, গোয়ালী বাজারের ফাড়িয়া ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান, সায়ের ব্যাপারী, শিকারপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন, আলমসহ আরো কয়েক জন ব্যবসায়ী প্রকাশ্যেই ইউনিয়ন পরিষদ চত্তরেই অবাধে চালাচ্ছেন ভিজিএফ এর চাল কেনা বেঁচার কাজ।
শিকারপুর পশ্চিম পাড়ার এনামুল হক বলেন, সরকার বিনামূল্যে আমাদের মাঝে যে ভিজিএফ চাল দিচ্ছেন। সেখানে ২০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও চেয়ারম্যান মেম্বাররা ১৮ কেজি করে চাল দিচ্ছেন। আমরা সাধারন মানুষ এর কোন প্রতিবাদ করলে পরবর্তীতে আমাদের আর চাল দেয়া হবে না। আমাদের কার্ড বাতিল করে দেয়া হবে।
বিল-ভবানিপুরের মোজ্জামেল হক বলেন, ঈদের সময় আমাদের মতো হতদরিদ্রদের চাল কম দিচ্ছেন চেয়ারম্যান, আমি ২০ কেজি চালের পরিবর্তে ১৭ কেজি চাল পেয়েছি। আমাদের ওজনে কম দিয়ে পরে সে চাল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেন।
ফাড়িয়া ব্যাবসায়ী জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা প্রতি কার্ড চাল ৪৮০টাকা দরে কিনছি। ইউনিয়ন পরিষদে আমরা কম মূল্যে ভিজিএফ এর চাল কিনে থাকি এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান মেম্বাররা কিছু বলেন না।
তথ্য ও ছবি নেয়ার সময় চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানতে পেরে ইউপি সদস্য ও স্থানীয় লোকজন দিয়ে প্রায় দেড় ঘন্টাধরে তিন সাংবাদিককে তার রুমে আটকিয়ে রাখেন। এ সময় সাংবাদিকদের নিউজ না করার জন্য বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধুমকি প্রদান করেন। এ ছাড়াও ক্যামেরা থেকে সকল তথ্য মুছে ফেলার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এ পর্যায় থানায় সংবাদ দিলে থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করা হয়।
চেয়ারম্যান ময়নুল হক মুক্তা অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সাংবাদিকদের জনগণ চিনতে না পেরে তাদের সাথে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়। পরে তাদের চলে যেতে সহযোগিতা করা হয়েছে। অপর প্রশ্নে তিনি আরো বলেন, কোন প্রকার চাল কম দেয়া হয়নি। এ ছাড়াও সকাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদ ও তার আশেপাশে কালোবাজারে চাল কেনাবেচা নিষেধ করা হয়েছে। এরপরও কেউ চাল কেনা বেচা করলে তারাই দায়ী।
নওগাঁ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাই জানান, চেয়ারম্যান ময়নুল হক মুক্তা তার অফিসে তিন সাংবাদিককে আটক করে রাখার তথ্য জানতে পেরে তার কাছে ফোন করা হয়। এরপর ওই তিন সাংবাদিকদের ছেড়ে দিয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় এখন পর্যন্ত কোন পক্ষ অভিযোগ করেননি।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুশতানজিদা পারভিন বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।