নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় দাদন ব্যবসায়ীর প্রহারে মনোরঞ্জন মন্ডল (৫৫) নামে এক ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে সদর উপজেলার র্কীত্তিপুর ইউনিয়নের সালেবাজ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মনোরঞ্জন মন্ডল র্কীত্তিপুর ইউনিয়নের দাশকান্দি গ্রামের মৃত মনি মন্ডলের ছেলে এবং দাদন ব্যবসায়ী মকছেদ আলী অরুফে মন্ত্রী (৬৬) সালেবাজ গ্রামের মৃত তমেজ উদ্দিনের ছেলে।
নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মনোরঞ্জন মন্ডল গরীব ও অসহায়। সাংসারিক কাজে গত ৬/৭ মাস আগে পার্শ্ববর্তী গ্রামের দাদন ব্যবসায়ী মকছেদ আলীর কাছ থেকে উচ্চ সুদে নয় হাজার টাকা নেয়। এরমধ্যে চার হাজার পরিশোধ করেন। কিন্তু পাঁচ হাজার টাকা মনোরঞ্জন পরিশোধ করতে পারছিলনা। এনিয়ে বিভিন্ন সময় দাদন ব্যবসায়ী মকছেদ আলী তাকে চাপ সৃষ্টি করেন।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দাদন ব্যবসায়ী মকছেদ আলী তার ব্যাটারি চালিত চার্জার ভ্যান নিয়ে মনোরঞ্জন মন্ডলের বাড়িতে যান। এসময় মনোরঞ্জন মন্ডলের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলে মকছেদ আলী তাকে জোর পূর্বক জামার কলার ধরে চার্জার ভ্যানে উঠায়। পরে মকছেদ আলী তার গ্রামের বাড়ী সালেবাজে নিয়ে আসে। ঘন্টাখানেক পর মকছেদ আলীর স্ত্রী দাশকান্দি গ্রামে মনোরঞ্জন মন্ডলের বাড়িতে তড়িঘড়ি করে ছুটে যান। মনোরঞ্জন মন্ডলের স্ত্রী পুতুলকে তার স্বামীর অবস্থা খারাপ বলে সংবাদ দেয়। এরপর দুজনেই আবার সালেবাজ গ্রামে মকছেদ আলীর বাড়িতে আসেন।
পুতুল তার স্বামীর অবস্থা খারাপ দেখে ভ্যানে করে র্কীত্তিপুর বাজারে পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। পল্লী চিকিৎসক ডা: মোস্তাফিজুর রহমান রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ প্রদান করেন। সেখান থেকে মনোরঞ্জন মন্ডলকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নেয়ার পথেই তিনি মারা যান।
নিহত মনোরঞ্জন মন্ডলের স্ত্রী পুতুল অভিযোগ করে বলেন, নয় হাজার টাকার মধ্যে চার হাজার টাকা শোধ করা হয়েছে। বাকী টাকার জন্য দাদন ব্যবসায়ী মকছেদ আলী বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করে। কিছুদিনের মধ্যে স্বামী বাঁকী টাকা পরিশোধ করার জন্য সময় নিয়েছিল। কিন্তু তার আগেই দাদন ব্যবসায়ী মকছেদ আলী ধরে নিয়ে যায়। অসুস্থতার সংবাদ পাওয়ার পর তার বাড়িতে গিয়ে দেখি আমার স্বামী আঙিনায় গড়াগড়ি করছিল। সুস্থ মানুষকে ধরে নিয়ে আসার পর কিভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমার স্বামীকে তারা পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।
নিহত মনোরঞ্জন মন্ডলের প্রতিবেশী ফুপা নারায়ন বলেন, সকালে আমার সামনে থেকেই সুস্থ মানুষকে জোর পূবর্ক ধরে ভ্যানে করে নিয়ে যায় দাদন ব্যবসায়ী মকছেদ আলী। এরপর তার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কি হয়েছে তা আর বলতে পারব না।
নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাই বলেন, লাশের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে ধারনা করা হচ্ছে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ (স্ট্রোক) হয়ে মারা গেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। থানায় একটি হত্যা মামলা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ময়নাতদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।