আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ: দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রাচীণ নির্দশন পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার যা বর্তমানে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিলেও এখানে যাওযার একমাত্র ভিআইপি সড়কটি বর্তমানে গ্রামের মেঠোপথে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় এই সড়কটি বর্তমানে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে।
তবু ভ্রমনের আনন্দ নিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছে পর্যটকররা আর বাধ্য হয়েই চলাচল করছেন এই জনপদে বসবাসরত সাধারন মানুষরা। এই বেহালদশা রাস্তার কারণে দিন দিন এই ঐতিহ্যে পর্যটক সংখ্যা কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে সড়ক ও জনপদ বিভাগ আশ্বাস দিয়ে আসছে বহুদিন যাবত। তাই বর্তমানে খানাখন্দক আর মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে নওগাঁর বদলগাছী-পাহাড়পুর ভিআইপি একমাত্র সড়কটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নওগাঁ জেলা শহর থেকে জয়পুরহাট পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার জনগুরুত্বপ‚র্ণ সড়কটি বদলগাছীর নতুন ব্রিজ থেকে ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহার পাহাড়পুর হয়ে উপজেলার শেষ সীমানা দৈবরাইল বটতলি পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার সড়ক খানাখন্দকের সৃষ্টির হয়ে চলাচলের অনুপযোগী ও মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই সড়কটির দিয়ে জীবন ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রীবাহী বাসসহ শত শত যানবাহন চলাচল করছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই এই সড়ক দিয়ে চলাচলরত যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও প্রয়োজনের তুলনায় সড়কটি প্রশস্ত না করায় প্রতিনিয়তই চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রী সাধারন ও আগত পর্যটকদের।
ঐতিহাসিক বৌদ্ধবিহার পাহাড়পুর পরিদর্শনের জন্য দেশী-বিদেশী পর্যটক ও পিকনিকের বাস, মাইক্রোবাস, ভটভটি, ভ্যান গাড়িসহ অনেক যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের নামধারী পিকনিক স্পট দিনাজপুর জেলার স্বপ্নপুরী, রংপুর জেলার ভিন্ন জগৎ ও জয়পুরহাট জেলার বুলুপাড়া শিশু
উদ্যানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যান বাহন চলাচল করছে জীবন ঝুঁকি নিয়ে। যে কোন মুহুর্তেই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে আসা শিক্ষার্থী মোছা: নাছরিন আক্তার, সিমা আক্তার, রুহুল আমীনসহ আরো অনেকেই বলেন, শুধু দেশ নয় বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকসহ অনেকেরই এই পাহাড়াপুর ভ্রমন করার ইচ্ছে হয়। কিন্তুএ খানে আসার একমাত্র সড়কটির যে বেহাল অবস্থা শুধু এই রাস্তার কারণে অনেক পর্যটকরা এখানে আসবে না।। যারা এখানে একবার আসবে রাস্তার বেহাল দশার কারণে পরবর্তিতে তারা আর এখানে আসতে চাইবে না। তাই জরুরী ভিত্তিতে পর্যটকদের জন্য এই রাস্তাটি সংস্কার করা খুবই প্রয়োজন। তা না হলে এখানকার পর্যটক সংখ্যা দিন যাবে শুধুই কমবে বাড়বে না।
পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কিশোর বলেন, বদলগাছী-পাহাড়পুর ১৪ কিলোমিটার সড়কের যে অবস্থা হয়ে পড়েছে যানবাহন চলাচল করা তো দ‚রের কথা ছোট যানবাহন ভ্যান, চার্জার এমনকি পায়ে হাঁটাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাছাড়া গত মাসে পাহাড়পুর ইউপির দেবরাইল নামক স্থানে সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক উল্টে গিয়ে ট্রাক ড্রাইভারসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়। এছাড়া শুরুকালী নামক স্থানে খানাখন্দকের কারণে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে একজনের মৃত্যুসহ প্রায় ২৫ জন আহত হয়। প্রতিনিয়তই এরকম ছোট-খাটো দুর্ঘটনা ঘটছেই।
স্থানীয়রা বলেন, এর আগেও অনেক ট্রাক উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। জরুরীভাবে সড়কটির সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এছাড়া সড়কটির দু’ধারে মার্কেটগুলো উঁচু হওয়ায় সড়ক নিচু যার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি বেঁধে থাকায় ক্ষতি আরো বেশী হয়। যে স্থান থেকে সরকার প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করছে সেই স্থানটিতে যাওয়ার একমাত্র সড়কটি এখনো যে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে তা আমরা ভাবতেও পারি না।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের কাস্টোডিয়ান মো: ছাদেকুজ্জামান বলেন, পাহাড়পুরে আসার এই রাস্তাটির জন্য আমি সড়ক ও জনপদসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনেকবার বলেছি। অনেক সময় দ‚র-দুরান্ত থেকে আসা মাইক্রোবাস রাস্তার বড় বড় গর্তে আটকা পড়ে পড়তে হয় জটিলতার মধ্যে। ইতিপ‚র্বে এই রাস্তার বেহাল দশা উল্লে¬খ করে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ কিছু আধলা ইট দিয়ে বড় বড় গর্তগুলো দায়সারানো মেরামত করলেও কিছুদিন পর তা উঠে গিয়ে সাবেক রূপ ধারণ করেছে। জরুরী ভাবে এই রাস্তাটি সংস্কার করা কিংবা নতুন আধুনিক মান সম্মত ভাবে নির্মান না করলে ভবিষ্যতে পর্যটক সংখ্যা কমবে বলে তিনি আশংকা করছেন।
নওগাঁ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: হামিদুল হক বলেন, গত মে মাসে সড়কটির কাজের প্রকল্প একনেকে পাশ হয়েছে। এখন টেন্ডার হলেই বড় ঠিকাদার এসে কাজ শুরু করবে। বদলগাছী-পাহাড়পুর রাস্তার দু’পাশে ৪ ফিট করে বাড়িয়ে দৃশ্যমান রাস্তা তৈরি হবে বলে তিনি জানান।