প্রতিনিধি নওগাঁ: বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর শুরু হতে বাকি মাত্র ১৯ দিন। এরপরই 'দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ' হিসেবে পরিচিত ফুটবলের বিশ্ব লড়াই শুরু হবে সুদূর রাশিয়ায়। অবশ্য এর আগেই বিশ্বকাপের দেশ রাশিয়ার থেকে সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার দূরের দেশ বাংলাদেশ মেতেছে বিশ্বকাপ উৎসবে এর সাথে সঙ্গী হয়েছে উত্তেজনা।
ফুটবল বিশ্বকাপকে ঘিরে আয়োজক ও অংশগ্রহণকারী দেশের মতো বাংলাদেশেও ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা, উন্মাদনা আর আগ্রহ সীমাহীন। হাজার মাইল দূরের খেলাগুলো টিভিতে দেখার অপেক্ষায় দেশের কোটি মানুষ সাথে আত্রাইয়ের লাখো সমর্থক।
লাল-হলুদ কার্ড, ফাউল-পেনাল্টি, কর্নার-অফসাইড আর হার-জিত নিয়ে মাঠে যেমন উত্তেজনা থাকবে ঠিক যারা টিভিতে খেলা দেখবে তাদের মধ্যেও কম উত্তেজনা থাকবে না। প্রিয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে আনন্দিত হতে যাচ্ছে আত্রাইয়ের সমর্থক-ভক্তরা। আবার বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে সমর্থকদের কেউ কেউ মেতেছেন তর্ক যুদ্ধে।
ইতোমধ্যে নওগাঁর আত্রাই উপজেলা ও তার আশেপাশের এলাকার সমর্থকরা কিনতে শুরু করেছেন যার যার পছন্দের দেশের পতাকা। আবার কেউ কেউ এরই মধ্যে নিজেদের বাসাবাড়ির ছাদে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লাগিয়ে দিয়েছেন বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশে পতাকা। এদিকে নিজ দলকে সমর্থন জানানোর জন্য শেষ মুহূর্তে বব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ফুটবলপ্রেমীরা।
পতাকার সাথে সাথে অনেকেই কিনছেন তার পছন্দের দলের জার্সি। তেমনি একজন হৃদয় হাসান। তিনি আর্জেন্টাইন সমর্থক। প্রিয় দলের জার্সি কেনার সময় কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি বলেন, এইমাত্র আর্জেন্টিনা দলের পতাকা ১৫০ টাকা দিয়ে কিনলাম। এখন এসেছি প্রিয় এ দলের জার্সি কিনতে। তিনি বলেন, প্রিয় দলের জার্সি পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে হাজার টাকার মধ্যে। এজন্য যার যেমন বাজেট, তেমনই কিনতে পারছেন সকলে।
এদিকে ভবানীপুর বাজারে বাবার সাথে পতাকা কিনতে আসা ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া ব্রাজিলের ক্ষুদে সমর্থক আশরাফুল ইসলাম বলে, আমি ব্রাজিল দলের সাপোর্টার। আমি বাবার সাথে ব্রাজিলের সবচেয়ে সুন্দর পতাকাটা কিনতে এসেছি। সে তার মনের দৃঢ় বিশ্বাস থেকে বলে উঠে এবার আমার ব্রাজিলই চ্যাম্পিয়ন হবে।
এমন সমর্থকদের এ আনন্দকে আরো বাড়িয়ে তুলতে আত্রাই সদর বাজারের নির্ধারিত স্থান থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার অলিগলিতে পতাকা ফেরি করছেন বিক্রেতারা। হকাররা হাঁক দিয়ে বিক্রি করছেন বিশ্বকাপে অংশ গ্রহণকারী দল গুলোর পতাকা।
আত্রাই খেলাঘরের পতাকা বিক্রেতা মিলন হোসেন জানান, আমি অনেক বছর ধরেই এ ব্যবসা করে আসছি। সব মৌসুমেই আমি পতাকা বিক্রি করি। তবে ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে প্রত্যক বারই পতাকা বিক্রি বাড়ে। প্রতিদন ১০০ থেকে ১৫০ পিস পতাকা বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পতাকা তৈরির কাজও চলছে সমান তালে। ইদ্রিস আহম্মেদ রাজু নামের এক দর্জির দোকানী জানান, প্রতিদিন কত পতাকা বানাচ্ছি, তার সঠিক হিসাব দেয়া সম্ভব নয়। একদিকে বানাচ্ছি। আর অন্য দিকে বিক্রি করছি। যেমন বিক্রি হচ্ছে শহরে তার থেকেও বেশি যাচ্ছে গ্রামাঞ্চলে।
অন্য এক ব্যবসায়ী খন্দকার খোকন বলেন, এখন দোকানে বিক্রির জন্য ছোট পতাকা বানাতে ব্যস্ত আমরা। তবে গ্রাহকদের অর্ডার অনুযায়ী বড় মাপের পতাকাও বিক্রি করছি।
তিনি আরো জানান, ভালই ব্যবসা হচ্ছে। প্রতিদিনই দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পতাকা বিক্রি করতে পারছি।
এছাড়াও ইতিমধ্যে প্রিয় ফুটবল দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে পথে বেড়োতে শুরু করেছেন অসংখ্য সমর্থক। প্রিয় ফুটবল দলের সমর্থন নিয়ে ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে প্রীতি-বিভক্তি। চলছে খেলা উপভোগের জন্য রাত জেগে অপেক্ষা আর বিশ্লেষণ।
এদিকে বিশ্বকাপ ফুটবলের কারণে ওয়েব দুনিয়াতেও বেড়েছে বাড়তি উত্তেজনা। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকরা তৈরি করেছেন অসংখ্য গ্রæপ আর পেজ। পেজগুলোতে দেয়া হচ্ছে নিয়মিত আপডেটও। জানিয়ে দেয়া হচ্ছে দলগুলোর নানা ধরনের খবরা খবর। পোস্ট করা হচ্ছে ছবি।
শুধু পতাকা ও জার্সির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই নগরীর ফুটবলপ্রেমীরা। ফুটবল খেলা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরাসরি উপভোগ করার জন্য অনেকে টেলিভিশন ক্রয় ও মেরামত করার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ফুটবল বিশ্বকাপে নিজের দেশ না খেললেও প্রিয় দলকে সমর্থনে কোন সমর্থই রাখছেন না কমতি।