হাসেম আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: বেশ কয়েক বছর ধরে ধান, গমসহ অন্যান্য ফসলে বার বার লোকসান গুনছেন ঠাকুরগাঁওয়ে চাষিরা। এ কারণে সেসব ফসল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এখন আম বাগান করার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। আম্রপালি আমের চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় কৃষকেরা লিচু বাগান কেটেও আম বাগান স্থাপন করছেন।
জেলায় ৫ বছরে আবাদি জমি কমে গিয়ে আম বাগান হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ঠাকুরগাঁও জেলার মাটি তুলনামূলক উচু। এ মাটিতে ধান, গম, পাট ও আলুসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করে আসছেন এ জেলার প্রান্তিক চাষিরা। কিন্তু ওইসব ফসল উৎপাদন করে নায্যমূল্য না পেয়ে চাষিরা প্রতি বছর লোকসান গুনছেন।
এ কারণে চাষিরা খাদ্যশস্য উৎপাদন থেকে ক্রমেই সরে আসছেন। সেক্ষেত্রে চাষিরা জমিতে আম বাগান স্থাপন শুরু করেছে। ফল বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা লাভবান হওয়ায় চাষিরা দিনদিন আমের বাগান স্থাপনে ঝুঁকে পড়ছেন। আমের বাগান হতে বিষমুক্ত আম ও সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন ফসল চাষ করে কৃষকেরা দুদিক দিয়ে লাভবান হয়ে আসছেন।
এ জেলায় সুর্যাপুরী, আম্রপালি, গোপালভাগ, হিমসাগর, ফজলী, হাড়িভাঙ্গা, মল্লিকা, খিরসাপাতি, আশ্বিনা, বান্দিগড়, লেংড়া ও মিশ্রিভোগ আম উৎপন্ন হয়। তবে সবার শেষে বাজারে আসে আম্রপালি জাতের আমটি। যাদের নিজস্ব জমি-জমা নেই, তারাও অন্যের জমি ১০/১২ বছরের জন্য লিজ নিয়ে সেখানে আম্রপালি জাতের রুপালি আমের চাষ করে আসছেন।
পীরগঞ্জ উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মনোয়ার হোসেন জানান, তিনি ৩৫ একর জমিতে আম্রপালি জাতের আমবাগান স্থাপন করেছেন। একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক নামে অপর একজন চাষি জানান, এক বিঘা জমিতে আম্রপালি জাতের গাছ লাগানো যায় কমপক্ষে ১৬০টি।
৩ বছরের মাথায় প্রতিটি গাছ থেকে এক ক্যারেট (২০ কেজি) আম পাওয়া যায়। প্রতি কেজি ৫০ টাকা হারে এক ক্যারেটের দাম ১ হাজার টাকা। সে হিসেবে একবিঘা জমিতে প্রাপ্ত আম বিক্রি হয় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর প্রথম বছর যে আম পাওয়া যায় পরের বছর পাওয়া যায় তার দ্বিগুণ। এভাবে প্রতি বছর আম ও লাভের পরিমাণ বাড়তে থাকে ৯ বছর পর্যন্ত। পরবর্তীতে টপ অরকিং করা হলে আমের ফলন আবারও বাড়ানো সম্ভব।
শাহ আলম নামে একজন বাগান মালিক বলেন, আম্রপালির আম গাছ বেশি বড় না হওয়ায় গাছের মাঝামাঝি ফাঁকা জায়গায় ধান গম পাট, আলু, মরিচসহ বিভিন্ন ফসল সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। ফল মৌসুমে নিজেরাও বিষমুক্ত মিষ্টি আম ভোগ করতে পারি। এমনকি নিকট আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবকে বাগানের আম দিতে পারলে তারা বেশ খুশি হয়।
আব্দুর রাজ্জাক নামে আরেক চাষি বলেন, আগে তার বেশ কয়েকটি লিচুর বাগান ছিল। কিন্তু লিচুতে মাঝে মাঝে পোকা দেখা গেলে দামের বিপর্যয় ঘটে বলে লোকসান দিতে হয়। তাই আমি আমার লিচুর বাগান কেটে আমের বাগান করেছি।
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, সারা জেলার মধ্যে একমাত্র পীরগঞ্জ উপজেলায় আম বাগান করার নিবর বিপ্লব শুরু হয়েছে। ওই উপজেলায় ৫ বছর পূর্বে আমের বাগান ছিল ৫৫০ হেক্টর। বর্তমানে আম বাগানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৮০ হেক্টর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. আফতাব হোসেন জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার ৫ বছর পূর্বে যে আম বাগান ছিল বর্তমানে হয়েছে দ্বিগুণ। বর্তমানে জেলায় ১ হাজার ৫১৪টি আমবাগান রয়েছে যার জমির পরিমাণ ৮ হাজার ২৯ হেক্টর।
তিনি আরো জানান, এ জেলার বিখ্যাত আম সুর্যাপুরী। কিন্তু আম্রপালি জাতের আমটি যখন বাজারে উঠে তখন দেশের বেশিরভাগ এলাকায় আম থাকে না। তাই এখানকার আম্রপালি জাতের আম বিক্রি করে বেশি লাভবান হতে পারে।