আব্দুর রউফ রিপন,নওগাঁ : দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন এ সংবাদ প্রকাশের পর নওগাঁর সেই আলোচিত যুবলীগ নেতা পেল একটি হুইল চেয়ার। সংবাদটি পড়ার পর ঢাকা শহরে বসবাসরত (মানবতায় আমরা) অ-রাজনৈতিক নওগাঁর সংগঠনটির সদস্য আসিফ আকবর রুদ্র একটি হুইল চেয়ার প্রদান করেন।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের দক্ষিন লক্ষীপুর গ্রামের নগেন সরকারের একমাত্র ছেলে শ্রী রামকৃষ্ণ সরকার (৩২)। ভীমপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর মহাদেবপুর উপজেলা সদরে দলীয় একটি সভায় যোগদান শেষে মোটর সাইকেল যোগে বাড়ি ফিছিলেন। পথিমধ্যে সরস্বতীপুর বাজার এলাকায় একটি মাইক্রোবাস মোটর সাইকেলে ধাক্কা দিলে ছিটকে পড়ে যান রামকৃষ্ণ সরকার। গুরুতর জখম হওয়ায় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করালে চিকিৎসকরা ওই দিনই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এসময় পরিক্ষা-নিরিক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান, রামকৃষ্ণ সরকারে মেরুদন্ড ভেঙ্গে গেছে। উন্নত চিকিৎসা দেশের বাইরে নিয়ে করানোর জন্য পরিবারের লোকজনকে পরামর্শ দেন চিকিৎসক।
রামকৃষ্ণ সরকারের বৃদ্ধ পিতা নগেন সরকার (৭০) ও বৃদ্ধা মা চম্পারানী সরকার (৬১) জানান, চিকিৎসকরা পরামর্শ দেয়ার পরই ছেলেকে চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা চলার মাঝ পথেই সম্পদ বলতে জায়গা-জমি যে টুকু ছিল মোট সারে ৭ বিঘা আবাদী জমি তা সবই বিক্রি করে চিকিৎসার মাঝ পথেই অর্থ শেষ হওয়ায় চিকিৎসা বন্ধ করে ছেলেকে দেশে বাড়িতে ফিরিয়ে এনে বিনা চিকিৎসায় রাখা হয়েছে।
নগেন সরকার বলেন, আমার একমাত্র ছেলেটি আজ প্রায় ৫ বছর যাবত হুইল চেয়ারে বসেই মানবেতর জীবন-যাপন করছে। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে জমি সব বিক্রি করেছি। আমরা বাবা ও মা ছেলে, ছেলের বউ ও একমাত্র নাতী কে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন-যাপন করছি।
রামষ্ণৃষ্ণ সরকার (৩২) বলেন, আমি যুবলীগ সভাপতি থাকাকালিন দলীয় পোগ্রাম থেকে ফেরার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় পুঙ্গুত্ব বরন করি। আমার চিকিৎসা করাতে ইতিমধ্যেই আমার বৃদ্ধ বাবা-মা আমাদের সব সম্পদ বলতে যা ছিল সবই বিক্রি করেছেন। আমার স্ত্রী অঞ্জনা রানী (২৭) ও আমার একমাত্র ৭ বছরের ছেলে নিত্যনন্দ সরকার (৮) সহ আমার বৃদ্ধ বাবা ও মাকে নিয়ে মানবেতরভাবে চলছে আমাদের সংসারটি জানিয়ে, তিনি আরো বলেন, আপনারা আমাকে চেয়ার ও টাকা দিয়ে উপকার করলেন তাতে আমি খুবই খুশি বলেই কাঁদতে কাঁদতে বলেন, দাদারা পারলে আমার চিকিৎসার ব্যবস্থাটা করেন, আমি বাঁচতে চাই আমার ছেলে ও স্ত্রীর জন্য আমাকে বাচান বলেও আকুতি করেন যুবলীগ নেতা রামকৃষ্ণ।
রামকৃষ্ণ সরকার আরো বলেন, আমি সহ আমার পরিবারের দূর্বীসহ জীবন-যাপনের কথা উল্লেখ করে ইউনিয়ন ও থানা আওয়ামীলীগের নেতাদের সুপারিশ সহ এলাকার মাননীয় সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম এর মাধ্যমে সাহায্যের জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন পত্র পাঠিয়েছি।
রামকৃষ্ণ সরকারের স্ত্রী অঞ্জনা রানী বলেন, আমরা পরিবারের সকলেই খেয়ে না খেয়ে দূর্বীসহ জীবন-যাপন করছি। আজ আপনারা চেয়ার ও টাকা দিয়ে যে উপকার করলেন তা আমরা ভুলব না জানিয়ে, স্বামীর চিকিৎসার জন্য আকুতি-মিনতি করতে গিয়ে আবেগ আর কষ্টে এসময় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন অঞ্জনা রানী।