রংপুরে টেন্ডার ছাড়াই পিডিবির শত কোটি টাকার মালামাল বিক্রি
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) রংপুর ডিভিশন-৩ অফিস থেকে কোন প্রকার টেন্ডার ছাড়াই প্রায় একশত কোটি টাকার বৈদ্যুতিক মালামাল মাত্র ১৭ কোটি টাকায় একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে পিডিবির রংপুর ডিভিশনের প্রধান প্রকৌশলী জানিয়েছেন, টেন্ডার করা না হলেও সাতজনকে একটি কমিটি করে এসব মালামাল বিক্রি করা হয়েছে। একইভাবে পিডিবির রংপুর ডিভিশন-১ থেকে ১৮ লাখ টাকায় এবং ডিভিশন-২ থেকে ১৯ লাখ টাকার মালামাল বিক্রি করা হয়েছে। এসব মালামালের অনুমানিক মূল্য শত কোটি টাকার বেশি হবে বলে জানা গেছে।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনে ৩০-৩৫টি ট্রান্সফরমারসহ বেশ কিছু মূল্যবান বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও মালামাল দিনে এবং রাতে ট্রাকে করে অন্যত্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এসব মালামালের আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা হবে বলে দাবি করছেন প্রতিষ্ঠানটির সচেতন কর্মচারীরা।
সোমবার দিনভর ট্রাক লোড করে কোন ধরনের পরিমাপ ছাড়াই ট্রান্সফরমারসহ বেশি কিছু মালামাল নিয়ে যায়। কোন রকম টেন্ডার ছাড়াই এসব মালামাল পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে। পিডিবি ডিভিশন-৩ থেকে যে সব মালামাল বিক্রি করা হয়েছে এসবের মুল্য আনুমানিক একশত কোটি টাকা হবে। অথচ মালামাল টেন্ডার ছাড়াই মাত্র ১৬ লাখ ৮২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
পিডিবি সুত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন থেকে পিডিবিতে এমন অনিয়ম চলেই আসছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র এসব দুর্নীতি-অনিয়ম করছে। রাতের আঁধারে এখান থেকে অনেক সময় মালামালবাহি ট্রাক বের হয়। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলে দুর্নীতি ও অনিয়মের কিছুটা হলেও প্রমাণ মিলবে। এখন টেন্ডার ছাড়া মালামাল বিক্রির বিষয়টি সবাই জানতে পারায় অফিসের বড় অফিসাররা নিজেদের দোষ আড়াল করার চেষ্টা করছেন।
মালামালবাহী একজন শ্রমিক ও ট্রাক চালক বলেন, আমরা তো জানি এসব মালামাল তিন কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এখান মালামাল লোড করে নিয়ে অন্যত্রে গিয়ে ওজন পরিমাপ করে।
এব্যাপারে পিডিপির রংপুর বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন সরকার জানান, মালামাল বিক্রির জন্য কোন ধরনের টেন্ডার দেয়া হয়নি। তবে উপরের নির্দেশে কোটেশন দিয়ে এসব বিক্রি করা হয়েছে। হেড অফিস থেকে সেভাবেই নির্দেশ দেয়া আছে। সেই নির্দেশ অনুযায়ী সেনা কল্যাণ সংস্থাকে মালামালগুলো দেয়া হয়েছে। এজন্য সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার, অডিট বিভাগের ডিজিএম, একাউন্ট অফিসের ডিডি, চীফ অফিসের ম্যানেজার, এমডি অফিসের সহকারী ম্যানেজার, স্টোর ম্যানেজারসহ ৭ সদস্যের একটি কমিটিও করে দেয়া হয়েছে। তারাই এসব মালামাল বিক্রি করেছে। তবে তিনি এ বিষয়ে কোন ধরণের লিখিত অফিস অর্ডার দেখাতে পারেননি তিনি।
এ ব্যপারে ক্রয়কারী ঠিকাদার মিজানুর রহমান বলেন, সেনা কল্যাণ সংস্থার পক্ষে আমি মালামালগুলো কেরিং করে নিয়ে যাচ্ছি। কি প্রক্রিয়ায় মালামালগুলো বিক্রি করা হয়েছে তা আমার জানা নেই। এব্যাপারে পিডিবির ইঞ্জিনিয়াররা ভালো বলতে পারবেন।পিডিবির রংপুর ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম এবং নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম মন্ডল জানান, মালামাল বিক্রির বিষয়টি আমি জানি না। কে বা কারা এসব মালামাল কত দামে বিক্রি করেছে, তা আমাদের জানা নেই।-সূত্র নয়া দিগন্ত
19 Views