ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে হলে এখনই চাবলি রক্ষা জরুরী
নিউজ ডেস্ক: ইলিশ প্রজনন মৌসুম সম্পন্ন। ইলিশ ধরা শুরু, বাজারে ইলিশ পাওয়া যাবে। বহু জেলে কারাগারে।হয়তোবা অজ্ঞতা বা লোভের কারণে প্রজনন মৌসুমে লাখ লাখ টাকার জাল পুড়ছে। কি পরিমান নৌকা-ট্রলার হাতছাড়া হয়েছে এগুলোর সরকারি হিসাব থাকাও উচিত। জরিপ করা উচিত কি পরিমান জেলে এখনও মৎস্য আইন, নীতিমালা, মৌসুম সম্পর্কে অজ্ঞ। তবে ইলিশ ধরা মৌসুম শুরু হলেও কিছু জেলে পল্লীতে আপনজন কারাগারে থাকায় মাতম চলছে। ইলিশ সম্পদ রক্ষা করতে এখনই চাবলি পোনা রক্ষায় মৎস্য অধিদপ্তরকে আন্তরিক হওয়া জরুরী।
দেখা উচিত, কতভাগ ইলিশের পেটে এখনও ডিম আছে। ইলিশ সম্পদ রক্ষায় পিছিয়ে ডিমছাড়া মাছ গুলোকে রক্ষার প্রয়োজন আছে কিনা? মৎস্য অধিদপ্তর বলতে পারার কথা যে পরিমান ইলিশ ডিম ছেড়েছে তাতে দেশে ইলিশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম কিনা! ইলিশের পোনা চাবলি রক্ষায় করণীয় বিষয় নিয়ে কাজ করা উচিত। চাবলি নামে যে পোনা হাট-বাজারে, গ্রামে গঞ্জে বিক্রি হয় সেগুলোই ইলিশের পোনা। এটি রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। দেশীয় চিংড়িগুড়া, পোমার কড়া, বাইলা মাছ, টেংরা, পুটি, ভাটা মাছও কিন্তু হারাতে বসেছে। এগুলো রক্ষায় সরকারের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভুমিকা থাকা উচিত।
ইলিশ সম্পদ রক্ষার সাথে জড়িত জেলেরা সরকারি সহায়তা পেয়েও যারা মৎস্য আইন অমান্য করছে তাদের সরকারি অফিসে ঢেকে এনে তিরস্কার জানিয়ে একই সাথে সরকারি অনুদান বন্ধ করে ঐ জেলেদের কালো তালিকায় রাখা উচিত।
মৎস্য সংরক্ষণ কাজের সাথে জড়িত সরকারি কর্মকর্তারা নিজেরাই জলজ এ সম্পদটি রক্ষা করতে পারেন। শুধু প্রয়োজন সততা, আন্তরিকতা ও সাহসিকতা। তবে এদের অনেকে লোভাতৃর লোকজন দ্বারা চরিত্রগত ক্রুটি সংক্রমণে অনেকেই আক্রান্ত।
দেশবাসী অনেকেই জানেন, কিছুদিন পরেই ইলিশের পোনা 'চাবলি' বিক্রি হবে ২০ টাকায় এক পলিথিন। এবছর হয়তোবা ২০০ টাকা হবে। তবে এই মূহুর্তে ইলিশ রক্ষার দ্বিতীয় ধাপে সরকারী উদ্যোগে চাবলি বাঁচাও কর্মসূচী হাতে নেওয়া দরকার। কারণ, এই চাবলিই ইলিশের বংশগত পোনা।
এদিকে ২২ দিন গর্ভবতী ইলিশ রক্ষায় ফিবছর নদীতে যে হারে স্পীডবোর্ড, ট্রলার কিংবা নৌকাবাইচ চলে যা রীতিমতো হাস্যকর এবং পেটভরা ইলিশের কাছে আতঙ্কজনক। কেননা, ঐ মূহুর্তে ইলিশেরা পানির উপরে ভাসে এবং ডিম ছাড়ে। ঠিক এই মূহুর্তটি অসাদু জেলে, নদীপাড়ের কিছু টাউট লোকজন ও মৎস্য কাজের সাথে জড়িত অফিসিয়াল কর্মচারীদের ঈশারা-ঈঙ্গিতেই পুরো মাসব্যাপী ইলিশনিধন চলে।
তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে মাত্র ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা প্রিরিয়ড শেষ করে ২ নভেম্বর থেকে মাছ ধরা চালু হয়েছে। তবে এখনও অধিকাংশ ইলিশের পেটে ডিম রয়েছে। দেশের অধিকাংশ মানুষ ইলিশ খেতে পারেনা তারাও এইদেশী মানুষ। ভিনদেশী মানুষের প্লেটে ইলিশ তুলে দেওযার আগে দেশী মানুষের ইলিশ খাওয়া নিশ্চিত করা উচিত।
সরকারি ভাবে মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইলিশ রক্ষা কর্মসূচী ২০২৩ প্রকল্পটি চলমান। তবে দেখার অপেক্ষা এবছর চাবলির কেজি কত বিক্রি হয়, কারা ক্রেতা, কারা প্রশয়কারী। এ বিষয়গুলো মৎস্যচাষী, জেলে এবং জেলে শ্রমিক এবং গণমান্যদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।
মৎস্য অভিযানে সরকারি-বেসরকারি লোকজন অফিসিয়াল কামকাজ ফেলে যে হারে নদীতে দৌড়াদৌড়ি করেছে এতে রাষ্ট্রীয় কাজের ব্যাঘাত সৃষ্টিমাত্র। ইলিশ রক্ষায় এখন পলিথিন হটাও অভিযান চালাতে পারে সরকার। বাজার থেকে পলিথিন বন্ধ করা উচিত। বেসরকারি সংগঠণ সমুহ জনসচেতনতা সৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে পারেন। ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ, এটা বাংলাদেশী মানুষের সম্পদ, কিন্তু রক্ষার দায়িত্ব সকলের।
দেশের অধিকাংশ বেসরকারি সংগঠণ সমুহ, এনজিওর মৎস্য চাষ, মৎস্য চাষী প্রশিক্ষণ, সভা সেমিনার কাগজে কলমে গঠনতন্ত্রে কাজ আছে। কিন্তু ইলিশ সম্পদ রক্ষায় তাদের মূলত: কোন কাজ দেখা যায়না। দেশী-বিদেশি দান,অনুদান,সহযোগীতায় সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রকল্প গঠণ করে এরা। বণ্যা-প্রাকৃতিক দূর্যোগে এরা অনুদান আনে।
পত্রপত্রিকা, অনলাইন ঘাটলে জানাযাবে ইলিশ রক্ষা করতে গিয়ে কতজন সরকারি মানুষ জেলেদের দ্বারা বেইজ্জতি হয়েছেন, কতজনের গায়ে কাদাছোড়াছুড়ি হয়েছে, লাঠিসোটা পিটাপিটির শিকার কতজন মানুষ, পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে অপদস্থ হয়েছেন কতজন জেলে এবং দণ্ডপালন করছেন কতজন। এগুলো নিরুপন করা গেলে ইলিশ রক্ষা করা যেতে পারে। তবে পলিসি মেকিং ইজ ইম্পরট্যান্ট। যতক্ষণ পলিসি মেকিং না হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ না করা হবে ততক্ষণ বাঙালীর পেটে ইলিশ ঢুকতোনা।
ইলিশের এই অভিযানে মৎস্য অধিদপ্তরের কাজকে সহায়তা করতে ওসি ক্যাটাগরির পুলিশসহ এসিল্যান্ডকেও পানিতে নামানো হয়েছে। তবে ইতিহাস আছে ইলিশ রক্ষায় নেমে নদী থেকে সম্মান বাঁচিয়ে কুলে ওঠতে পারেননি অনেকেই। ডিসি অফিসের ম্যাজিষ্ট্রেটসহ সরকারের কৃষি অফিসার, শিক্ষা অফিসার জেলেদের কাছে ডাইলভাত। অথচ, ঐসব সরকারি অফিসারদের কলমেই তাদের সরকারি সহায়তা যেমন: চাল, আটা, নৌকা,ট্রলার, জাল, গরু,ছাগল, সেলাই মেশিন বিতরণ হয় বিনামূল্যে। এতকিছু দিয়েও অবৈধ ট্রলার নৌকায় অল্প টাকা পুঁজিতে জাল কিনে সরকারের নদীতে নেমে আইন অমান্য করে বারবার। এরা ধবংস করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এরা আইন অমান্যকারীও বটে। যদি এককথায় ধরে নেই এরা অশিক্ষিত, আইন জানেনা। সেটাও ভুল হবেনা; তবে এদরেকে সচেতনতায় কাজ করা দরকার,প্রকল্প বাড়ানো দরকার।
যদি আমরা মূলকথায় আসি, এককালের মাছে-ভাতে বাঙালী আজ মাছ সংকটে বাজারে বিভিন্ন দ্রব্যাদির দর বেড়েছে। দেশীয় মাছ সংকটে চাপ বাড়ছে মুরগি,ডিম ও আলুর ওপর। বিলুপ্ত প্রায় দেশীয় মাছ রক্ষায় কোন সরকারি কর্মসূচী তেমন চোখে পড়েনা। অথচ হালে পানি ওঠার সাথে সাথেই এক শ্রেণিহীন মানুষ মাছের সাথে দা,বটি, লেজা,কোচ , লাইট নিয়ে রাতে যুদ্ধে নামে। এতে প্রতি রাতে গর্ভবতী দেশীমাছ কুপিয়ে আহত করে। ঐ সময় যে পরিমান মাছ আহত করা হয় এরপরে ১০ ভাগ মাছ এলাকার জমিতে, নদনদী, ডোবানালা,পুকুরে থাকেনা। মৎস্য অধিদপ্তর ইলিশ রক্ষায় শুধু প্রকল্প কেনো প্রকল্প হতে পারে পুটি মাছ রক্ষায়ও।
কেননা; পুটি মাছের ভোক্তা হারও চরম। আত্মীয়তা রক্ষায় ইলিশের মাধ্যমে কেনো; বাংলাদেশি মাছের বাজার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সঠিক ভাবে মৎস্য সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হলে দেশের মানুষের মাছের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
এলাকাভিত্তিক মৎস্য ক্লাব গঠনের মধ্য দিয়ে মৎস্য রক্ষণাবেক্ষণ কাজে সরকারের পাশে সহায়তা দিতে পারে। জনমত তৈরী, সভা-সেমিনার, নদীপাড়ে বৈঠকী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জারি-সারি,বাওয়ালী, কাওয়ালী, আঞ্চলিক গানের আসরের মধ্য দিয়ে জেলেদের ইলিশ রক্ষায় সচেতন করা জরুরী।
জেলেদের চেয়ে কৃষকরাই বারবার অবহেলিত, ধরুণ এক বিঘা জমির একজন কৃষকের গরু,লাঙ্গল, জোয়াল,মই,খোন্তা, কোদাল ইত্যাদি উপকরণ লাগে। ১৫-২০ লাখ টাকার জমি, দেড় থেকে দুই লাখ টাকার গরুর পরে লাঙ্গল জোয়াল লাগবেই, সাথে কৃষিবিজ। কিন্তু একজন জেলের বাড়ির পাশে নদনদী থাকলেই কাম সারা। সরকারের খরচে নৌকা,ট্রলার, জাল কেনা টাকা, আরও কত অনুদান। জমা চালান ছাড়া নদীতে নামলেই ট্রলার ভড়া মাছ। কুলে ভেড়ালেই লাখো টাকার গুনতি।
শেষকথা: ইলিশ সংরক্ষনে অভিযানের নামে লাখেলাখে টাকা খরচের দরকার নেই। শুধু প্রয়োজন সরকারের মৎস্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি মাত্র ঘোষণার। যেই ঘোষণার মধ্য দিয়ে জেলেরা নৌকা-জাল নিয়ে নদী থেকে উঠে যেতে বাধ্য এবং স্বস্ব উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার নিকট নৌকা-জাল জমা দিয়ে সরকারি অনুদানের স্লিপ সংগ্রহ করবেন। স্লিপ ছাড়া কোন অনুদান মিলবেনা, এই কর্মসূচী চালু করলে আর কোনো জেলে নদীতে নামবেনা। আইন মানতে বাধ্য হবেন।
লেখক: আহমেদ আবু জাফর, চেয়ারম্যান, ট্রাস্টি বোর্ড ও সভাপতি, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম-বিএমএসএফ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি।