Articles by "চাঁদপুর"
92 অন্যান্য 51 অর্থনীতি 24 আইন ও আদালত 76 আন্তর্জাতিক 588 এক ঝলক 3 কক্সবাজার 1 কবিতা 22 কিশোরগঞ্জ 4 কুড়িগ্রাম 6 কুমিল্লা 1 কুষ্টিয়া 3 কৃষি 107 কৃষি ও প্রকৃতি 10 ক্রিকেট 1 খাগড়াছড়ি 73 খেলাধুলা 45 গণমাধ্যম 12 গাইবান্ধা 1 গাজীপুর 17 চট্টগ্রাম 5 চাঁদপুর 5 চাঁপাইনবাবগঞ্জ 2 চুয়াডাঙ্গা 14 জয়পুরহাট 1 জাতীয় 3 জামালপুর 1 জোকস 6 ঝনিাইদহ 246 ঝালকাঠি 12 ঝিনাইদহ 4 টাঙ্গাইল 44 ঠাকুরগাঁও 39 ঢাকা 1 থী 3 দিনাজপুর 4784 দেশজুড়ে 42 ধর্ম 3414 নওগাঁ 14 নাটোর 2 নারায়ণগঞ্জ 1 নিহত ২ 1 নীলফামারীর 2 নেত্রকোনা 1 নোয়াখালী 3 পঞ্চগড় 4 পিরোজপু 2 প্রকৃতি 2782 প্রথম পাতা 23 প্রবাস 1 ফরিদপুর 17 ফিচার 8 ফুটবল 1 ফেনী 94 বগুড়া 2 বলিউড 58 বাগমারা 82 বিএমএসএফ 31 বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি 53 বিনোদন 51 বেনাপোল 2 ব্রাক্ষণবাড়িয়া 1 ব্রাহ্মণবাড়িয়া 51 ভিডিও 18 ভোলা 8 ভ্রমণ 59 ময়মুনসিংহ 1 মাগুরা 1 মাদারীপু 2 মাদারীপুর 1 মানিকগঞ্জ 1 মেহেরপুর 495 যশোর 5 রংপুর 103 রাজনীতি 3 রাজবাড়ী 95 রাজশাহী 3 লক্ষ্মীপুর 24 লাইফস্টাইল 2 লালমনিরহা 41 শিক্ষা 1 শ্রীপুর 891 সকল জেলা 2 সাতক্ষীরা 9 সিরাজগঞ্জ 3 সিলেট 63 সুনামগঞ্জ 31 স্বাস্থ্য 4 হবিগঞ্জ 1 হলিউড 10 bmsf

চাঁদপুর রক্ষার দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন

চাঁদপুরকে রক্ষার জন্য অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধসহ কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা সাংবাদিক ফোরাম। রোববার (২৬ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে মানববন্ধন করে এ দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের নেতারা।

সংগঠনের সভাপতি মিজান মালিক বলেন, চাঁদপুর আমাদের প্রাণের শহর। আমাদের শেকড় চাঁদপুরে। সেই শহর অব্যাহত নদীভাঙনে আজ বিলীনের পথে। এটি আমাদের পীড়িত করে। নৈতিক দায়িত্ব থেকে আমরা চাঁদপুর রক্ষার দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। আশা করছি, চাঁদপুরকে নদীভাঙন থেকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে সরকার।

সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাগোনিউজ২৪.কম-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার বলেন, চাঁদপুরকে কার্যকরভাবে রক্ষা করতে হলে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। চাঁদপুরকে রক্ষার জন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার পলাশ বলেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চাঁদপুরকে রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। ওই সময়ের পত্রপত্রিকায় এ খবর সাক্ষী হয়ে রয়েছে। সাংবাদিকদের কাজ আন্দোলন করা নয়। কিন্তু বাধ্য হয়েই নিজ জেলাকে রক্ষার জন্য আমরা রাস্তায় নেমেছি।

সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজহারুল হক মান্না বলেন, চাঁদপুরের অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য রয়েছে। চাঁদপুরকে রক্ষা করতে না পারলে আমরা সেসব ঐতিহ্য হারাব। দ্রুত চাঁদপুরকে রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ সময় সংগঠনের বেশকিছু সদস্য এবং ঢাকায় বসবাসরত চাঁদপুরের বাসিন্দারা উপস্থিত ছিলেন। চাঁদপুরকে রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ দ্রুত সময়ের মধ্যে না নিলে আরও কঠিন আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন বলে ঘোষণা দেন সংগঠনের সদস্যরা।

 
ছবিতে ইউএনও মোঃ শাহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখছেন। পাশে রয়েছেন পুলিশ থানার অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার আইচ ও গ্রাম আদালতের জেলা কর্মকর্তা নিকোলাস বিশ্বাস সহ অন্যানরা।

বিশেষ প্রতিবেদক: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ মঙ্গলবার চাঁদপুরের মতলব-দক্ষিণ উপজেলার সম্মেলন কক্ষে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের মাসিক কর্মী-সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মতলব-দক্ষিণ উপজেলার ইউএনও মোঃ শাহিদুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন অত্র উপজেলার পুলিশ থানার অফিসার্ ইনচার্জ স্বপন কুমার আইচ। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রকল্পের উপজেলা সমন্বয়কারী মোঃ সগীর আহম্মেদ সরকার। সভায় আরো অংশগ্রহণ করেন ডিস্ট্রক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস এবং ব্লাষ্টের জেলা সমন্বয়কারী মোঃ আমিনুর রহমান। সভায় মতলব-দক্ষিণ, মতলব-উত্তর এবং কচুয়া উপজেলার গ্রাম আদালত সহকারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

সভার প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ শাহিদুল ইসলাম বলেন, গ্রাম আদালত সক্রিয়করণের মাধ্যমে এলাকার সাধারণ মানুষের বিচারিক-সেবা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য গ্রাম আদালত সক্রিয়করণের কাজে যারা নিযুক্ত আছেন তাদের সর্বোশক্তি দিয়ে মাঠে কাজ করতে হবে। আমরা জানি গ্রাম আদালত সক্রিয়করণের পিছনে বেশ কিছু অন্তরায় আছে। এলাকার মানুষ যখন দ্বন্দ্ব-বিরোধে জড়িয়ে পড়ে তখন তারা সাধারণতঃ এলাকার সালিশদারদের কাছে কিংবা মুরব্বিদের কাছে ছুটে যায়। আবার কখনো কখনো পুলিশ থানায় আসে। এ ছাড়াও কোন কোন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ এলাকায় সালিশ-দরবার করেন। এ সমস্ত অন্তরায় কাটাতে হলে গ্রাম আদালতের সুবিধাগুলো এলাকার মানুষদের বুঝাতে হবে যাতে তারা বিধি বর্হিভূত সালিশে জড়িয়ে না পড়ে। কারণ, এগুলোর কোন আইনি ভিত্তি নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরো বলেন, সালিশ-দরবারে কোন নথি সংরক্ষণ করা হয় না। এগুলো অনেক সময় বেআইনীভাবে সম্পন্ন করা হয়। তাই, গ্রাম আদালতের প্রচার-প্রচারণা আরো বেগবান করতে হবে যাতে এলাকার মানুষ বিরোধে জড়িয়ে পড়লে তারা সরাসরি গ্রাম আদালতে ছুটে আসেন। গ্রাম আদালতে মামলা দায়েরের ফি খুবই সামান্য। ফৌজদারী মামলার জন্য ১০ টাকা ও দেওয়ানী মামলার জন্য ২০ টাকা মাত্র। এই নামমাত্র ফি দিয়ে বিচারপ্রার্থীগণ অতি সহজে বিচার পাবেন। আইনগতভাবে দেশের প্রতিটি নাগরিকের বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এ ব্যাপারে সকল ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবদের কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে যাতে কেউ গ্রাম আদালতে বিচারের নামে অযথা কাল-ক্ষেপন ও হয়রানীর শিকার না হয়।

বিশেষ অতিথি মতলব-দক্ষিণ উপজেলার পুলিশ থানার অফিসার ইনচার্জ স্বপন কুমার আইচ বলেন, আমাদের পুলিশ থানায় কেউ আসলে আমরা তাদের ফিরিয়ে দিতে পারি না। গ্রাম আদালতের এখতিয়ারাধীন অভিযোগগুলো আমি ফিরিয়ে দিলেও এলাকার কিছু মানুষ এগুলোকে অতি রঞ্জিত করে থানার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করবে এবং বলবে যে, থানা কোন অভিযোগ নিতে চায় না। সুতরাং আমার সদ্ ইচ্ছা থাকলেও আমি কিন্তু আইনগত সীমাব্ধতার কারণে সেটা করতে পারি না। তবে এ ব্যাপারে যদি কোন অফিস আদেশ থাকতো তাহলে আমরা অতি সহজে গ্রাম আদালতের এখতিয়ারাধীন অভিযোগগুলো আমাদের পুলিশ থানায় চলে আসলেও আমরা সেগুলো আবার গ্রাম আদালতেই রেফার করে দিতে পারতাম।

অফিসার ইনচার্জ আরো বলেন, আমরা যদি এলাকার মানুষকে সচেতন করতে পারি এবং গ্রাম আদালতের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণা করি তাহলে আমাদের পুলিশ থানায় এলাকার মানুষ ছোট-খাট বিষয় নিয়ে আর আসবে না। এর ফলে আমরা আমাদের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশী সময় দিতে পারবো। গ্রাম আদালতও সরকারী প্রতিষ্ঠান। সুতরাং ইহাকে সহযোগিতা করা আমাদেরও দায়িত্ব। তিনি চাঁদপুর পুলিশ সুপারের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের পুলিশ সুপারের সাথে চাঁদপুরের গ্রাম আদালত বিষয়ক জেলা কর্মকর্তা নিকোলাস বিশ্বাসের যোগাযোগ হয়েছে এবং তার প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার ইতিমধ্যে আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন যেন আমরা বিভিন্ন ফোরামে গ্রাম আদালতের সুবিধার কথা বলি এবং ছোট-খাট বিষয় নিয়ে এলাকার মানুষ যেন পুলিশ থানায় না আসে সে ব্যাপারে কার্যকর দক্ষেপ গ্রহণ করি।।


গ্রাম আদালতের রায়ে চাঁদপুরের ১৫টি পরিবার দীর্ঘ বিশ বছর পর চলাচলের রাস্তা পেল

বিশেষ প্রতিবেদক: চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত মতলব-দক্ষিণ উপজেলার আওতাধীন খাদেরগাঁও ইউনিয়নের পুটিয়া গ্রামের আব্দুল করিম প্রধানীয়া বাড়ির ১৫টি পরিবার বড়ই অসহায় অবস্থায় জীবনযাপন করে আসছিলেন। বাড়ি থেকে চলাচলের জন্য তাদের কোন রাস্তা ছিল না। তারা ছিলেন অনেকটা বিছিন্ন দ্বীপের মত। বাড়ির আশে-পাশে থাকা নালা-নর্দমা ও খানা-খন্দ মাড়িয়ে তাদের বাইরে আসতে হোত। এভাবে তাদের বিশ বছর কেটে যায়। চলাচলের রাস্তা বের করার জন্য তারা অনেক চেষ্টা-তদ্বির করেছেন। করেছেন অনেক সালিশ-দরবার। কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। উল্টো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে এবং শান্তি ভঙ্গ হয়েছে। চলাচলের এই রাস্তা বের করার জন্য বহুদিন যাবৎ এলাকায় বিরোধ চলছিল। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া-ঝাট্টি ও মারামারি হোত।

একদিন এই মারামারিকে কেন্দ্র করে ভূক্তভূগী মোঃ হাসেম খান (পিতা: মৃত গফুর খান) আবু তাহের গঙদের বিরুদ্ধে ৮ জুলাই ২০১৯ তাদের খাদেরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে ১০ টাকা ফি প্রদান সাপেক্ষে একটি ফৌজদারী মামলা দায়ের করেন। গ্রাম আদালত উক্ত মামলাটি আমলে নিয়ে ঐ মাসের ১৫ তারিখে গ্রাম আদালতে হাজির হওয়ার জন্য মামলার প্রতিবাদীদের প্রতি সমন জারি করেন। সমন পেয়ে মামলার প্রতিবাদীগণ ইউনিয়ন পরিষদে হাজির হন এবং নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। গ্রাম আদালত বিধিমালা ২০১৬ এর বিধি-৩১ মোতাবেক উক্ত মামলায় কোন আপোষরফা না হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গ্রাম আদালত গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং আদালতে বিচারিক প্যানেল সদস্য মনোনয়নের জন্য উভয় পক্ষকে আদেশ দেন।

আদালতের আদেশ মোতাবেক ২২ জুলাই ২০১৯ আবেদনকারী ও প্রতিবাদী গ্রাম আদালতের নির্দিষ্ট ফরমে প্রত্যেকে দুই জন করে মোট চার জন বিচারিক প্যানেল সদস্য মনোনীত করেন এবং যথানিয়মে তা আদালতে দাখিল করেন। এরপর ৮ আগষ্ট ২০১৯ চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জর হোসেন রিপনের সভাপতিত্বে গ্রাম আদালতের এজলাস কক্ষে মামলার প্রথম শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। শুনানীর সময় মামলার উভয় পক্ষ এবং সাক্ষ্যীদের জবানবন্দী নেওয়া হয়। জবানবন্দী অনুযায়ী মামলার বিচার্য বিষয় নির্ধারণকালে স্পষ্ট হয় যে, মারামারির সূত্রপাত হয় চলাচলের রাস্তা নিয়ে। এ মতাবস্থায়, মামলার বিচার্য-বিষয় মারামারির পাশাপাশি চলাচলের রাস্তার প্রতিবন্ধকতা উঠে আসে এবং চলাচলের এই সমস্যা নিয়েই গত দুই দশক ধরে তাদের মাঝে বিরোধ লেগে আছে। মারামারির বিষয়টি প্রথম শুনানীতে সমাধান হলেও রাস্তার প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি নিয়ে সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে আদালতে আরেকটি শুনানী করার সিদ্ধান্ত হয় এবং ১৪ আগষ্ট ২০১৯ শুনানীর জন্য নতুন দিন-ক্ষণ নির্ধারণ করা হয়।

সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হওয়ার পর বিচারিক প্যানেল সদস্যদের নিয়ে আদালতের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে সাত দিনের মধ্যে আবার শুনানী শুরু হয়। শুনানীতে উভয় পক্ষের সাক্ষ্যী সহ সবাই হাজির হন। প্রাণবন্ত শুনানী শেষে এই মর্মে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় যে, প্রস্তাবিত রাস্তার জন্য উভয় বাড়ির সবাই নিজ নিজ সীমানা থেকে আড়াই ফুট করে উভয় দিক থেকে মোট পাঁচ ফিট জায়গা মূল সংযোগ রাস্তা পর্যন্ত ছেড়ে দেবেন এবং উক্ত পাঁচ ফিটের মধ্যে কারো কোন স্থাপনা বা গাছ-পালা থাকলে সেগুলো দ্রুত সরিয়ে নিবেন। সিদ্ধান্তে আরো ঘোষণা করা হয় যে, ৩১ আগষ্ট ২০১৯ রোজ শনিবার ইউপি চেয়ারম্যান বিরোধপূর্ণ স্থানের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে উক্ত স্থানটি পরিদর্শন করবেন এবং প্রস্তাবিত রাস্তাটি উন্মুক্ত করে দিবেন। অর্থ্যাৎ গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান ইউপি চেয়ারম্যানকে আদালতের রায় বাস্তবায়নের দ্বায়িত্ব দেন।

গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জর হোসেন রিপন ইউপি সদস্যদ্বয় যথাক্রমে হাবিব উল্লাহ হবু, মোজাম্মেল হক মিয়াজী, মোঃ মহসিন প্রধান, গ্রাম আদালত সহকারী মোঃ ইব্রাহীম ঢালীসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গদের নিয়ে সেখানে যান এবং নিজ হাতে উপস্থিত সহযোগীদের নিয়ে জমি মাপজোক করে চলাচলের জন্য উক্ত প্রস্তাবিত রাস্তার জায়গা বের করেন এবং সবার চলাচলের জন্য তা উন্মুক্ত করেন। এ সময় সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন খাদেরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাহিদুর রহমান জাহাঙ্গীর মিয়াজী ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম ঢালী। তারা সবাই তাকে সহযোগিতা করেন।

ইউপি চেয়ারম্যানের আন্তরিকতায় ও গ্রাম আদালতের এমন জনহিতকর সিদ্ধান্তে এলাকার দীর্ঘদিনের একটি বিরোধের অবসান ঘটল এবং বন্ধীপ্রায় ১৫টি পরিবার সহ এলাকার মানুষ স্বাচ্ছন্দে চলাচলের জন্য একটি রাস্তা পেল। এতে সবাই খুশী। তাদের ধারণা গ্রাম আদালত এভাবে এগিয়ে গেলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে।।


গ্রাম আদালতের মাধ্যমে অসহায় আরব আলী তার বিশ হাজার টাকা ফিরে পেল

বিশেষ প্রতিবেদক: গ্রাম আদালত বিষয়ক চাঁদপুরের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর নিকোলাস বিশ্বাস সম্প্রতি কচুয়া উপজেলার অন্তর্গত সাচার ইউনিয়নের গ্রাম আদালত পরিদর্শনে যান। আদালতের নথি ও রেজিস্টার পরিবীক্ষণ করে তিনি আদালতের কয়েকজন উপকারভোগীর সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য গাঁয়ের মেঠো-পথ ধরে এগিয়ে যান। দুপুরের কড়া রোদে দীর্ঘ আধা-পাকা ভঙ্গুর-প্রায় রাস্তা পেরিয়ে তিনি ঐদিন দুই জন্য উপকারভোগীর সাথে তাদের বাড়িতে দেখা করেন এবং গ্রাম আদালতের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং তাদের মতামত শোনেন।

এদের মধ্যে একজন ছিলেন এই ইউনিয়নের অন্তর্গত বজরীখোলা গ্রামের বয়োঃবৃদ্ধ আরব আলী। যখন আমরা তার বাড়ি পৌছাই তখন তিনি তার ঘরের সামনে ডাটা ক্ষেতের পাশেই গাছের তলায় বসে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কিছুটা আরাম খুঁজছিলেন। তার বাড়ির উঠানে আমাদের দেখে তিনি খানিকটা ভড়কে যান। আমরা তাকে আস্বস্থ্য করি এবং আমাদের পরিচয় দিই। গ্রাম আদালতের প্রসঙ্গ উঠতেই আরব আলী আবেগে আপ্লূত হয়ে পড়েন।

আরব আলীর বয়স বর্তমানে প্রায় ৭০। তার পরিবারে মোট তিন ছেলে ও তিন মেয়ে ছিল কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। এক সময় তার তিন ছেলেই দুরারোগ্য রোগে একে একে মারা যায়। বর্তমানে তার স্ত্রী রোগে-শোকে দীর্ঘ দিন ধরে শয্যাশায়ী। নিজেও বয়সের ভারে কোন আয়-রোজগার করতে পারেন না। অনেক কষ্টে আরব আলী তার তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এই তিন মেয়ের সাহায্য সহযোগিতা নিয়েই তিনি তার পরিবার চালান। বর্তমানে ছোট মেয়েটি তার সঙ্গে থাকে। মেয়েদের মধ্যে বড় মেয়েটি চট্রগ্রামের একটি পোষাক কারখানায় চাকরী করে।

আবর আলী বলেন, গ্রাম আদালত আমার হারানো বিশ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালত কার্যকর না থাকলে আমি আমার এই টাকা কিছুতেই ফিরে পেতাম না। আমরা কিছু জীজ্ঞেস না করতেই তিনি তার এই কাহিনীটি বলতে শুরু করেন। তিনি বলেন, আমার বড় মেয়ে আমাকে প্রায় দুই বছর আগে জমি বর্গা নেওয়ার জন্য মোট বিশ হাজার টাকা দিয়েছিল। আমার প্রতিবেশী কালু মজুমদার এই টাকার কথা জানতে পারে। সে এলাকায় কাঠের ব্যবসা করে। একদিন কালু আমার কাছে এসে ঐ টাকাগুলো মাত্র পনেরো দিনের জন্য ধার চায়। সহজ-সরল আরব আলী প্রতিবেশীর কথায় রাজি হয়ে ঐ বিশ হাজার টাকা তাকে ধার দেয়।

নির্ধারিত পনেরো দিন পার হয়ে যাওয়ার পর আরব আলী প্রতিবেশী কাল মজুমদারের কাছে তার ধার দেওয়া টাকা ফেরত চায়। কিন্তু কালু মজুমদার ধারের টাকা দেই-দিচ্ছি করে টাল-বাহানা শুরু হরে। এভাবে কয়েক মাস কেটে যায়। এই টাকা উদ্ধারের জন্য এলাকায় বহুবার সালিশ-দরবার হয়েছে। প্রতিবারই কালু মজুমদার টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গিকার করে এবং প্রতিবারই তা ভঙ্গ করে। কোনভাবেই আরব আলী তার টাকা ফেরত পাচ্ছে না। ক্লান্ত-শ্রান্ত এবং ভগ্ন মনোরথ হয়ে এক সময় অসহায় আরব আলী এই টাকা পাওয়ার আশা ছেড়েই দেয়।

এর কিছুদিন পর একদিন বিকেলে আবর আলী পাশের বাড়িতে একটি উঠান-সভায় যোগদান করেন। তিনি বলেন, ঐ দিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির কারণে আমরা সবাই ঐ বাড়ির একটি ঘরের বারান্দায় বসি। উঠান-সভাটি পরিচালনা করছিল মিঠুন চক্রবর্তী। পরে শুনেছি সে গ্রাম আদালতে চাকরী করে। ঐ উঠান-সভায় আমি জানতে পারি যে, গ্রাম আদালতে মাত্র ১০ টাকা ও ২০ টাকা ফি দিয়ে অতি স্বল্প সময়ে সহজেই বিচার পাওয়া যায়। আমি যেন আবার আমার ঐ ধার দেওয়া টাকা ফিরে পাওয়ার আশা খুঁজে পেলাম। সভা শেষে আমি মিঠুনকে আমার ঘটনাটি খুলে বলি। মিঠুন সবিস্তারে শুনে আমাকে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি গ্রাম আদালতে আসার পরামর্শ দেয়।

আমিও আর কাল বিলম্ভ না করে পরের দিনই আমাদের সাচার ইউনিয়নের গ্রাম আদালতে আসি এবং আদালত সহকারী মিঠুনের সাথে দেখা করি। আদালত সহকারীর পরামর্শ মোতাবেক মামলাটির ধরণ দেওয়ানী প্রকৃতি হওয়ায় মাত্র ২০ টাকা ফি দিয়ে আমি আমার পাওনা বিশ হাজার টাকা ফেরত চেয়ে কালু মজুমদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করি। গ্রাম আদালতে অভিযোগটি মামলা আকারে নথিভূক্ত হওয়ার পর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ওসমান গণি মোল্লা গ্রাম পুলিশ মারফত মামলার প্রতিপক্ষ কালু মজুমদারের প্রতি সমন জারি করেন।

সমন পেয়ে কালু মজুমদার যথাসময়ে গ্রাম আদালতে আসেন এবং দায় স্বীকার করে উপস্থিত সবার সামনে নগদ দশ হাজার টাকা ফেরত দেন এবং বাকী দশ হাজার টাকা এক সপ্তাহ পরে দেওয়ার জন্য সময় প্রার্থনা করেন। উল্লেখ্য যে, এক সপ্তাহ করে বাকী দশ হাজার টাকাও কালু মজুমদার আরব আলীকে ফেরত দেন। এভাবে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে অসহায় বয়োঃবৃদ্ধ আরব আলী তার দীর্ঘ দিনের পাওনা মোট বিশ হাজার টাকা ফিরে পান।।

জুলাই’১৯ মাসে চাঁদপুর গ্রাম আদালতে ৪৪৭ মামলা দায়ের এবং ৪৪৬ নিস্পত্তি

বিশেষ প্রতিনিধি: জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন উদ্যোগ, গণমাধ্যমের প্রচার-প্রচারণা এবং গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের নানাবিধ কার্যক্রমের ফলস্বরূপ ২০১৯ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পাধীন চাঁদপুরের ৪৪ টি গ্রাম আদালতে এ যাবৎ কালের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক মামলা দায়ের ও নিস্পত্তি হয়েছে। শুধু তাই নয়, নিস্পত্তিকৃত মামলার রায়ও সর্বোচ্চ সংখ্যক বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে চাঁদপুরে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পের কাজ শুরু করা হলেও মামলা গ্রহণ শুরু হয় জুলাই’১৭ মাস হতে। এই হিসেবে মোট ২৫ মাসের মামলা পরিসংখ্যান আমাদের হাতে রয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাই হতে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত মোট ৪,৭৪৬ টি মামলা দায়ের হয়েছে। এ তথ্য মতে প্রতি মাসে প্রতি ইউনিয়নে গড়ে ৪.৩ টি মামলা দায়ের হয়।

২০১৯ সালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক মোট ৪৪৭ টি মামলা দায়ের হয়েছে এবং নিস্পত্তি হয়েছে ৪৪৬ টি মামলা। এ হিসেবে প্রতি ইউনিয়নে গড়ে মামলা দায়ের হয় ১০.১৬ টি যা এ যাবৎ কালের মাসিক গড় মামলার প্রায় আড়াই গুণ বেশী। জুলাই মাসের দায়েরকৃত মামলার বিপরীতে যে সংখ্যক মামলা নিস্পত্তি হয়েছে তাতে মামলা নিস্পত্তির শতকরা হার দাঁড়ায় প্রায় ৯৯.৭৮ ভাগ।

গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ (সংশোধন ২০১৩) অনুযায়ী এ মামলাগুলো নিস্পত্তি করার জন্য (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) গ্রাম আদালতে বিচারিক-প্যানেল গঠন করা হয়। জুলাই মাসে এই বিচারিক প্যানেলে সদস্য হিসেবে মোট ২৩৯ জন অংশগ্রহণ করেন যাদের মধ্যে ৩৪ জন নারীও ছিলেন। দিন দিন গ্রাম আদালতের বিচারিক-প্যানেলে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এর ফলে এখানকার বিচারিক পরিবেশ নারী-বান্ধব হয়ে উঠছে। গ্রাম আদালতে নারী বিচার-প্রার্থীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০১৭ সালের জুলাই হতে ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত মোট ১,৯০,২৩,০৪২ (এক কোটি নব্বই লক্ষ তেইশ হাজার বিয়াল্লিশ) টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে আদায় হয়েছে যা আদালতের বিধান অনুযায়ী মামলার ক্ষতিগ্রস্থদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ হিসেবে প্রকল্পাধীন চাঁদপুরের ৪৪টি ইউনিয়নে প্রতি মাসে গড়ে আদায় হয়েছে ৭,৬০,৯২১ (সাত লক্ষ ষাট হাজার নয় শত একুশ) টাকা মাত্র। অথচ এই জুলাই’১৯ মাসেই আদায় হয়েছে মোট ২০,৯৮,১৫০ (বিশ লক্ষ আটানব্বই হাজার এক শত পঞ্চাশ) টাকা যা এ যাবৎ কালের মাসিক গড় আদায়ের প্রায় আড়াই গুণ বেশী।

প্রসঙ্গতঃ বাংলাদেশ সরকার, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন এবং ইউএনডিপি -এর সহায়তায় ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ “বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্প” চাঁদপুর সহ দেশের মোট ২৭ জেলায় বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের মূল ভিত্তি হল: গ্রাম আদালত আইন ২০০৬ (সংশোধন ২০১৩) এবং গ্রাম আদালত বিধিমালা ২০১৬।।

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget