Articles by "কৃষি ও প্রকৃতি"
92 অন্যান্য 51 অর্থনীতি 24 আইন ও আদালত 76 আন্তর্জাতিক 588 এক ঝলক 3 কক্সবাজার 1 কবিতা 22 কিশোরগঞ্জ 4 কুড়িগ্রাম 6 কুমিল্লা 1 কুষ্টিয়া 3 কৃষি 107 কৃষি ও প্রকৃতি 10 ক্রিকেট 1 খাগড়াছড়ি 73 খেলাধুলা 45 গণমাধ্যম 12 গাইবান্ধা 1 গাজীপুর 17 চট্টগ্রাম 5 চাঁদপুর 5 চাঁপাইনবাবগঞ্জ 2 চুয়াডাঙ্গা 14 জয়পুরহাট 1 জাতীয় 3 জামালপুর 1 জোকস 6 ঝনিাইদহ 246 ঝালকাঠি 12 ঝিনাইদহ 4 টাঙ্গাইল 44 ঠাকুরগাঁও 39 ঢাকা 1 থী 3 দিনাজপুর 4784 দেশজুড়ে 42 ধর্ম 3414 নওগাঁ 14 নাটোর 2 নারায়ণগঞ্জ 1 নিহত ২ 1 নীলফামারীর 2 নেত্রকোনা 1 নোয়াখালী 3 পঞ্চগড় 4 পিরোজপু 2 প্রকৃতি 2782 প্রথম পাতা 23 প্রবাস 1 ফরিদপুর 17 ফিচার 8 ফুটবল 1 ফেনী 94 বগুড়া 2 বলিউড 58 বাগমারা 82 বিএমএসএফ 31 বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি 53 বিনোদন 51 বেনাপোল 2 ব্রাক্ষণবাড়িয়া 1 ব্রাহ্মণবাড়িয়া 51 ভিডিও 18 ভোলা 8 ভ্রমণ 59 ময়মুনসিংহ 1 মাগুরা 1 মাদারীপু 2 মাদারীপুর 1 মানিকগঞ্জ 1 মেহেরপুর 495 যশোর 5 রংপুর 103 রাজনীতি 3 রাজবাড়ী 95 রাজশাহী 3 লক্ষ্মীপুর 24 লাইফস্টাইল 2 লালমনিরহা 41 শিক্ষা 1 শ্রীপুর 891 সকল জেলা 2 সাতক্ষীরা 9 সিরাজগঞ্জ 3 সিলেট 63 সুনামগঞ্জ 31 স্বাস্থ্য 4 হবিগঞ্জ 1 হলিউড 10 bmsf


নওগাঁয় জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান ২০২৪ এর উদ্বোধন

নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: ‘ছাত্র শিক্ষক কৃষক ভাই-ইঁদুর দমনে সহযোগিতা চাই’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নওগাঁয় জাতীয় ইঁদুর দমন অভিযান ২০২৪ এর শুভ উদ্বোধন করা হয়েছে। 


আজ বুধবার সকালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর আয়োজনে উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে ইঁদুর দমন অভিযানের শুভ উদ্বোধন করা হয়। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবুল কালাম আজাদ এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপ-পরিচালক এর কার্যালয়ের হলরুমে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় ফসলে ইঁদুরের উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্য ইঁদুর দমন করতে বিভিন্ন কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়।

 

ধানের রাজ্য নওগাঁয় গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে কাঁঠাল

নাজমুল হক নাহিদ, (আত্রাই) নওগাঁ : উত্তর জনপদের ধানের রাজ্য হিসেবে খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে মধু মাস জ্যৈষ্ঠের বেশ জনপ্রিয় পুষ্টিগুণ সম্পন্ন রসালো ফল কাঁঠাল। যদিও কাঁঠাল পাকতে সময় বাকি রয়েছে আরও প্রায় মাস।

প্রবাদ আছে ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’- জ্যৈষ্ঠ মাসে এ কথাটি আর কথার কথা থাকে না। গাছে কাঁঠাল দেখলে এ কথা সবাই বলতেই পারে। বর্তমানে উপজেলার প্রতিটি এলাকার গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে রসালো ফল কাঁঠাল। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়ির পাশে, রাস্তার ধারে, জঙ্গলের ভেতরে থাকা গাছে ধরেছে প্রচুর পরিমাণে কাঁঠাল। গাছের গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত শোভা পাচ্ছে সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ফল।

খাদ্য শষ্য ভান্ডার হিসেবে নওগাঁ জেলা বিখ্যাত হলেও এখানকার মানুষের অতি প্রিয় ফল ও তরকারি হিসেবে কাঁঠাল যুগ যুগ ধরে কদর পেয়ে আসছে। কাঁঠালের বিচি উপজেলার মানুষের একটি ঐতিহ্যপূর্ণ তরকারি। বিশেষ করে কাঠালের বিচি দিয়ে শুটকি ভর্তা অত্যন্ত প্রিয় সকলের। বিভিন্ন ধরনের শাক ও কাঁঠালের বিচির সমন্বয়ে রান্না করা তরকারি এখানকার মানুষ তৃপ্তির সঙ্গে ভাত খেতে পারেন। তাছাড়া গবাদিপশুর জন্যও কাঁঠালের ছাল উন্নতমানের গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এক প্রকারের সবুজ রঙের সুমিষ্ট গ্রীষ্মকালীন ফল।

এটি বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসেবে সরকারিভাবে নির্ধারিত। বাংলাদেশের সর্বত্র কাঁঠাল গাছ পরিদৃষ্ট হয়। কাঁঠাল গাছের কাঠ আসবাবপত্র তৈরির জন্য সমাদৃত। কাঁঠাল পাতা বিভিন্ন প্রাণির পছন্দের খাদ্য। তুলনামূলকভাবে বিশালাকার এই ফলের বহির্ভাগ পুরু এবং কান্টকাকীর্ণ, অন্যদিকে অন্তরভাগে একটি কান্ড ঘিরে থাকে অসংখ্য রসালো কোয়া। কাঁঠালের বৃহদাকার বীজ কোয়ার অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত।

উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের ব্যবসায়ী খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, তার ২০টি কাঁঠাল গাছে সমানতালে কাঁঠাল ধরেছে। তিনি এবার ৫০ হাজার টাকার কাঁঠাল বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়ায় কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে।

উপজেলার দিঘা গ্রামের কামরুল জানান, আমার নিজের ১০টি কাঁঠাল গাছ আছে। তার গাছে প্রচুর কাঁঠাল ধরেছে। এ বছর তার কাঁঠাল বিক্রির আশা ৩০ হাজার টাকা।

এ ব্যাপারে আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, এ উপজেলায় তেমন একটা কাঁঠালের বাগান নেই তবে দিন দিন মানুষের মাঝে কাঁঠালের চারা রোপনের আগ্রহ বাড়ছে। 

তিনি আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলায় কাঁঠাল ভালো হয়েছে। তবে এ উপজেলায় কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা তাদের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অবিলম্বে অত্র এলাকায় একটি কাঁঠাল প্রক্রিয়াজাত ব্যবস্থা গড়ে তুললে এ উপজেলার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল। 



দেশের প্রথম জিরা চাষ হচ্ছে নওগাঁয়

আজকের দেশ সংবাদ ডেস্ক:  মসলাজাতীয় ফসল জিরা। দেশের মানুষের চাহিদা পূরণে জিরা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। আর এই মূল্যবান ফসল জিরা পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে নওগাঁর রাণীনগরে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কৃষক জহুরুল ইসলাম। তিনি বাড়ির পাশে ৮ শতক জমিতে জিরা চাষ করেছেন। তার এই জিরা চাষ দেখে স্থানীয় অন্য কৃষকদের মধ্যেও আগ্রহ বাড়ছে।
 
রানিনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের শিয়ালা গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকেন। বাজারে জিরার দাম বেশি হওয়ায় তিনি জিরা চাষে উদ্বুদ্ধ হন। অনলাইনে জিরা চাষাবাদ প্রদ্ধতি দেখতে শুরু করেন। অনেক চেষ্টা করে অনলাইনের মাধ্যমে ভারত থেকে প্রায় ১২০০ টাকা খরচ করে ৫০০ গ্রাম জিরা বীজ সংগ্রহ করেন।
 
এর পর বাড়ির পাশে ৮ শতক জমিতে জিরা বীজ রোপণ করেন। বর্তমানে কৃষক জহুরুলের জিরাগাছে ফুল ও জিরা আসতে শুরু করেছে। তিনি পরীক্ষামূলক জিরা চাষ করে অনেকটা সফল হওয়ায় জিরা চাষে আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের।
 
দেশের প্রথম জিরা চাষ হচ্ছে নওগাঁয়

জিরা চাষী জহুরুল ইসলাম বলেন, যেভাবে সরিষার চাষ করা হয় একই রকমভাবে জিরা চাষ করেছি। এরই মধ্যে গাছে ফুল ও জিরা ধরতে শুরু করেছে। গাছে যতগুলো ফুল, ততগুলোই জিরা ধরছে। হিসাব করে দেখছি যেভাবে জিরা ধরছে, তাতে ৮ শতক জমি থেকে ১০ থেকে ১৫ কেজি জিরা পাওয়া যাবে। বাজারে জিরার দাম ভালো থাকায় যার বাজারমূল্যে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। জিরা চাষ একটি লাভজনক ফসল মনে হয়েছে। বীজ বপণের ৩ থেকে সাড়ে তিন মাস সময় লাগে জিরা ঘরে উঠতে।
 
এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সবাই। বানিজ্যিকভাবে জিরা চাষ করা হলে আমদানির উপর অনেক নির্ভরতা কমবে এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।

 

নওগাঁয় বিলুপ্তপ্রায় প্রকৃতির রুপকন্যা শিমুল

আজকের দেশ সংবাদ ডেস্ক :  ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে অনেক ফুল ফোটলেও এখন আর তেমন চোখে পড়েনা রক্তলাল নয়নাভিরাম শিমুল ফুল। কিন্তু কালের বিবর্তনে নওগাঁয় আগুন ঝরা ফাগুনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। বিগত এক-দেড় যুগ আগেও জেলার বিভিন্ন গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির আনাচে কানাচে আর রাস্তার পাশে অনেক শিমুল গাছ দেখা যেতো। প্রতিটি গাছে গাছে প্রস্ফুটিত শিমুল ফুলই স্মরণ করিয়ে দিতো বসন্ত।

শীতের পরেই ঋতুরাজ বসন্ত আগমনের সাথে সাথে প্রকৃতিতে লেগেছে তার ছোঁয়া। প্রতিটি গাছেই আসতে শুরু করেছে নতুন পাতা। প্রকৃতিতে দক্ষিণা বাতাসে আ¤্রমুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুগ্ধ চারিদিক। কোকিলের সুমিষ্ট কুহুতালে ফাগুনের উত্তাল বাসন্তী হাওয়া দিচ্ছে দোলা। গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা। মুকুল আর শিমুল ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে এসেছে ফাগুন।
 
শিমুল গাছের শাখাগুলো বসন্তের আগমনে লাল শাড়ির ঘোমটা পরা গ্রাম্য নববধূর সাজে সজ্জিত হতে দেখা যায়, যা দর্শনে হতাশ প্রেমিকের মনেও জাগিয়ে তোলে আশা। অন্যান্য গাছের তুলনায় শিমুল গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় বহু দূর থেকে এ মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। জোয়ার এনে দেয় কবির কল্পনার জগতে। কেবল সৌন্দর্যই বিলায় না শিমুল গাছের রয়েছে নানা উপকারিতা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব।

নওগাঁয় বিলুপ্তপ্রায় প্রকৃতির রুপকন্যা শিমুল 
জানা যায়, প্রাকৃতিক ভাবে তুলা আহরণের অন্যতম অবলম্বন শিমুল গাছ। এ গাছের সব অংশেরই রয়েছে ভেষজগুণ। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা এখনো নানা রোগের চিকিৎসায় এ গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে। শিমুল গাছের বৈজ্ঞানিক নাম “বোমবাক্স সাইবা লিন”। এটি বোমবাকাসিয়াক পরিবারের উদ্ভিদ। বীজ ও কান্ডের মাধ্যমে এর বংশবিস্তার হয়। রোপণের ৫-৬ বছরের মধ্যে শিমুল গাছে ফুল ফোটে। ৯০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। সেই তুলনায় বেশ মোটাও হয়। নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে শিমুল গাছ দেড়শ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। শীতের শেষে পাতা ঝরে পড়ে।

বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সাথে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়। অন্যান্য গাছের মত এ গাছ কেউ শখ করে লাগায় না। নেওয়া হয়না কোন যতœ। অযতœ আর অনাদরে প্রাকৃতিকভাবেই গাছ বেড়ে ওঠে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য। বালিশ, লেপ ও তোষক তৈরিতে শিমুল তুলার জুড়ি নেই।

অথচ বর্তমানে মানুষ এ গাছকে তুচ্ছ মনে করে কারণে অকারণে কেটে ফেলছে। অতীতে ব্যাপকহারে নির্মাণ কাজ, টুথপিকসহ নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি। ফলে আজ বিলুপ্তির পথে। শিমুল গাছ উজাড় হওয়ার ফলে পরিবেশের উপরে পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।

নওগাঁয় বিলুপ্তপ্রায় প্রকৃতির রুপকন্যা শিমুল
এ গাছ অনেক উঁচু হওয়ায় কাক, কোকিল, চিল, বকসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি বাসা বেঁধে বসবাস করত। এ গাছ উজাড় হওয়ার ফলে এসব পাখিরা আবাসস্থল হারিয়ে পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। গাছ না থাকায় আবাসস্থলের অভাবে ধীরে ধীরে এসব পাখিরাও হারিয়ে যাচ্ছে।

আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুল আজিজ বলেন, আগে গ্রামে প্রচুর শিমুল গাছ ছিল। এই শিমুল ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের মানুষ বিষফোঁড়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে এ গাছের মূল ব্যবহার করত। একই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি বড় ধরনের গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে ১০-১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আগের তুলনায় এখন শিমুলের তুলার দাম অনেক বেড়ে গেছে। এর পরও এই গাছ নিধন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।


রিপোর্ট : তৌফিক তাপস
       নওগাঁ

নওগাঁয় পানিতে তলিয়েগেছে কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান

তৌফিক তাপস, নওগাঁ : বরেন্দ্র অঞ্চল নওগাঁর প্রধান ফসল ধান। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশের অন্যতম জেলা এ নওগাঁ। সদর উপজেলার বিল মুনছুর, ধাওয়াডাজ্ঞা, কাকলা, বিলবাতা, এবং নলি বিলে বছরে মাত্র একবারই ধান চাষ হয়ে থাকে। তাই বছরে মাত্র একবারই ফসল ঘরে তুলতে পাড়ে এ এলাকার কৃষকরা। গত সপ্তাহের  দুদিনের বৃষ্টিতে জমে থাকা উত্তরের উপজেলাগুলোর পানি দক্ষিণে নেমে আসার কারনে তলিয়েগেছে এ এলাকার একমাত্র ফসল কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান। সেই সাথে তলিয়ে গেছে কয়েক শত পরিবারের সকল আসা আর সাড়া বছরের খাদ্যের যোগান।

পানি নিস্কাসনের জন্য বিলগুলোর মধ্যদিয়ে খাল কাটা হলেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের দখলের কারনে কৃষকদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ খাল। যে কারনে উত্তর থেকে পানি নেমে আসলেও আর বের হতে পারেনা তাই দ্রæত সংস্কারের প্রয়োজন বলে মনে করছেন এলাকার কৃষকরা। দ্রæত  পানি নিস্কাসনের ব্যাবস্থা হলে হয়তো আবারও নতুন করে ধান রোপন করতে পারবে কৃষকরা তাতে লাভবান হতে না পারলেও কিছুটা ক্ষতি পুশিয়ে নিতে পারবেন তারা। তাই দ্রæত পানি নিস্কাসনের ব্যাবস্থা হলে একদিকে যেমন কৃষকেরা উপকৃত হবেন তেমনি দেশের খ্যাদ্যের প্রয়োজনীয়তা ও পুরন হবে।

নওগাঁ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আনোয়ারুল হক জানায়, গত টানা বৃষ্টিতে উপজেলার নিচু এলাকার বিশেষ করে হাঁসাইগাড়ি বিল বারমাসিয়া বিল মুনছুর, নলি, ধাওয়াডাজ্ঞা সহ কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে এর মধ্যে কিছু জমির ধান বিলের পানি একটু কমলে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এবং কৃষকদের নতুন করে আবার ধান রোপনের পরামর্শ দিয়েছি, যেহেতু সময় এখন ও আছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের  তালিকা করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠাবো।



নওগাঁয় প্রকৃতি কণ্যা সেজেছে অপরুপ সৌন্দর্যে

তৌফিক তাপস, নওগাঁ : শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ের প্রতিটি মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ। শীতের শিশির ভেজা সকালে কুয়াশার চাদরে ঘেরা বিস্তীর্ন প্রতিটি মাঠ যেন হলুদ বর্ণে ঘেরা এক সপ্নিল পৃথিবী। সরিষার সবুজ গাছের হলুদ ফুলে শীতের সোনাঝরা রোদে ঝিকিমিকি করছে। এ এক অপরুপ সৌন্দর্য যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে প্রকৃতি।

যেদিকে তাকায় শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁ-ধাঁলো বর্ণীল সমরাহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে শরিষা ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পন এ অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনো মুগ্ধকর এক মূহুর্ত। ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির আর সকালের মিষ্টি রোদ ছুঁয়ে যায় সেই ফুলগুলোকে। ভালো ফলনের আশায় উপজেলার কৃষকেরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও।

নওগাঁয় প্রকৃতি কণ্যা সেজেছে অপরুপ সৌন্দর্যে

চলতি রবিশস্য মৌসুমে কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেওয়ায় এবং সরিষা চাষের পরিবেশ অনুকূলে থাকায় সরিষার পাশাপাশি আলু, গম ও ভোট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের কৃষকরা এই সরিষা যথা সময়ে ঘরে তুলতে পাড়লে এবং বিক্রয় মূল্য ভাল পেলে ইরি-বোরো ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন।


জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৭শত ৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবছর উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। শুরুতেই সরিষা ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আনাগোনা দেখা দিলেও মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষিদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতার কারণে সরিষা ক্ষেত অনেকটা রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। ২০২১-২২ অর্থ বছরে সরকারী পর্যায় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে মান সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে ১০ হাজার ২৯০ জন কৃষকের মাঝে সরিষার বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হলেও মাঠ পর্যায়ে বেশ কিছু জমি চাষের উপযুগী না হওয়ায় কিছু কৃষকরা ঠিক সময়ে সরিষা বপণ করতে পাড়েনি। ফলে তারা অন্যান্য রবিশস্য চাষের দিকে ঝুকছেন। আগামী ইরি-বোরো ধান উৎপাদনের প্রস্তুতি হিসেবে প্রান্তিক চাষিরা কিছুটা বাধ্য হয়েই অন্যের জমি বর্গা নিয়ে সরিষা, আলু, গম ও ভোট্টা চাষে অতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। উপজেলার শাহাগোলা, ভোঁপাড়া, মনিয়ারী ও আহসানগঞ্জ ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সরিষা চাষ হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

নওগাঁয় প্রকৃতি কণ্যা সেজেছে অপরুপ সৌন্দর্যে


উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আজাদ সরদার জানান, আমি এবছর ৫বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে কিছু বীজ পেলেও আমি নিজে বাঁকিটা কিনে জমিতে বপণ করেছি। সরিষা গাছে প্রচুর পরিমান ফুল ধরায় মনে হচ্ছে এবার সরিষার আশানুরুপ ফলন পাব। দাম ভাল হলে গত বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে পুরোদমে ইরি-বোরো চাষ করতে পারবো।

 
উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের সরিষা চাষি মনিরুল ইসলাম জানান, আমি চলতি মৌসুমে প্রায় ২বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। কোন প্রকার দূর্যোগ ও রোগবালাই না থাকায় এবছর সরিষার বাম্পার ফলন পাব বলে আমি আশা করছি।


উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম কাউছার হোসেন জানান, এবারে আত্রাই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে বিগত বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি পরিমান সরিষা চাষ হয়েছে। যথা সময়ে জমি চাষ যোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে সরিষা চাষ করেছে। 

কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হলে আত্রাই উপজেলায় সরিষা আবাদের বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে। শুধু তাই নয় সরিষা চাষের জমিগুলো উর্ব্বরতা বেশি থাকায় কৃষকরা ইরি-বোরো চাষেও এর সুফল পাবে।


কৃষি প্রণোদনার সার বীজ পেয়ে খুশি নওগাঁর দুবলহাটীর কৃষকরা

তৌফিক তাপস, নওগাঁ : ২০২১-২০২২ রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনার আওতায় সরিষা, গম, মশুর, খেশারী, মুগ,চিনা বাদাম, পেঁয়াজ, সূর্যমুখী ও ভুট্টা বীজ ও সার পেয়ে খুশি নওগাঁর দুবলহাটীর কৃষকরা। 

মাঠ পর্যায়ে উপ সহকারি কৃষি অফিসারদের নিজেস্ব তত্বাবধানে প্রকৃত কৃষকদের হাতে কৃষি প্রণোদনার বীজ ও সার তুলে দেওয়া হয় যার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ ও দরিদ্র কৃষকরা অনেক উপকৃত হচ্ছেন বলে জানান কয়েকজন কৃষক। 

কৃষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের ইউনিয়নে উপসহকারি কৃষি অফিসার বিভিন্ন দরিদ্র কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রনোদনা তুলে দিচ্ছেন এতে প্রকৃত কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন। 

কৃষি প্রণোদনার সার বীজ পেয়ে খুশি নওগাঁর দুবলহাটীর কৃষকরা

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপ সহকারি কৃষি অফিসার এস এম সাব্বির হোসেন জানান, গত কয়েক বছর ধরে দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রনোদনার সার ও বীজ নির্বাচিত মেম্বার চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরন করা হতো গত ১১ নভেম্বর ইউপি নির্বাচন থাকায় এবার আমরা সরাসরি কৃষকদের মাঝে তুলে দিতে পেরেছি। আমরা যেহেতু মাঠ পর্যায়ে কাজ করি তাই আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় প্রকৃত দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে প্রনোদনার সুষ্ঠ ও সুসমবন্টনে চেষ্টা করেছি। কৃষি বিভাগ সবসময়ই নতুন নতুন জাতের বীজ কৃষকদের মাঝে দিয়ে আসছে আমরা তা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে সুষ্ঠ বন্টনের মাধ্যমে বাস্তবায়নে স্বচেষ্ট আছি এবং কৃষকদের সর্বদা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে আসছি। 

উপ সহকারি কৃষি অফিসার আজমল হুদা বলেন, কৃষি প্রনোদনা এবং বিভিন্ন কৃষি প্রদর্শনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময় কৃষকদের মাঝে দিয়ে আসছে, এতে কৃষকরা অনেক উপকৃত হচ্ছেন এবং অধিক ফলন ফলাতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন ।



নওগাঁয় আমন ধানের ডগায় হেমন্তের শিশির বিন্দু

তৌফিক তাপস,নওগাঁ : নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ৮ ইউনিয়নের প্রতিটি মাঠ জুড়ে অপরুপ সৌন্দর্যে ভরা আমন ধানারে ডগায় দুলছে এখন হেমন্তের শিশির বিন্দু। দিগন্ত জুড়ে যে দিকে তাকায় শুধু সবুজ আর সবুজ। সবুজের সমারোহে যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। ঋতু শরৎকে বিদায় দিয়ে হেমন্তকে বরণ করেছে প্রকৃতি। উপজেলার প্রতিটি মাঠে জুড়ে ধানের শীষে পড়ছে শীতের শিশির বিন্দু। সকাল হলেই দেখা মিলছে সাদা কুয়াশার ভেলা। এই কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।


শস্য শ্যামলা, সবুজ বাংলার কৃষি প্রধান দেশের রাজশাহী অঞ্চলের নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার দিগন্ত জুড়ে খোলা মাঠে দুলছে এখন কৃষকের কাঙ্খিত স্বপ্ন। ধুধু চোখে নজর কাড়ছে আমন ধানের ক্ষেত। ভালো ফলনের আশায় আমন ধান পরিচর্যায় কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পারকরছেন। মাঠে মাঠে চলছে আমন ধান পরিচর্যার মহোৎসব। কাক ডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে ধান পরিচর্যার কার্যক্রম। ধান ক্ষেতগুলো এখন কৃষকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে।

কার্তিক মাসের শুরতেই ধানের গাছ এখন শিশির ভেজা বাতাসে দুলছে। সম্প্রতি মাঠের চারিদিকে এখন সবুজের সমারোহ। গত বছরের চেয়ে এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে মাঠ জুড়ে। এদিকে উপজেলার ডিলারদের নিকট পর্যাপ্ত পরিমান তেল ও সার পাওয়ায় কৃষকরা অনেকটা আশ্বস্ত হয়েছে। নওগাঁ জেলার খাদ্য উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে আত্রাই। এ জন্য বোরো মৌসুমে সেচ কার্যক্রম যথাযথ রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগও রয়েছে তৎপর।

নওগাঁয় আমন ধানের ডগায় হেমন্তের শিশির বিন্দু
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার চলতি মৌসুমে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৫ হাজার ৫০৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হলেও চাষ হয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। এবার লক্ষমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে এবার আমন চাষ করা হয়েছে।

উপজেলার রসুলপুর গ্রামের কৃষক জহির উদ্দিন জানান, এবারে চারা রোপনের সময় প্রাকৃতিক পানি সংকট থাকলেও পরবর্তীতে বৃষ্টির পানিতে ধানের গাছ এখন ভাল রয়েছে। বন্যা কিংবা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশানুরুপ ফলন ঘরে তোলা সম্ভব।

উপ-সহাকরী কৃষি কর্মকর্তা কেরামত আলী জানান, কৃষকদের ক্ষেতে কঞ্চি পুতে দেয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাতে ওই সমস্ত কঞ্চিতে পাখি বসে জমির ক্ষতিকর পোকা নিধন করতে পারে। সেই সাথে পরিচর্যা করে কম মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করে অধিক ফলনের কলা-কৌশলও কৃষকদের শেখানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে এম কাউছার হোসেন জানান, চলতি আমন মৌসুমে কৃষকদের কাঙ্খিত ফসল অর্জনে প্রতিটি ব্লক পর্যায়ে গিয়ে ক্যাম্পেইনসহ নানা ধরণের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও মাজড়াপোকা এবং অন্যান্য আবাদ বিনষ্টকারী পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচতে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা পাচিং সহ আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। ফলে উপজেলার কোথাও মাজড়া পোকা, কারেন্ট পোকার আক্রমণ নেই। তবে এবারো আমন ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।


অধিক লাভজনক কমলা চাষে স্বপ্ন বুনছেন নওগাঁর কৃষকরা

তৌফিক তাপস, নওগাঁ : নওগাঁয় অধিক লাভজনক নতুন অর্থকরী ফসল হিসেবে কমলা চাষে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। তবে জেলায় এই কমলা চাষে ব্যাপক সম্ভাবনার আলো দেখছে কৃষি বিভাগ। ইতিমধ্যে অনেকেই কমলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এক সময় জেলায় উৎপাদিত কমলা দিয়ে স্থানীয় প্রয়োজন মিটিয়ে নিজ দেশসহ বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।


রানীনগর উপজেলার রঞ্জনিয়া গ্রামে ঢকুতেই রাস্তার পাশে চোখে পড়বে নাইসের গড়ে তোলা বিশাল একটি সমন্বিত কৃষি বাগান। এই বাগানে গাছে গাছে ঝুলে আছে হলুদ কমলা। নাম দার্জেলিং কমলা। খেতেও বেশ সুস্বাদু। সমতল ভূমিতে এই কমলা চাষ করে সফল হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন অনেক সৌখিন কৃষকরা। নাইস কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় পরীক্ষা মূলক ভাবে চাষ করেছেন এই কমলা।
কমলা চাষী নাইস হোসেন বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে চাকরীর পেছনে না ছুটে বাবার পরামর্শে প্রায় ৩০বিঘা জমিতে একটি সমন্বিত কৃষি বাগান গড়ে তুলি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার উৎসাহে প্রায় ৩বছর আগে কমলার চাষ শুরু করি। চলতি বছর আমার কমলার গাছে কমলা ধরেছে। সেই কমলাগুলো বর্তমানে পাঁকতে শুরু করেছে। কমলাগুলো খেতে অনেকটাই সুস্বাদু। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার মানুষ আমার বাগানের কমলা ও কমলার গাছ দেখতে আসছেন। আমি উৎসাহী ব্যক্তিদের কমলা চাষ বিষয়ে সার্বিক পরামর্শ দিচ্ছি। শিক্ষিত বেকার যুবকরা চাকরীর পেছনে না ছুটে ইচ্ছে করলেই আমার মতো বাগান তৈরি করে বেকারত্ব দূর করাসহ নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেন।


রানীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন কৃষকদের একঘেয়েমী ফসল চাষ থেকে নতুন অর্থকরী ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতেই আমি এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই চেস্টা করে আসছি। কৃষকদের সহযোগিতায় আমি এই উপজেলায় নতুন করে নিউটন কচু, মাল্টা, বীজ বিহীন চায়না-৩ লেবু ও ড্রাগন ফলসহ বেশ কিছু অধিক লাভজনক ফসল চাষের প্রচলন শুরু করেছি। এবার পরীক্ষা মূলক ভাবে চাষ শুরু করেছি কমলা। সমতল ও উচু জমি কমলা চাষের জন্য খুবই উপযোগি। বর্তমানে বিক্ষিপ্ত ভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৭বিঘা জমিতে আগ্রহী কৃষকদের মাধ্যমে মান্ডারী ও চায়না জাতের কমলা চাষ শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে কমলার গাছগুলোতে কমলা ধরতে শুরু করেছে।

তিনি আরো বলেন আমি প্রথমে নিজ উদ্যোগে চুয়াডাঙ্গা থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন কমলা গাছের চারা এনে উৎসাহী কৃষকদের মাঝে বিতরন করি। কমলা চাষে অন্যান্য ফসলের চাইতে খরচ অনেক কম হওয়ায় এটি অধিক লাভজনক একটি অর্থকরী ফসল। কমলা এমন একটি ফল যার চাহিদা সারা বছর জুড়েই তাই কমলার বাজারজাত করা কিংবা বাজারে কাটতি বিষয়ে কোন চিন্তা নেই। কমলা গাছ রোপনের দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যেই ফল দেওয়া শুরু করে। আর একটি কমলা গাছ থেকে ১৫-২০বছর যাবত ফল পাওয়া সম্ভব। এই জেলায় কমলা চাষের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কমলা চাষের ফাকে ফাকে ওই জমিতে অন্যান্য মৌসুম ভিত্তিক ফসল চাষ করাও সম্ভব। প্রতিদিনই কমলা চাষে আগ্রহী ব্যক্তিরা কৃষি অফিসে এসে পরামর্শ নিয়ে যাচ্ছেন। আমি আশাবাদি এক সময় নওগাঁ জেলা এই অর্থকরী ফসল কমলা চাষের বাগানে ভরে উঠবে।


নওগাঁয় জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান-২০২১ এর উদ্বোধন

তৌফিক তাপস, নওগাঁ : “জাতীয় সম্পদ রক্ষার্থে, ইঁদুর মারি এক সাথে”-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নওগাঁয় জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান-২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ রবিবার বিকালে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ হলরুমে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও সদর উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোঃ হারুন-অর-রশীদ। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ শামছুল ওয়াদুদ এর সভাপতিত্বে  বিশেষ অতিথি  উপজেলা নির্বাহী অফিসার মির্জা ইমাম উদ্দিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (পিপি) মনজুর রহমান প্রমুখ সহ স্থানীয় ব্যক্তি বর্গ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা কৃষকরা উপস্থিত ছিলেন।


শীতের আগমনী বার্তায় নওগাঁয় খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা


তৌফিক তাপস,নওগাঁ : নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় রেল লাইনের দু‘পাশে তাকালেই চোখে পড়ে সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ। শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে খেজুর রস সংগ্রহে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে গাছিড়া। বৈচিত্রপূর্ণ ছয়টি ঋতুর দেশ আমাদের প্রিয় জন্মভ’মি বাংলাদেশ। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক একটি বৈশিষ্ট্য। ঋতু বৈচিত্রে এখন রাতের শেষে কুয়াশা জানান দিচ্ছে শীতের আগমন বার্তা। আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে খেজুর রস সংগ্রহের জন্য গাছিরা খেজুর গাছ কাটার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।


ক্যালেন্ডারে শীতের ঘোষণা দিলেও মানতে নারাজ আবহাওয়া ও পরিবেশ প্রকৃৃতি এখন আর পঞ্জিকার অনুশাসন মানছে না। আর সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই গাছ থেকে রস সংগ্রহের পর্ব শুরু হবে। এবার কিছুটা আগেই নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় প্রান্তিক জনপদের গ্রামে গ্রামে সকালের শিশিরের সাথে অনুভুত হচ্ছে মৃদু শীত।


আর মাত্র কয়েক দিন পর রস সংগ্রহ করে রস থেকে লালি ও গুড় তৈরির পর্ব শুরু হয়ে চলবে প্রায় মাঘ মাস পর্যন্ত। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের প্রস্তুতি উপজেলার প্রতিটি গ্রামে চোখে পড়ছে। খেজুর রস ও গুড়ের জন্য আত্রাই উপজেলা এক সময় খ্যাতি ছিল। সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়। কিছুদিন আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলে, ঝোপ-ঝাড়ের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ।


কোন পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃৃতিক ভাবে বেড়ে উঠতো এসব খেজুর গাছ। প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরন করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু খেজুরের গুড়। গ্রামীন জনপদে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবে পুকুরের পাড়ে রাস্তার ধারে পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। ইট ভাটার রাহু গ্রাসে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বেশি হওয়ার কারণে যে পরিমাণ গাছ চোখে পড়ে তা নির্বিচারে নিধন করায় দিনদিন খেজুর গাছ কমছেই।


এখনও শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসে গ্রাম বাংলার খেজুর রস খেতে। এক সময় সন্ধ্যাকালীন সময়ে গ্রামীন পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালী তৈরি করতেন।
যার সাধ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন অবশ্যই সে কথা নতুন প্রজন্মের কাছে রূপকথা মনে হলেও বাস্তব। যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। এ গাছ ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। এটাই তার বৈশিষ্ট্য। শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। এ ছাড়া খেজুরের পাতা দিয়ে আর্কষনীয় ও মজবুত পাটি তৈরী হয়। এমনকি জ্বালানি কাজেও ব্যাপক ব্যবহার। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনসহ বন বিভাগের নজরদারী না থাকায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ এখন জেলা জুড়ে বিলুপ্তির পথে।


নাটোরের লালপুর উপজেলা থেকে আসা গাছি কালাম মিঞা ও তার সহকর্মীরা জানান, আমরা পেশাগত কারণে প্রায় প্রতি বছরেই আত্রাই উপজেলার বজ্রপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস এর জমিতে তাবু গেড়ে ওই এলাকার খেজুর গাছ মালিকদের কাছ থেকে ৪ মাসের জন্য গাছ ভেদে ৫থেকে ৭কেজি করে খেজুরের গুড় দিয়ে গাছ গুলো আমরা নেই।


চাহিদা মত খেজুর গাছ না পাওয়ার কারণে রস কম হওয়ায় আশানুরুপ গুড় তৈরি করতে পাড়ি না। তারপরও এবছর প্রায় ২ শ’টির বেশি খেজুর গাছের মালিকদের সাথে চুক্তি করেছি। বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে না দিয়ে জীবন-জীবিকার জন্য এই পেশা ধরে রেখেছি।


তবে যে ভাবে খেজুর গাছ কাটা হচ্ছে অল্প দিনের মধ্যেই এই এলাকায় আর আমাদের ব্যবসা হবে না। বর্তমান বাজারে আখের গুড় চিনি যে মূল্যে বেচাকেনা হচ্ছে তার চেয়ে মানসম্পন্ন খেজুরের গুড়ের দাম এবছর কিছুটা বেশি হবে এমনটাই আসা করছেন গাছিরা। শীত একটু বেশি পড়তে শুরু করলে আত্মীয়-স্বজন আনা নেয়া ও পিঠা-পুলির উৎসবে খেজুর গুড়ের দাম ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সে সময় আমাদের লাভ একটু বেশি হয়। যে পরিমাণে শ্রম দিতে হয় সে পরিমাণে আমরা লাভ করতে পারি না। তবুও পেশাগত কারণে চালিয়ে যাচ্ছি এই ব্যবসা।


এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে এম কাউছার হোসেন জানান, বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। গাছিদের খেজুর গাছ কাটার কাজটি শিল্প আর দক্ষতায় ভরা। ডাল কেটে গাছের শুভ্র বুক বের করার মধ্যে রয়েছে কৌশল, রয়েছে ধৈর্য ও অপেক্ষার পালা। এ জন্য মৌসুম আসার সাথে সাথে দক্ষ গাছিদের কদর বাড়ে।


এদিকে উপজেলার সচেতন মহল মনে করেন, খেজুর গাছ আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাহিত্য তথা জীবনধারায় মিশে আছে। এই ঐতিহ্যকে যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করতে হবে।

 

নওগাঁর সাপাহারে আম শেষে বাজার দখল করেছে মাল্টা

তৌফিক তাপস, নওগাঁ : আমের রাজধানী খ্যাত নওগাঁর সাপাহারে আশ্বিনা গৌড়মতি আমের মধ্যে দিয়ে প্রায় শেষ পর্যায়ে আমের মৌসুম। এরই মধ্যে বাজার দখল করে বসেছে লেবুজাতীয় ফলমাল্টা এই অঞ্চলে অন্যান্য ফসলের ন্যায় মাল্টা চাষ একটি অনুকুলতা এনেছে। বানিজ্যিক ভাবেও মাল্টা বাজারজাত করে ভালো দাম পাওয়ায় সন্তুষ্ট মাল্টাচাষীরা।

বরেন্দ্র মি খ্যাত এই উপজেলার মাটির গুনাগুণ ভালো হবার ফলে সব ধরণের ফসল চাষে অনুকুল। যার একটি অংশ দখল করেছে মাল্টা। মাল্টার বাজার মূল্য উৎপাদনের হার ভালো থাকায় এই অঞ্চলের কৃষকরা মাল্টা চাষে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করছেন। বর্তমানে মাল্টা চাষ অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছে এই এলাকায়। প্রাথমিক অবস্থায় স্বল্প খরচে মাল্টা চাষ করে লাভবান হবার ফলে এই ফল চাষে কৃষকদের আগ্রহের যেন সীমা নেই। এছাড়াও মাল্টা চাষ উৎপাদনের দিকে লক্ষ্য রেখে বাজারের ফল আড়ৎগুলোতে বানিজ্যিক ভাবে মাল্টা ক্রয় করছেন আড়ৎদাররা। যা মাল্টাচাষীদের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় প্রাথমিক অবস্থায় অনেক কৃষক পরীক্ষামূলক ভাবে মাল্টা চাষ করছেন। মাল্টার ফলন মাটির অনুকলতায় মাল্টা চাষে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন এলাকার চাষীরা। আবহাওয়া অনুকলে থাকায় মাল্টা মৌসুমগত ভাবে একবার উৎপাদন হয়। কিন্তু কিছু জাতের মাল্টা বছরে দুই বার উৎপাদন হচ্ছে মাল্টা হারভেস্টের উত্তম সময় হচ্ছে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাস। তবে কিছু অগ্রীম জাতের মাল্টা আগষ্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে হারভেস্ট করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানান মাল্টা চাষীরা।

মাল্টা চাষী মাহফিজুর রহমান বলেন, “আমি পরীক্ষামূলক ভাবে ৩শটি মাল্টা গাছ লাগিয়েছিলাম। বর্তমানে প্রতিটি গাছ প্রাপ্ত বয়স্ক হবার ফলে ভালো ফলন হচ্ছে। আমার বাগানে দুই জাতের মাল্টা চাষ করছি। বারি- বারি- জাতের মাল্টা আমার বাগানে রয়েছে। তবে ফলনের দিক থেকে বারি- জাতের মাল্টা অনেকটা অনুকল। প্রথমে যখন মাল্টা চাষ করি, তখন বাজারজাতের জন্য অনেকটাই সমস্যা মনে হত। কিন্তু বর্তমানে কিছু আড়ৎদার মাল্টা কেনার ফলে আমরা মাল্টা বাজারজাত করণে অনেকটা সুবিধা পাচ্ছি

অনেক মাল্টা চাষী বলছেন, আমের মৌসুমে যেমন বাইরে থেকে ব্যাপারীগণ আসেন ঠিক তেমনি ভাবে যদি মাল্টা ক্রয়ের জন্য বাইরে থেকে ব্যাপারী আসতেন সেক্ষেত্রে আমরা আরো বেশি লাভবান হতে পারতাম।

আড়ৎদার ফরিদুল ইসলাম জানান, বর্তমান বাজার অনুযায়ী প্রতিমণ মাল্টা ২৬/২৮শ টাকায় কেনা হচ্ছে। আমি এসব মাল্টা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন ফলের মোকামে পাঠাই। যাতে করে একদিকে যেমন এটি একটি লাভজনক ব্যবসা অপরদিকে কৃষকেরাও সহজেই বিক্রয় করতে পারছেন নিজ জমিতে উৎপাদিত মাল্টা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মনিরুজ্জামান জানান, চলতি বছরে উপজেলায় লেবু জাতীয় ফলের চাষ হয়েছে ৯৭ হেক্টর জমিতে তার মধ্যে মাল্টা চাষ হয়েছে ৮০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০/১২ মেট্রিক টন। এছাড়াও মাল্টা চাষীদের উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সার্বিক ভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

যদি বানিজ্যিক ভাবে মাল্টা বাজারজাত করণের সুবিধা আরো বিস্তৃত করা হয় তাহলে এই অঞ্চলে মাল্টা চাষ ব্যাপক ভাবে বাড়বে বলে ধারণা করছেন এলাকার মাল্টাচাষীরা।

নওগাঁয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের চারা বিতরন


তৌফিক তাপস,নওগাঁ :  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নওগাঁয় কৃষকের মাঝে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা বিতরন করা হয়েছে। বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট নওগাঁর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উদ্যোগে এসব চারা বিতরন করা হয়। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কৃষকদের মাঝে চারা বিতরন করেন সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ডা. মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম। 

এর আগে কৃষকদের বৃক্ষ রোপনের তাৎপর্য, মাটির স্বাস্থ্য, সুষম ও জৈব সারের ব্যবহার সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

আলোচনা সভায় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট নওগাঁর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) ড. মোঃ নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন ও বর্ষাইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শামসুজ্জোহা বক্তব্য রাখেন।

পরে ১০০ জন নারী ও পুরুষ কৃষকদের মধ্যে প্রত্যেকে একটি করে পেয়ারা, মেহগনী ও লটকন গাছের চারা এবং ভূমি, মাটি ও সার সুপারিশ সহায়িকার বই বিতরন করা হয়।

 

নওগাঁয় ড্রাগন চাষ লাভজনক বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে বাগান


তৌফিক তাপস, নওগাঁ : কম পরিশ্রমে বেশি লাভজনক হওয়ায় নওগাঁয় দিনদিন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ড্রাগন ফল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৭ বছরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের মধ্যে ড্রাগন চারা সরবরাহ ও পরামর্শ দেওয়ায় প্রায় ২শ’ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন বাগান গড়ে উঠেছে। নওগাঁর চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামিতে ড্রাগন ফল চাষ ও কৃষি পরামর্শ অব্যাহত থাকলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। 

জানা গেছে, বিদেশী ফল ড্রাগন। ২০০৭ সালে দেশে প্রথম ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়। পরের বছর সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতায় নওগাঁয় কৃষকদের উদ্বুত্ত করণসহ ড্রাগন চাষ শুরু করা হয়। প্রথমে দু’একজন কৃষক ড্রাগন চাষ শুরু করলেও ২০১৩ সাল থেকে জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। পুষ্টিগুণে ভরপুর ও অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ও চারা সরবরাহ করায় ২০১৭ সাল থেকে ব্যাপক পরিসরে ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে। বর্তমানে নওগাঁয় বছরে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিকটন ড্রাগন উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি কেজি বড় আকারের ফল ৪শ’ টাকা, মাঝারি ৩শ’ টাকা ও ছোট ২শ’ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। এই ফল নগদ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। জেলায় নতুন নতুন ড্রাগন ফল বাগান গড়ে উঠায় অনেকের কর্মসংস্থাণ হয়েছে। বাগানের পরিচর্চা করে অনেক বেকার নারী-পুরুষের পরিবারের খরচের চাহিদা মিটছে। 

বদলগাছী হর্টিকালচার সেন্টারের জ্যেষ্ঠ উদ্যান তত্ত্ববিধ আ. ন. ম আনোয়ারুল হাসান জানান, সরকারের নির্দেশ রয়েছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ড্রাগন ফল বেশি করে চাষ করতে। কম শ্রমে অর্থকরি ফসল ড্রগন চাষের লক্ষ্যে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে প্রতি অর্থ বছরে প্রায় দুই হাজার ড্রাগন চারা উৎপাদন করে এই সেন্টার থেকে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি কৃষি উদ্যোক্তার মধ্যে ড্রাগন প্রদর্শণী খেত তৈরী করা হয়েছে। অনেক কৃষক ড্রাগন চাষে এগিয়ে আসেন সেই লক্ষ্যে সরকার চলতি অর্থ বছরে প্রতি ড্রাগন চারার দাম ১০ টাকা কমিয়ে ৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে। 

নওগাঁয় ড্রাগন চাষ লাভজনক বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠেছে বাগান

নওগাঁর পোরশা উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের উদ্যোক্তা আব্দুর রহমান শাহ্ চৌধুরী জানান, উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কাটপুকুর এলাকায় ৫০ হাজার ড্রাগন চারা সমন্বয়ে ২৪ বিঘা জমিতে ২ বছর আগে ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তোলা হয়। ওই বাগান গড়ে তুলতে ৪০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ হলেও বছর ঘুরতেই ফল উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে সপ্তাহে ১ লাখ টাকা আয় হয়। নওগাঁসহ রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। 

পোরশা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান, আব্দুর রহমান শাহ্ চৌধুরী এই ড্রগন বাগানটি তৈরী করতে কৃষি বিভাগ থেকে সকল ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়। উপজেলায় অরো অনেক কৃষি উদ্যোক্তা বেশ কিছু ছোট-বড় ড্রাগন বাগান তৈরী করেছেন। তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে পোরশায় বেশি করে এই অর্থকরি ফল চাষে কৃষকরা এগিয়ে আসেন। 

পোরশা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, কম পানি চাহিদা সম্পন্ন ড্রাগন গাছ থেকে বছরে ৭ মাস অর্থাৎ মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ফল সংগ্রহ করা যায়। রোগবালাই ও পোকার কম আক্রমণ হওয়ায় সঠিক পরিচর্যার করলে একটি গাছ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা সম্ভব।

নওগাঁ সদর উপজেলার শিক্ষক ও সফল কৃষি উদ্যোক্তা মাহবুবুর রহমান জানান, গত ৮ বছর আগে থেকে ড্রাগন চাষ করেন। তিনি জেলাসহ নাটোর, বগুড়া, জয়পুরহাটে অনেক ড্রাগন বাগান গড়ে তুলতে পরামর্শ দিয়েছেন। এক বিঘায় ২শ’ পিলার স্থাপন করলে আড়াইশ’ পিলার ৮শ’ থেকে ৯শ’ গাছ লাগানো যেতো। বছরে সেখানে ৩ হাজার কেজি থেকে ৫ হাজার কেজি ফল উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এখন সেই পুরাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে নতুন পদ্ধিতে এক বিঘায় প্রায় ৩ হাজার গাছ লাগানো যাবে। এই পদ্ধতিতে এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ৯ হাজার কেজি ফল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে নতুন চাষ পদ্ধিতে ৩ গুণ ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়।

সাপাহার গোডাউন পাড়ায় বসবাসরত সফল কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা জানান, এই ফলটি আমদানি নির্ভর। তবে দেশে অনেক কৃষক ড্রগন চাষে ঝুঁকে পরেছে। আগামীতে এটি অব্যাহত থাকলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আগামিতে বিদেশে রপ্তানি সম্ভব। 

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুল ওয়াদুদ জানান, চলতি বছরে নওগাঁয় প্রায় ২শ’ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করা হয়েছে। ড্রাগন ফল বাগান থেকেই বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় আগামীতে আরো বেশি করে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।  



যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget