নওগাঁ প্রতিনিধি: একসময়ের বিক্ষাত রায় বাড়ির জমিদার বাড়িটি এখন মাটির ডুপ্লেক্স বাড়ি। মাটির তৈরি বাড়ি ও এতো সুন্দর হয় তা চোখে না দেখলে বোঝা দায়। বাড়িটি ব্যাক্তি মালিকানায় থাকলেও প্রতিনিয়ত দূরদুরান্ত থেকে পর্যটক আসে বাড়িটিকে একনজর দেখার জন্য।
প্রত্যন্ত গ্রামের মাঝে দৃষ্টিনন্দন একটি মাটির রাজবাড়ি। চুনসুরকির বাহারি কারুকাজ আর আলোর ঝলকানিতে দোতলা এই রাজবাড়িটি এখন সবার দৃষ্টি কাড়ে।
স্থানীয়দের মতে আজ থেকে প্রায় আড়াইশ বছর আগে জমিদার সারদা প্রসাদ রায়ের বাবা এই গ্রামে এসে পালদের কাছ থেকে একটি মাটির দোতলা বাড়ি কিনে নেন এবং তার জমিদারি স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে সারদা প্রসাদ রায় থেকে এই জমিদারি প্রথা যতদিন পর্যন্ত বিলুপ্ত না হয়েছে ততদিন পর্যন্ত জমিদারি চালিয়ে গিয়েছেন।
এই রায় বাড়ির জমিদারি বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় সব কাজই পরিচালিত হতো এই মাটির বাড়ি থেকে।
কথিত ইতিহাস রয়েছে যে জমিদার সারদা প্রসাদ রায়ের দুই ছেলে ছিলেন। বড় ছেলের নাম বড়দা প্রসাদ রায় এবং ছোট ছেলের নাম শরৎ রায়।
এস এম আশকার ইবনে সুলতান জানান, বড়দা প্রসাদ রায়ের পরিবারকে বলা হতো বড় তরফ আর সারদা প্রসাদ রায়ের পরিবারকে বলা হত ছোট তরফ। এই বড়দা প্রসাদ রায় তৎকালীন ১৯৪২ সাল থেকে যুদ্ধের আগ পর্যন্ত এই এলাকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অর্থাৎ এখনকার ভাষায় যেটাকে বলা হয় চেয়ারম্যান।
ইতিহাসের বরাত দিয়ে স্থানীয়রা বলেন, বলিহারের রাজা বিমলেন্দু রায় বাহাদুরের মাতুলালয় ছিল এই রায় বাড়ি। এই রায় পরিবার তৎকালীন সময়ে শিক্ষা সংস্কৃতি বিষয়ে অনেক অগ্রগামী ছিল। যা দেখতে প্রতিনিয়ত ভির করছেন বিভিন্ন এলাকার পর্যটক।
বড়দা বাবুর আমলে ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা। যা ১৯৬৪ সালের ৬ জানুয়ারির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। দাঙ্গার কারণ হিসেবে ধরা হয় এই পরিবারের লোকজনের আত্ম-অহংকার এবং দাম্ভিকতা। সেই দাঙ্গায় এই পরিবারের ১৩ জন সদস্য নিহত হয়। এই ঘটনায় বড়দা বাবু কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যান। তিনি যুদ্ধের আগ পর্যন্ত এই এলাকার চেয়ারম্যান ছিলেন। মৈনমের ১৯৬৪ সালের রায়ট বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাস একুশে পরিষদ নওগাঁ লিপিবদ্ধ করেছে।
বর্তমানে ক্রয় সূত্রে এ জমির মালিক এস এম ব্রুহানী সুলতান গামা। গামার বড় ছেলে এস এম আশকার ইবনে সুলতান শান্ত `আজকের দেশ সংবাদকে'কে বলেন, আমার দাদু এই মাটির বাড়িটি কিনেছিলেন। এরপর নিজের চেষ্টায় বাড়িটির আসল কারুকাজ অক্ষত রেখে নতুন করে রঙের কাজ করানো হয়েছে। এবং কিছু স্থানে সংস্কার করা হয়েছে। সবার দেখার জন্য বাড়িটি উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে। বাড়িটি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন মানুষ । এটাই আমাদের ভালো লাগা।
এই দৃষ্টিনন্দন বাড়িটি দেখতে হলে আপনাকে আসতে হবে নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মৈনমে। এই গ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। তার মধ্যে এই রায় বাড়ির ইতিহাস অন্যতম।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.