মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে সরকারের লাখলাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে কয়লা পাচাঁরের জন্য তৈরি করা হয়েছে শতাধিক গুহা। এসব চোরাই গুহা (মৃত্যুর কূপ) থেকে কয়লা আনতে গিয়ে সম্প্রতি ২ কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তারপরও গত ২দিনে সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক মামলার আসামী ও চোরাকারবারীরা প্রায় ২হাজার মেঃটন কয়লা পাচাঁর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়- জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের লালঘাট গ্রামের একাধিক মামলার আসামী ইয়াবা কালাম মিয়া,তার সহযোগী লাকমা গ্রামের হোসেন আলী,একই গ্রামের রতন মহলদার, কামরুল মিয়া,মোক্তার মিয়া,মানিক মিয়া,বাবুল মিয়া,দুধের আউটা গ্রামের জিয়াউর রহমান জিয়া ও মনির মিয়াগং বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট বড় মসজিদ থেকে শুরু করে লাকমা হয়ে টেকেরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির পিছন পর্যন্ত প্রায় ২কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গভীর গর্ত করে শতাধিক চোরাই কয়লার গুহা (মৃত্যুর কূপ) তৈরি করেছে। এসব চোরাইগুহা দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে একদল চোরাকারবারী মাথায় ও কাঁদে বহন করে এক বস্তা (৫০ কেজি) করে কয়লা পাচাঁর করে টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন নিলাদ্রী লেকপাড়ে অবস্থিত ডিপুতে নিয়ে বিক্রি করে। তবে মাঝে মধ্যে বিজিবির পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে ৫-১০বস্তা আটক করা হয়। কিন্তু সোর্স পরিচয়ধারী ইয়াবা কালাম,হোসেন আলী,রতন মহলদার,কামরুল মিয়া,জিয়াউর রহমান জিয়া ও মনির মিয়া রাত ১১টার পর পুলিশ,বিজিবি ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে একবস্তা চোরাই কয়লা থেকে ৩শ টাকা চাঁদা নিয়ে ঠেলাগাড়ি ও লড়ি বোঝাই করে শতশত মেঃটন কয়লা ভারত থেকে পাচাঁর করে, পুলিশ ক্যাম্পের সামনে দিয়ে বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বড়ছড়া শুল্কষ্টেশনের বিভিন্ন ডিপুতে নিয়ে মজুত করে। একই ভাবে বরুঙ্গাছড়া ও রজনীলাইন এলাকা দিয়ে রুস্তম মিয়া,নুরজামাল,ফাইজু মিয়াগং কয়লা পাচাঁর করে জয়বাংলা বাজারের কাঠের ব্রিজের পাশের ডিপুতে মজুত করে বিক্রি করে। কিন্তু এসব অবৈধ কয়লা ও চাঁদা উত্তোলনকারী সোর্সদের আটকের জন্য নেওয়া হয়না কোন পদক্ষেপ। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সোর্স পরিচয়ধারীরা কয়লার বস্তার ভিতরে করে ভারত থেকে অবাধে আনছে মদ, গাঁজা ও ইয়াবাসহ নানান মাদকদ্রব্য। আর এই চোরাচালান করতে গিয়ে চোরাই কয়লার গুহায় মাটি চাপা পড়ে ও যাদুকাটা নদীতে ডুবে গত ১০বছরে স্কুলছাত্রসহ শতাধিক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
জানাগেছে- প্রায় ৩বছর আগে সুনামগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে তাহিরপুর থানার সাবেক ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার সীমান্ত এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে চোরাই কয়লা ও মাদকসহ সোর্স পরিচয়ধারী ও অর্ধশতাধিক চোরাকারবারীকে গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়ে ছিলেন। কিন্তু তারা অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার পর সোর্স ও চোরাকারবারীরা জামিনে এসে তাদের গডফাদার তোতলাকে নিয়ে সিন্ডিকেড তৈরি করে গত ২বছরের বেশি সময় ধরে পার্টনারশীপের কয়লা ও মাদকের ব্যবসা করে হয়েগেছে কোটিপতি। এছাড়াও বর্তমানে উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তে সোর্স পরিচয়ধারী বায়েজিদ মিয়া,জসিম মিয়াগং, চাঁনপুর সীমান্তে আবু বক্কর,আলমগীর,রফিকুল,শহিদ মিয়া,জামাল মিয়াগং, চারাগাঁও সীমান্তে রফ মিয়া,আইনাল মিয়া,সাইফুল মিয়া,আনোয়ার হোসেন বাবলু,শরাফত আলী,শামসুল মিয়াগং, বীরেন্দ্রনগর সীমান্তে লেংড়া জামাল,হযরত আলী ও নেকবর আলীগং অবাধে কয়লা,পাথর,চিনি,সুপারী,কাঠ,বিড়ি,গরু,ছাগল ও মাদকদ্রব্যসহ কসমেটিকস পাচাঁর করার পর সাংবাদিক,পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে প্রতিদিন লাখলাখ টাকা চাঁদাবাজি করলেও দেখার কেউ নাই।
এব্যাপারে উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বর্তমান মেম্মার কফিল উদ্দিন বলেন- গত ২বছর যাবত সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কয়লা ও গরুসহ মাদকদ্রব্য ওপেন পাচাঁর করা হচ্ছে। আমি এসব অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করেছি বলে, চোরাকারবারীরা প্রাণনাসের হুমকি দিয়েছে। এজন্য থানা সাধারণ ডায়রি করেছি। সীমান্তের লাকমা গ্রামের সোর্স পরিচয়ধারী হোসেন আলী বলেন- আমি কালাম মিয়ার নির্দেশে ভারত থেকে চুরি করে আনা কয়লার বস্তার হিসাব রাখি। পরে বিজিরি নামে কালাম আর পুলিশের নামে রতন ও কামরুল চাঁদা তুলে।
এব্যাপারে তাহিরপুর থানার ওসি নাজিম উদ্দিন বলেন- কেউ পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে চাঁদা উত্তোলন করলে তাকে গ্রেফতারের জন্য সীমান্তের টেকেরঘাট পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের টেকেরঘাট কোম্পানীর কমান্ডার আনোয়ার হোসেন বলেন- পাচারকৃত চোরাই কয়লা থেকে বিজিবির নামে কেউ চাঁদা নেয় কিনা তা খোঁজ নিয়ে দেখব, তবে কয়লা চোরাচালান বন্ধের জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.