স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁ : বরেন্দ্র অঞ্চলের নেতা সাধন চন্দ্র মজুমদার। তাঁকে বরেন্দ্র'র গাজি বলেন অনেকে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-১ আসনে চমক ছিলেন তিনি। দলের একক প্রার্থী ছিলে।
এবারো সেরকমই অবস্থা। বরং মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁকে নিয়ে গর্ব করেন এলাকাবাসী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পর সাধন চন্দ্র মজুমদার নওগাঁয় হয়ে উঠেছেন বটবৃক্ষের মত। মন্ত্রণালয় সামলানো, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন ও তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনে সমানভাবে সফল সাধন চন্দ্র মজামদার। এ যেন অসাধ্যকে সাধন করেছেন খাদ্যমন্ত্রী।
(মন্ত্রী বলেন- ‘ভালো কাজের সমালোচনা থাকে। কিন্তু অনেকেই অপপ্রচার করে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীরা অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব মেনে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা নিয়ে রাজনীতির মাঠে আছি। জনগনই আমার শক্তি ও প্রেরণা। জনগণকে আমি ভালোবাসি। এলাকাবাসীও আমাকে ভালোবাসে। তাই কোন ষড়যন্ত্রই আমাকে পরাস্ত করতে পারেনি।’)
বর্তমান সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। আগামী নির্বাচন নিয়ে বেশ সাবধানেই চলছেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন এবারও সাধনকে দেওয়া হবে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাও তেমন নেই। তিন উপজেলায় দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা ও বিভক্তি নেই। এসব কারণে দলীয়ভাবে খাদ্যমন্ত্রী ফুরফুরে মেজাজে। তবে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে লড়াই হবে বলছেন ভোটাররা। এ জন্য নির্বাচনের প্রায় এক বছর আগে থেকেই মাঠে আওয়ামী লীগের সমর্থক বাড়াতে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন এই নেতা।
নির্বাচনী সমীক্ষায় জানা যায়, ১৯৯৬ ও ২০০১ সাল ছাড়া আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। এ দুবার ডা. ছালেক চৌধুরীর বিজয়ের মধ্য দিয়ে আসনটি কবজা করেছিল বিএনপি। ২০০৮ সালে বিপুল ভোটে জিতে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের প্রিয় অনুসারী ছিলেন।
২০০৮ সালে ছালেক চৌধুরীর পরাজয়ের পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি। পরে বিভক্তির কারণে দলটির ঐক্য দিন দিন ভঙ্গুর দশায় পতিত হয়েছে। কিছুদিন রাজনীতির মাঠ থেকে আড়ালে ছিলেন ছালেক চৌধুরী। এ সময় বিএনপির হাল ধরেছিলেন নিয়ামতপুর উপজেলার ভাবিচা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান। গত নির্বাচনে ছালেক চৌধুরীকে মনোনয়ন দিলেও নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে প্রার্থী পরিবর্তন করে মোস্তাফিজুর রহমানকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। কিন্তু আশানুরুপ ফল আনতে পারেনি।
সাপাহার-পোরশা ও নিয়ামতপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন- মন্ত্রণালয়ের কাজের পাশাপাশি মেয়াদের শুরু থেকেই এলাকায় বেশি সময় দিয়ে যাচ্ছেন সাধন মজুমদার। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করছেন। এছাড়া সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়ন ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর মন্ত্রীর দূরদর্শিতার কারণে তিনি এ আসনে আবারও ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করবেন বলে এলাকাবাসীর ধারণা। তা ছাড়া, সাংগঠনিকভাবে এখানে আওয়ামী লীগ খুব শক্তিশালী।
কথা হয় সাপাহার উপজেলার গোডাউন পাড়া মহল্লার সাধারণ বাসিন্দা মিজানূর রহমান, নিয়ামতপুর সদরের বাসিন্দা কলম সরদার, উয়াকুব আলী, পোরশা উপজেলার সরাইগাছী এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ও নীতপুরের সাধারণ ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের সাথে। তাঁরা জানান, নোংরা রাজনীতি করেন না সাধন মজুমদার। এলাকায় চাঁদাবাজী নেই। ছাত্রলীগ, যুবলীগ এমনকি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিদের কোথাও নগ্ন হস্তক্ষেপ নাই। সাধন তীলে-তীলে উন্নয়ন করে, ভালোবেসে মানুষের মনজয় করেছেন। তবে অনেকে তাঁর সমালোচনাও করেন। কিন্তু উন্নয়নের দিক দিয়ে সাধনই সেরা উপহার দিয়েছেন এলাকায় বলে তাদের মত। এছাড়া সবসময় এলাকায় ঘুরে-ঘুরে খোঁজ খবর রাখেন। কেউ মারা গেলে কিংবা বিপদে পড়লে ছুটে আসেন সাধন মজুমদার ।
বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সু ব্যবস্থা ও করোনাকালে মানুষের জন্য তিনি খাদ্য, চিকিৎসা ও সহযোগিতা দিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। দেশে তিনিই প্রথম ব্যক্তি উদ্যোগে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট বসিয়েছিলেন। সাপাহার-পোরশা ও নিয়ামতপুরে এই সেবা এখনও চালু আছে। ঠাঁ-ঠাঁ বরেন্দ্র এলাকায় পানির তীব্র সংকট ছিলো। পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে সেই সংকট নিরসন করেছেন। এখন তিনি শুধু আওয়ামী লীগের নয়, সব মানুষের নেতা হয়ে উঠেছেন।
মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার নব্য আওয়ামী লীগার নন। নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার শিবপুর গ্রামে জন্ম। ১৯৬৭ সাল থেকে ছাত্রলীগে ছিলেন। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সব আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তার দক্ষ নেতৃত্বে ২০২২ সালের ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে ২০ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী দিতে সক্ষম হয় এবং সবগুলোতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক পদ ছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও তিন দফায় এমপি নির্বাচিত হন। সবশেষ ২০১৯ সালে পূর্ণ মন্ত্রীর পদে আসীন হন। এতো কিছু অর্জনের শক্ত খুঁটি হিসেবে তিনি মানুষের ভালোবাসা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে উল্লেখ করেন।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় দল। নেতা অনেক। স্থানীয় রাজনীতি ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অনেকেই মনোনয়ন চাইতেই পারেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের পাশাপাশি নেতারা কর্মিরাও আমাকে ভালোবেসেন, আমার উপর আস্থা রেখে কেউ প্রার্থী হতে চাননা। এটাও আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি আজীবন মানুষের কল্যানে কাজ করতে চাই।’
উল্লেখ্য, গত মার্চে পোরশা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গিয়ে তিনি অসুস্থ হন। দেশে ও বিদেশে চিকিৎসা হয় তাঁর। সে সময় নিয়ামতপুর,পোরশা ও সাপাহারে প্রতিটি মসজিদ মন্দিরে দোয়া ও প্রার্থনা হয়েছে।তাঁর প্রতি জনগণের অকুন্ঠ ভালোবাসা প্রমাণ করে তিনি জনগণের নেতা জনগণের মনে স্থান করে নিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন ‘সর্বদা আমি ভালো কাজ আর উন্নয়ন করার চেষ্টা করি ও প্রতিশ্রতি পূরণে বিশ্বাসী। ভলো কাজেরও সমালোচনা থাকে। কিন্তু অনেকেই অপপ্রচার করে। ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায়। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীরা অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। কিন্তু লাভ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আর সাধারণ মানুষ আমার শক্তি ও প্রেরনা। মানুষকে আমি ভালোবাসি। এলাকাবাসীও আমাকে ভালোবাসে। তাই কোন ষড়যন্ত্রই আমাকে পরাস্ত করতে পারেনি।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন