মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ^ম্ভরপুর ও মধ্যনগর উপজেলা সীমান্তে জমজমাট হয়ে উঠেছে চোরাচালান বাণিজ্য। আর এই চোরাচালানকে কেন্দ্র করে বিজিবি, পুলিশ ও সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে চলছে চাঁদাবাজি। আর এই চাঁদার টাকা বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করা হয় বলে খবর পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- অবৈধ ভাবে ভারত থেকে সুপারী, কাঠ ও গরুসহ মাদকদ্রব্য পাচাঁর করার সময় ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে আহত হয়েছে জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের পেকপাড়া গ্রামের ওয়াজিদ মিয়ার ছেলে মাসুক মিয়া (৪০), তার ছোট ভাই ঈমান আলী (৩৫), একই গ্রামের আজাদ মিয়ার ছেলে নয়ন মিয়া (৩২) ও পাশর্^বর্তী ঝুমগাঁও গ্রামের আজিজ মিয়ার ছেলে সুমন মিয়া (৩০)।
আজ মঙ্গলবার (৩১ মে) সকালে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট পাঠানো হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়- প্রতিদিনের মতো গতকাল সোমবার (৩০ মে) সন্ধ্যার পর থেকে জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার ঝুমগাঁও সীমান্ত দিয়ে মাসুক মিয়া, ঈমান আলী, নয়ন মিয়া, সুমন মিয়া ও তাহিরপুর উপজেলার লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী, পুরান লাউড়, শাহ-আরেফিনের মোকাম, মনাইপাড় এলাকা দিয়ে আমিনুল ইসলাম, জজ মিয়া, রফিক মিয়া, এরশাদ মিয়া, নাজিম মিয়া, শহিদ মিয়া, চাঁনপুর সীমান্তের রাজাই, নয়াছড়া, বারেকটিলা এলাকা দিয়ে আবু বক্কর, আলমগীর, সাহিবুর রহমান, বুটকুন মিয়া, রফিকুল ইসলাম, টেকেরঘাট সীমান্তের রজনীলাইন, বরুঙ্গাছড়া, বড়ছড়া, ভাঙারঘাট, খনিপ্রকল্প এলাকা দিয়ে ইসাক মিয়া, কামাল মিয়া, শরীফ মহলদার, মানিক মহলদার, বালিয়াঘাট সীমান্তের লাকমা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে ইয়াবা কালাম মিয়া, কাসেম মিয়া, জিয়াউর রহমান জিয়া, বীরেন্দ্রনগর সীমান্তের জঙ্গলবাড়ি, রঙ্গাছড়া ও সুন্দরবন এলাকা দিয়ে লেংড়া জামাল, মস্তো মিয়া ও চারাগাঁও সীমান্তের এলসি পয়েন্ট, কলাগাঁও, বাঁশতলা তেতুলগাছ ও লালঘাট এলাকা দিয়ে খোকন মিয়া, রমজান মিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব, বাবুল মিয়া, হারুন মিয়া, মানিক মিয়া, জামির আলী, আমির আলী, হাদিস মিয়া, আনোয়ার মিয়া, কদ্দুস মিয়াগং পৃথক ভাবে ভারত থেকে সুপারী, কাঠ, কয়লা, পাথর, মদ, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা, গরু, ঘোড়া, নাসিরউদ্দিন বিড়ি, মোটর সাইকেল, চাল ও অস্ত্র পাচাঁর শুরু করে।
কিন্তু রাত অনুমান ৮টার সময় চোরাচালানের মাধ্যমে পাচাঁরকৃত সুপারী ও কাঠের টাকার ভাগভাটোয়ারা নিয়ে ভারতীয় খাসিয়ারা দোয়ারাবাজারের ৪ চোরাকারবারীকে গুলি করে। এঘটনা তারা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে সারারাত নিজ বাড়িতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু গুলিবিদ্ধদের শারীরিক অবনতি হওয়ায় আজ মঙ্গলবার সকালে সিলেট পাঠানো হয়েছে। এদিকে তাহিরপুর সীমান্তের চোরাকারবারীরা নিরাপদে তাদের মালামাল পাচাঁর করেছে। এজন্য সাংবাদিকদের নাম ভাংগিয়ে ১ নৌকা অবৈধ মালামাল থেকে হাবিব সারোয়ার আজাদ মিয়া ২হাজার টাকা, আব্দুর রাজ্জাক ১হাজার ৫শ টাকা চাঁদা নেওয়াসহ সোর্স শফিকুল ইসলাম ভৈরব, কালাম মিয়া, ইসাক মিয়া, জিয়াউর রহমান জিয়া ও জজ মিয়াগং থানার নাম ভাংগিয়ে ১ মে.টন চোরাই কয়লা থেকে ১হাজার টাকা, বিজিবি ক্যাম্পের নামে ২হাজার টাকা চাঁদা নেওয়াসহ বিভিন্ন মালামাল থেকে মোটা অংকের চাঁদা উত্তোলন করছে। এসব চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে থানায় রয়েছে একাধিক মামলা।
এব্যাপারে দোয়ারাবাজার থানার ওসি দেবদুলাল ধর বলেন- ঝুমগাঁও সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে ৪ বাংলাদেশী আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ করেনি।
সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্নেল মোঃ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন- ভারত থেকে কাঠ আনতে গিয়ে গুলিবৃদ্ধ হয়ে যারা আহত হয়েছে, তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট পাঠানো হয়েছে। এব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।