নওগাঁর পত্নীতলায় ইউপি নির্বাচনে দুই ইউপিতে নৌকার প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন-বিক্ষোভ

নওগাঁর পত্নীতলায় ইউপি নির্বাচনে দুই ইউপিতে নৌকার প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন-বিক্ষোভ
আবু রায়হান রাসেল, নওগাঁ:
নওগাঁর পত্নীতলায় উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও মাটিন্দর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী (নৌকা প্রতীক) পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে দলটির একাংশ। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলার নজিপুর পৌরসভার জিরোপয়েন্ট এলাকায় সড়কের পৃথক ব্যানারে পত্নীতলায় সদর ও ও মাটিন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মী এই কর্মসূচি পালন করে।
 
পত্নীতলায় সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ও মাটিন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদের পক্ষে তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা এই কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পত্নীতলায় সদর ও মাটিন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দুই শতাধিক মানুষ অংশ নেন। পত্নীতলায় ও মাটিন্দর ইউনিয়নবাসী ব্যানারে এসব কর্মসূচি পালিত হয়।
নওগাঁর পত্নীতলায় ইউপি নির্বাচনে দুই ইউপিতে নৌকার প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মানববন্ধন-বিক্ষোভ
পত্নীতলায় ইউনিয়নবাসী ব্যানারে নজিপুর জিরোপয়েন্টের মহাদেবপুর-নজিপুর সড়কের পূর্বপাশে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পত্নীতলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের, সদস্য আবু তালেক, আব্দুস সালাম, লাল মোহাম্মদ প্রমুখ।
 
মনোনয়নবঞ্চিত পত্নীতলায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে পতœীতলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। দল-সংগঠন চালাতে গিয়ে তিনি নানাভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এবার ইউপি নির্বাচনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন ও তিনিসহ সাতজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোশাররফ হোসেন চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মোশাররফ চৌধুরী ২০১৬ সালে দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তখন তিনি তাঁর জীবন বৃত্তান্তে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। সেই হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী ছিলেন। মোশাররফ চৌধুরী মনোনয়ন পাওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
 
আবুল কাশেমের অভিযোগ প্রসঙ্গে মোশাররফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘পারিবারিকভাবেই আমরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ছাত্রজীবনে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। তবে আওয়ামী লীগের কোনো পদে কখনোও ছিলাম না। ২০২১ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদ পেয়েছি। গতবার দলের কোনো পদে ছিলাম না। যেহেতু দলের কোনো পদে ছিলাম না, তাই আমাকে বিদ্রোহী প্রার্থী বলা যায় না। তাঁদের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিতরা হীন স্বার্থে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ 
 
অন্যদিকে একই সময়ে নজিপুর জিরোপয়েন্টের মহাদেপুর-নজিপুর সড়কের পশ্চিমপাশে অনুষ্ঠিত ব্যানারে মাটিন্দর ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে আরেকটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্যদের মধ্যে মাটিন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ, সহ-সভাপতি ফাহিম, যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, মাটিন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
 
মনোনয়নবঞ্চিত সুলতান মাহমুদ বলেন, তিনিসহ সাতজন এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তাঁদের সবচেয়ে বিতর্কিত যে প্রার্থী তাঁকেই দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম রুবেল। গতবার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচন করেছিলেন। অথচ দলের শীর্ষ নেতারা একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছেন, যাঁরা গতবার দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন তাঁদেরকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে মাটিন্দর ইউপি নির্বাচনে দলের প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্ত মানা হয়নি।
 
সুলতান মাহমুদের অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাটিন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গী আলম বলেন, ‘আমি ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। পরবর্তীতে যুবলীগের রাজনীতি করেছি। গতবার স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলাম। এবার জনপ্রিয়তা দেখেই দল আমার ওপর ভরসা করে মনোনয়ন দিয়েছে। মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার কারণে কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ 
পত্নীতলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, ‘যাঁরা যাঁরা মনোনয়ন চেয়েছিলেন সবার নামই দলের স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়েছিল। এখন দলের মনোনয়ন বোর্ড দিয়েছেন তাঁদেরকেই মেনে নিতে হবে। আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কেউ এর বিরোধিতা করলে সেটা দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের শামিল হবে। আমি মনে করি যোগ্য লোকদেরই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget