মোঃ সাইফুল ইসলাম, বাগমারা(রাজশাহী) : বাগমারায় কেউ কোন দিন ভাবতেই পারেনি প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল মাঠে আসবে হেলিকপ্টার। হেলিকপ্টার আসলেও তাকে নেই কোন গুরুত্বপর্ণ ব্যক্তি। হচ্ছে না কোন বিয়েরও অনুষ্ঠান। সকাল থেকেই সেই হেলিকপ্টার দেখতে স্কুল মাঠে জড়ো হতে থাকে গ্রামের সহজ সরল নিরীহ মানুষ। ছোট থেকে আবাল বৃদ্ধ সবার লক্ষ্য চড়তে না পারলেও কাছে গিয়ে একটি বার হেলিকপ্টার দেখতে পাবো। সেই আসা নিয়ে স্কুল মাঠের চারপাশে ভিড় জমিয়েছে হাজারো মানুষ।
আসল কথা হলো প্রত্যন্ত গ্রামের স্কুল মাঠে যে হেলিকপ্টার এসে পড়েছে সেটা হচ্ছে আবুল হোসেন আকাশ নামে এক ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ীকে তার ব্যবসায়ীক সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরুপ কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হলো সংবর্ধনা জানাতে।
আবুল হোসেন আকাশ মূলত আরএফএল কোম্পানীর ভিশন গ্রুপের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ডিলার। ভিশন গ্রুপের পণ্য বিক্রয়ে সমগ্র দেশে দ্বিতীয় বারের মতো প্রথম স্থান অর্জন করেন। প্রথম স্থান অর্জন করায় ভিশনের পক্ষ থেকে কক্সবাজারের রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এন্ড স্পাতে হেলিকপ্টারে করে নিয়ে যাওয়া হলো।
শুক্রবার সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে আবুল হোসেন আকাশ এর জন্ম স্থান রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম বিলবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যান্ড করে হেলিকপ্টরটি। গ্রামটিতে যাতায়াত করার জন্য নেই তেমন কোন ভালো রাস্তা। তারপরও নিজের গ্রামকে দেশবাসীর কাছে উপস্থাপন করার পাশাপাশি নাড়ির যে বন্ধন সেটা প্রকাশ করা হচ্ছে। গ্রামের যে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা জীবন শুরু করেছিলেন সেই স্কুলেই নামালো তাকে নিতে আসা হেলিকপ্টারটি।
আবুল হোসেন আকাশ বিলবাড়ি গ্রামের তফিজ উদ্দীনের ছেলে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করেছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং পরিচালনা করেছেন। লেখাপড়া শেষ করে সোজা গ্রামেই চলে আসেন। নিজের পায়ে দাঁড়াতে ২০১৫ সালে স্থানীয় মচমইল বেলতলা মোড়ে শুরু করেন আকাশ ইলেকট্রনিক্স নামে একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবসা। সেই থেকে শুরু হয় তার পথচলা। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
২০১৯ সালে আকাশ ইলেকট্রনিক্সের অংগ সহযোগি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুবা ইলেকট্রনিক্স নামে শুরু করে আরেকটি ইলেকট্রনিক্স ব্যবসা। সেটাতে নেয়া হয় আরএফএল কোম্পানীর ভিশন গ্রুপের ডিলারশীপ। প্রতিষ্ঠাকালে সমগ্র দেশে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন আবুল হোসেন আকাশ এর তুবা ইলেকট্রনিক্স।
দ্বিতীয় বছরে প্রতিষ্ঠানটি ভিশন গ্রুপে সারা দেশে প্রথম স্থান অর্জন করেন। প্রথম স্থান অর্জন করায় সৈয়দপুর-মচমইল রাখাল দাশ বিদ্যানিকেতন থেকে হেলিকপ্টারে করে সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয় সংবর্ধনা প্রদান করতে। চলতি বছর আবারও ভিশন গ্রুপে দেশ সেরা হয় তুবা ইলেকট্রনিক্স। এবার আবুল হোসেন আকাশকে কক্সবাজার নিয়ে যাওয়া হল সংবর্ধনা জানাতে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে ধিরে ধিরে মাত্র কয়েক বছরে গড়ে তুলেছেন বৃহৎ ব্যবসা। তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আত্মকর্মসংস্থান হয়েছে ২০ জনের।
বিলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা প্রভাষক আব্দুল মমিন বলেন, আবুল হোসেন আকাশ সত্যিই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। সততা আর একনিষ্ঠতা নিয়ে ব্যবসা করলে সফলতা আসবেই। প্রত্যন্ত গ্রামে মাত্র কয়েক বছরে পরপর দুই বছর প্রথম স্থান অর্জন করে। সেই সাথে হেলিকপ্টারে নিয়ে গিয়ে তাকে দেয়া হচ্ছে সংবর্ধনা। এটা শুধু আবুল হোসেন আকাশের একার অর্জন না এটা বাগমারাবাসীর অর্জন। বাগমারাবাসীর কারনে তিনি প্রথম হতে পেরেছেন।
আবুল হোসেন আকাশ জানান, তিনি ব্যবসা থেকে অর্জিত মুনাফার একটা অংশ এলাকাবাসী সহ মসজিদ, মাদ্রাসা, এলাকার উন্নয়ন এবং গরীব,দুস্থ মানুষের কল্যাণে ব্যয় করেন। সেই সাথে শুধু নিজের জন্য না অন্যের যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সৃষ্টি করা যায় সেটাও তার লক্ষ্য। তিনি আরো জানান, এটা তার একার অর্জন না। এটা সকলের অর্জন। লোকজনের আন্তরিক সহযোগিতায় তিনি প্রথম স্থান অর্জন করতে পেরেছেন। আগামীতে তাঁর ব্যবসায়ের পরিধি আরো বৃদ্ধি সহ অনেক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় সে জন্য সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.