তৌফিক তাপস, নওগাঁ : উত্তরাঞ্চলের মৎস্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে এবার দেশীয় প্রজাতি মাছের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে শুঁটকি তৈরির ভরা মৌসুমেও শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম স্থবিরতা।
মৌসুমের শুরুতেই শুঁটকি তৈরির জন্য সাজ-সরাঞ্জাম প্রস্তুত করা হলেও মাছের অভাবে সেগুলো এখন মাছ শূন্য ফাঁকা পড়ে রয়েছে। অন্যান্য বারের মত এবারে এলাকায় তেমন বন্যা না হওয়ায় নদী ও খাল বিলের পানি আগাম সুখিয়ে যাওয়ায় যে সময় দেশী মাছে বাজার সয়লাব থাকার কথা সেই সময় দেখা মিলছে না দেশী মাছের। ফলে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা।
জানা যায়, উত্তর জনপদের মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত স্থান সমুহের মধ্যে আত্রাইও একটি বিখ্যাত স্থান। প্রতিদিন শতশত টন মাছ আত্রাই থেকে রেল, সড়ক ও নৌ পথে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হয়। সে অনুযায়ী শুঁটকি উৎপাদনেও আত্রাইয়ের যথেষ্ট প্রসিদ্ধি রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের রংপুর, নিলফামারী, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজুপরসহ দেশের প্রায় ১৫/২০ জেলাতে বাজারজাত করা হয় আত্রাইয়ে শুঁটকি মাছ। আর এ মাছের শুঁটকি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় শতাধিক পরিবার। উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রাম শুঁটকি তৈরীতে বিশেষভাবে খ্যাত। এ গ্রামের শতাধিক শুঁটকি ব্যবসায়ী এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত। শুধু বর্ষা মৌসুমে শুঁটকি তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করে তারা পরিবারের সারা বছরের ভরণপোষণ নিশ্চিত করেন। এবারে বন্যা কম হওয়ায় নদী ও খাল-বিল আগাম সুখিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে দেশীয় প্রজাতি মাছের সংকট। ফলে বাজারে মাছ কম কিন্তু মূল্য বেশি হওয়ায় শুঁটকি তৈরিতে খরচ অনেব বেড়ে যাওয়ায় শুঁটকি ব্যাবসায়ীদের গুণতে হচ্ছে লোকসান।
ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী মঞ্জুর মোল্লা, উসমান শেখ, আব্দুস ছাত্তার সরদার, মোজাহার মোল্লা, নাফিকুল সরদার বলেন, শুটকি ব্যবসার সাথে আমরা দীর্ঘদিন থেকে সম্পৃক্ত। শুঁটকি তৈরিতে অর্থ খরচের সাথে সাথে যথেষ্ট শ্রম ব্যয় হয়। সর্বপোরি রৌদ্র বৃষ্টি ও মাছের দুর্গন্ধ সবকিছুকে উপেক্ষা করে পরিবার পরিজন নিয়ে এ পেশা চালিয়ে আসছি। পুঁটি, খোলসানী, চাঁন্দা, রাইখর, সাটিসহ বিভিন্ন জাতের দেশি মাছের শুঁটকি আমরা তৈরি করি। এর মধ্যে বিশেষ করে পুঁটি ও সাটি মাছের শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এবারে মাছ কম কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় আমাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। অনেকে শুঁটতি তৈরির সাজসরাঞ্জাম তৈরি করলেও মাছ অভাবে সেগুলো পড়ে রয়েছে। এবারে ব্যবসা মন্দা হওয়ায় সারা বছর পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা কিভাবে চলবো তা নিয়ে আমরা চরম উদ্বিগ্ন রয়েছি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন