মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জ জেলা তাহিরপুর সীমান্তে সোর্সরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা উপজেলার লাউড়গড়, চাঁনপুর, টেকেরঘাট, বালিয়াঘাট, বীরেন্দ্রনগর ও চারাগাঁও সীমান্ত এলাকায় সিন্ডিকেড তৈরি করে প্রতিদিন ভারত থেকে লক্ষলক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কয়লা, চাল ও পাথর পাচাঁর করাসহ মদ, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা ও অস্ত্র পাচাঁর করছে। পরে পাচাঁরকৃত অবৈধ মালামাল থেকে সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে করছে চাঁদা উত্তোলন। সোর্সরা দীর্ঘদিন যাবত সীমান্ত এলাকায় ওপেন চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করলেও তাদেরকে কখনোই গ্রেফতার করা হয়না।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়- গতকাল মঙ্গলবার (৩ আগষ্ট) সন্ধ্যায় টেকেরঘাট সীমান্তের একাধিক পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও কয়লা পাচাঁর করে সোর্স ইসাক মিয়া ও কামাল মিয়া। এই খবর পেয়ে বিজিবি অভিযান চালিয়ে বুরুঙ্গাছড়া এলাকা থেকে ভারতীয় ১০ বোতল অফিসার চয়েজ মদ পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। অপরদিকে লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী দিয়ে সোর্স আমিনুল মিয়া, জজ মিয়া, শহিদ মিয়া, নুরু মিয়া, রফিক মিয়া ও জসিম মিয়াগং ভারত থেকে কয়লা, পাথর ও বালি পাচাঁরের সময় ১শ ঘনফুট বালিসহ ২টি স্টিলবড়ি ইঞ্চিনের নৌকা আটক করে। যার সিজার মূল্য ১৪লক্ষ ৮২হাজার টাকা। কিন্তু সোর্সদের গ্রেফতার করা হয়নি।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের সাবেক বিজিবি অধিনায়ক মাকসুদুল আলমের অলিখিত সোর্সরা তাহিরপুর সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত দাপটের সাথে চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করছে। তবে মাকসুদুল আলম সম্প্রতি অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ার পর বর্তমান বিজিবি অধিনায়ক তসলিম এহসান সুনামগঞ্জে যোগদান করে তাহিরপুর সীমান্তে নজরদারী বৃদ্ধি করার কারণে সোর্সরা কোনটাসা হয়ে পড়েছে। কিন্তু বন্ধ হয়নি চোরাচালান ও চাঁদাবাজি। অথচ এই উপজেলা সীমান্তে ৬টি বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে। তার মধ্যে লাউড়গড় ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা বিজিবি সদস্যরা চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু বালিয়াঘাট ও চারাগাঁও ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা বিজিবি সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে লক্ষলক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে কয়লা, চাল, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, বরশির ছিপ ও কাঠ পাচাঁর করছে সোর্স ইয়াবা কালাম, জিয়াউর রহমান জিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব, রমজান মিয়া, মানিক মিয়া, খোকন মিয়া, শহিদুল্লাহ, বাবুল মিয়া, কদ্দুস মিয়া, আনোয়ার মিয়া, জসিম মিয়া, লেংড়া জামালগং। কিন্তু এসব সোর্স পরিচয়ধারী চোরাচালানীদেরকে গ্রেফতার না করে বালিয়াঘাট ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা লালঘাট গ্রামের পাকা রাস্তার মাথায় অবস্থিত সোর্স কালামের বাড়ির সামনে চেয়ার নিয়ে বসে থেকে লালঘাট ও লাকমা এলাকা দিয়ে কয়লা, কাঠ, বরশির ছিপ ও মাদকদ্রব্য পাচাঁরের জন্য সোর্স কালাম ও পাটলাই নদীতে চাঁদাবাজির জন্য সোর্স জিয়াউর রহমান জিয়াকে সহযোগেীতা করছে। আর চারাগাঁও ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় টহল দিয়ে চলে যাওয়ার পর বাঁশতলা তেতুল গাছ, লালঘাট ও জঙ্গলবাড়ি এলাকা দিয়ে ভারত থেকে ওপেন কয়লা, চাল ও মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে নৌকায় বোঝাই করা হয় বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক তসলিম এহসান সাংবাদিকদের বলেন- জব্দকৃত মদ ও নৌকা শুল্ক কার্যালয়ে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন