তৌফিক তাপস, নওগাঁ : কম পরিশ্রমে বেশি লাভজনক হওয়ায় নওগাঁয় দিনদিন পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ড্রাগন ফল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ৭ বছরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের মধ্যে ড্রাগন চারা সরবরাহ ও পরামর্শ দেওয়ায় প্রায় ২শ’ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন বাগান গড়ে উঠেছে। নওগাঁর চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। আগামিতে ড্রাগন ফল চাষ ও কৃষি পরামর্শ অব্যাহত থাকলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, বিদেশী ফল ড্রাগন। ২০০৭ সালে দেশে প্রথম ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়। পরের বছর সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতায় নওগাঁয় কৃষকদের উদ্বুত্ত করণসহ ড্রাগন চাষ শুরু করা হয়। প্রথমে দু’একজন কৃষক ড্রাগন চাষ শুরু করলেও ২০১৩ সাল থেকে জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। পুষ্টিগুণে ভরপুর ও অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ও চারা সরবরাহ করায় ২০১৭ সাল থেকে ব্যাপক পরিসরে ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে। বর্তমানে নওগাঁয় বছরে প্রায় ২৫ হাজার মেট্রিকটন ড্রাগন উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি কেজি বড় আকারের ফল ৪শ’ টাকা, মাঝারি ৩শ’ টাকা ও ছোট ২শ’ টাকা থেকে আড়াইশ’ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। এই ফল নগদ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। জেলায় নতুন নতুন ড্রাগন ফল বাগান গড়ে উঠায় অনেকের কর্মসংস্থাণ হয়েছে। বাগানের পরিচর্চা করে অনেক বেকার নারী-পুরুষের পরিবারের খরচের চাহিদা মিটছে।
বদলগাছী হর্টিকালচার সেন্টারের জ্যেষ্ঠ উদ্যান তত্ত্ববিধ আ. ন. ম আনোয়ারুল হাসান জানান, সরকারের নির্দেশ রয়েছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ড্রাগন ফল বেশি করে চাষ করতে। কম শ্রমে অর্থকরি ফসল ড্রগন চাষের লক্ষ্যে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে প্রতি অর্থ বছরে প্রায় দুই হাজার ড্রাগন চারা উৎপাদন করে এই সেন্টার থেকে বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি কৃষি উদ্যোক্তার মধ্যে ড্রাগন প্রদর্শণী খেত তৈরী করা হয়েছে। অনেক কৃষক ড্রাগন চাষে এগিয়ে আসেন সেই লক্ষ্যে সরকার চলতি অর্থ বছরে প্রতি ড্রাগন চারার দাম ১০ টাকা কমিয়ে ৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে।
নওগাঁর পোরশা উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের উদ্যোক্তা আব্দুর রহমান শাহ্ চৌধুরী জানান, উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের কাটপুকুর এলাকায় ৫০ হাজার ড্রাগন চারা সমন্বয়ে ২৪ বিঘা জমিতে ২ বছর আগে ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তোলা হয়। ওই বাগান গড়ে তুলতে ৪০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ হলেও বছর ঘুরতেই ফল উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে সপ্তাহে ১ লাখ টাকা আয় হয়। নওগাঁসহ রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
পোরশা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান, আব্দুর রহমান শাহ্ চৌধুরী এই ড্রগন বাগানটি তৈরী করতে কৃষি বিভাগ থেকে সকল ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়। উপজেলায় অরো অনেক কৃষি উদ্যোক্তা বেশ কিছু ছোট-বড় ড্রাগন বাগান তৈরী করেছেন। তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেওয়া হয় যাতে পোরশায় বেশি করে এই অর্থকরি ফল চাষে কৃষকরা এগিয়ে আসেন।
পোরশা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, কম পানি চাহিদা সম্পন্ন ড্রাগন গাছ থেকে বছরে ৭ মাস অর্থাৎ মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ফল সংগ্রহ করা যায়। রোগবালাই ও পোকার কম আক্রমণ হওয়ায় সঠিক পরিচর্যার করলে একটি গাছ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা সম্ভব।
নওগাঁ সদর উপজেলার শিক্ষক ও সফল কৃষি উদ্যোক্তা মাহবুবুর রহমান জানান, গত ৮ বছর আগে থেকে ড্রাগন চাষ করেন। তিনি জেলাসহ নাটোর, বগুড়া, জয়পুরহাটে অনেক ড্রাগন বাগান গড়ে তুলতে পরামর্শ দিয়েছেন। এক বিঘায় ২শ’ পিলার স্থাপন করলে আড়াইশ’ পিলার ৮শ’ থেকে ৯শ’ গাছ লাগানো যেতো। বছরে সেখানে ৩ হাজার কেজি থেকে ৫ হাজার কেজি ফল উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এখন সেই পুরাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে নতুন পদ্ধিতে এক বিঘায় প্রায় ৩ হাজার গাছ লাগানো যাবে। এই পদ্ধতিতে এক বিঘা জমি থেকে প্রায় ৯ হাজার কেজি ফল উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। অর্থাৎ আগের চেয়ে নতুন চাষ পদ্ধিতে ৩ গুণ ড্রাগন ফল উৎপাদন হয়।
সাপাহার গোডাউন পাড়ায় বসবাসরত সফল কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা জানান, এই ফলটি আমদানি নির্ভর। তবে দেশে অনেক কৃষক ড্রগন চাষে ঝুঁকে পরেছে। আগামীতে এটি অব্যাহত থাকলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আগামিতে বিদেশে রপ্তানি সম্ভব।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুল ওয়াদুদ জানান, চলতি বছরে নওগাঁয় প্রায় ২শ’ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করা হয়েছে। ড্রাগন ফল বাগান থেকেই বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় আগামীতে আরো বেশি করে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে কৃষি বিভাগ কাজ করছে।