অনলাইন ডেস্ক : দেশের মাটিতে তিন ফরম্যাটে প্রতিপক্ষকে হারানোর রেকর্ড থাকলেও বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো কোনো পূর্ণাঙ্গ সিরিজ জয়ের রেকর্ড করলো বাংলাদেশ। স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে তিন ফরম্যাটে হারিয়ে সেই রেকর্ডের স্বাদ পেলো টাইগাররা।
গত ৭ বছরে ৭ বার বাংলাদেশ সফরে এসেছে আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ে। দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে রেকর্ডের নানা কীর্তি থাকলেও বিদেশের মাটিতে তিন ফরম্যাটে প্রথমবারের মতো জয়ের রেকর্ড করলো বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট, তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলতে গত ২৮ জুন সফরে যায় টাইগাররা। প্রায় একমাসের লম্বা সফরের সময়টা সুখ স্মৃতি নিয়েই দেশে ফিরবে টাইগাররা।
অঘোষিত ফাইনাল। যে দল জিতবে, তারা টি-টোয়েন্টি সিরিজের ট্রফি হাতে তুলবে। এমন এক ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে ১৯৪ রানের কঠিন এক লক্ষ্য ছুড়ে দিল জিম্বাবুয়ে। টাইগাররা কি পারবে? শেষ ওভারের আগ পর্যন্ত শঙ্কা কাটেনি।
হারারেতে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে শেষ হাসি হেসেছে বাংলাদেশই। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করে পেরিয়ে গেছে ৫ উইকেট আর ৪ বল হাতে রেখে। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে ২-১ ব্যবধানে।
দেশের মাঠে সর্বোচ্চ রান করেও টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সিরিজ জিততে পারেনি জিম্বাবুয়ে। তাদের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে এই সংস্করণে চতুর্থ সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় ছিল দেশের মাটিতে, ২০১৬ সালে ১৬৩ রান পেরিয়ে।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা জিম্বাবুয়েকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন ওয়েসলি মাধেভেরে ও টাডিওয়ানাশে মারুমানি। পাওয়ার প্লেতে দুই জনের ব্যাটে আসে একের পর এক বাউন্ডারি। এক পর্যায় টানা সাত বলে মারেন ছয় চার ও এক ছক্কা।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ভাঙে স্বাগতিকদের শুরুর জুটি। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনকে ক্রস ব্যাটে খেলার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান মারুমানি। ৬ ওভার স্থায়ী ৬৩ রানের জুটিতে তার অবদান দুটি করে ছক্কা ও চারে ২০ বলে ২৭।
জুটি ভাঙলেও স্বস্তি মেলেনি। ক্রিজে গিয়েই চড়াও হন রেজিস চাকাভা। দলে ফেরা নাসুম আহমেদকে ছক্কা মারেন সুইচ হিটে, সাকিব আল হাসানকে পুল করে। পরে সৌম্যকে বোলিংয়ে স্বাগত জানান তিনি আরেকটি রিভার্স শটে ছক্কায়।
নুরুল হাসান সোহানের অসাধারণ কিপিংয়ে একটুর জন্য স্টাম্পড হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যান চাকাভা। পরে নাসুমকে মারেন টানা তিন ছক্কা। দুর্দান্ত এক যৌথ ক্যাচে থামেন জিম্বাবুয়ের কিপার-ব্যাটসম্যান।
সৌম্য সরকারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্লগ সুইপে উড়িয়ে মারেন চাকাভা। সীমানায় বলের দিকে টানা চোখ রেখে তা তালুবন্দী করেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ভারসাম্য হারিয়ে সীমানার ওপারে পড়ে যাওয়ার আগেই বল ছুঁড়ে মারেন পিছন দিকে। কিছুটা দৌড়ে গিয়ে অনায়াসেই তা মুঠোয় জমান শামীম।
৬ ছক্কায় চাকাভা থামেন ২২ বলে ৪৮ রান করে। ভাঙে ৫৯ রানের জুটি। সেই ওভারেই শূন্য রানে সিকান্দার রাজাকে বোল্ড করে দেন সৌম্য।
জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে একটু কমে জিম্বাবুয়ের রানের গতি। ৩১ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর বেশিদূর যেতে পারেননি মাধেভেরে। সাকিবকে রিভার্স সুইপ করে ধরা পড়েন শর্ট থার্ড ম্যানে। তার ৩৬ বলে খেলা ৫৪ রানের ইনিংস গড়া ৬ চারে।
দৃঢ় ভিত কাজে লাগাতে পারেননি ডিওন মায়ার্স। তিন চারে ২১ বলে তিনি করেন ২৩। শেষের দিকে দুই ছক্কা ও তিন চারে ১৫ বলে ৩১ রানের বিস্ফোরক ইনিংসে দলের রান দুইশর কাছে নিয়ে যান রায়ান বার্ল।
বড় রান তাড়ায় শুরুতেই নাঈমকে হারায় বাংলাদেশ। সৌম্য ও সাকিবের ব্যাটে শুরুর ধাক্কা সামাল দিয়ে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। লুক জঙ্গুয়েকে পরপর দুই ছক্কা মেরে সেই ওভারে আবার ছক্কার চেষ্টায় ফিরেন সাকিব। ভাঙে ৩২ বল স্থায়ী ৫২ রানের জুটি। বাঁহাতি অলরাউন্ডার ১৩ বলে করেন ২৫ রান।
বলের গতি কমিয়ে রেখে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বেঁধে রাখার পরিকল্পনা করেন জিম্বাবুয়ের বোলাররা। আগের ম্যাচের মতো এবার গায়ের জোরে ছক্কার চেষ্টায় যাননি সৌম্য ও মাহমুদউল্লাহ। দুই জনে এক-দুই নিয়ে খেলার ফাঁকে গ্যাপ খুঁজে বের করেছেন বাউন্ডারি।
জঙ্গুয়েকে চার মেরে ৪০ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন সৌম্য। ২৮ বলে আসে তার সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর জুটির পঞ্চাশ।
আগের সেরা ৬২ ছাড়িয়ে সৌম্য যেন ভুলে গেলেন পরিকল্পনার থাকা। জঙ্গুয়েকে গায়ের জোরে ছক্কার চেষ্টায় দেন ক্যাচ। ভাঙে ৩৫ বল স্থায়ী ৬৩ রানের জুটি। ৪৯ বলে এক ছক্কা ও নয় চারে ৬৮ রান করে ফিরেন বাঁহাতি ওপেনার।
ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই ছক্কা মারেন আফিফ হোসেন। খানিক পর আরেকটি দারুণ শটে আসে ছক্কা। তবে এরপরেই ফিরেন ওয়েলিংটন মাসাকাজার বলে বোল্ড হয়ে।
প্রথম ১২ বলে ২০ রান মাহমুদউল্লাহ হঠাৎ করেই ভুগতে শুরু করেন টাইমিং পেতে। পঞ্চদশ ওভারে ব্লেসিং মুজারাবানিকে খেলেন টানা চারটি ডট। পরে অবশ্য টেন্ডাই চাতারাকে ওড়ান ছক্কান। মুজারাবানির করা ১৯তম ওভারে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ২৮ বলে তিনি করেন ৩৪ রান।
বাঁকি কাজটুকু শেষ করেন মারকুটে ব্যাটসম্যান শামিম হোসেন পাটোয়ারি। সে ১৫ বলে ঝড়ো গতির ৩১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন বাংলাদেশকে। তার ইনিংসে ছিল ৬টি চারের মার।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন