সাংবাদিকদের ওপর হামলা,মামলা এবং নির্যাতনের ঘটনায় বিএমএসএফের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ

সাংবাদিকদের ওপর হামলা,মামলা এবং নির্যাতনের ঘটনায় বিএমএসএফের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ

ডেস্ক রিপোর্ট,  ঢাকা :  বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) এর ৯ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিগত নয় বছরে বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন, হয়রানি, হামলা, মামলার ঘটনাসমূহ নিয়ে বিএমএসএফ এর তথ্য, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্ববহ একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে সাংবাদিক নির্যাতন রোধকল্পে করনীয় সংক্রান্ত বিষয়ে জরুরি ৫ দফা সুপারিশমালাও সংযুক্ত রয়েছে।

১৫ জুলাই বিকেল ৫ টায় বিএমএসএফ এর সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করেন এবং আজ ১৬ জুলাই তা গণমাধ্যমে পাঠান।

প্রতিবেদনে বিগত ৯ বছরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা,মামলা এবং নির্যাতনের ঘটনার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে বিগত বছর ছাড়াও চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ছয় মাসে শুধু সংবাদ প্রকাশের কারণেই সারাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও আইসিটি এ্যাক্টে ১৫২ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার কথা উল্লেখ রয়েছে এবং একই সময়ে হামলাসহ নানা অমানবিকতায় আরো ১৭৩ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। ২০২০ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭০টি মামলার মধ্যে ৭২টি মামলাই হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। ইদানিংকালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীগণ কর্তৃক মামলা করার প্রবণতা অত্যধিক ভাবে বেড়েছে। ওই বছর আহত হন ২৯৬ জন সাংবাদিক।

প্রতিবেদনটিতে দাবী করা হয়,২০২০ সালে ১৬০০ সাংবাদিক চাকুরি হারিয়েছেন। অপরদিকে; পেশার অনিরাপত্তা, সামাজিক মর্যাদা অনিশ্চিত থাকা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্যতায় নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষাকল্পে মেধাবী সাড়ে চারশ’ সাংবাদিক স্বেচ্ছায় পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। তারা কেউ ভিন্ন পেশায় মনোনিবেশ করেছেন, কেউবা ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। কোনভাবেই তারা আর সাংবাদিকতায় ফিরে আসতে রাজি নন। এটা এই পেশার জন্য কতোটা উদ্বেগজনক, কতোটা কষ্টের তা বোধকরি ব্যাখ্যারও প্রয়োজন পড়ে না। ধারাবাহিক নির্যাতনের কারণেও কেউ কেউ সাংবাদিকতা ছেড়ে দিচ্ছেন। কেউ বলছেন আর নিউজ করবেন না। কেউবা ঝুঁকির আশঙ্কায় অপরাধে জড়িতদের নাম পরিচয় বাদ দিয়ে ও প্রকৃত সত্য ঘটনা এড়িয়ে দায়সারা গোছের সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। 

এক বছরেই নির্যাতিত ২৪৭ সাংবাদিক

২০২০ সালে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি কর্মকর্তা, সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২৯৬ জন সাংবাদিক। আর এতে প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর দেওয়া আরেক প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘করোনাকালেও মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করে দমন-পীড়ন বেড়েছে। বিশেষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও গ্রেফতার বৃদ্ধি পেয়েছে। আসকের তথ্য সংরক্ষণ ইউনিটের তথ্য মতে ২০২০ সালে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৭২টি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে হয়রানিমূলক মামলা দেয়া হয়েছে।

দেশের ১৬টি স্থান সাংবাদিকদের জন্য ভয়ঙ্কর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এতে বলা হয়,

দেশের ৯ জেলার ১৬টি পয়েন্ট সাংবাদিকদের জন্য ‘ভয়ঙ্কর’ হয়ে উঠেছে। এসব স্থানে দফায় দফায় সাংবাদিক নীপিড়ন, নির্যাতন, মামলা হয়রানি এমনকি হত্যাকান্ডও ঘটেছে। বিপজ্জনক স্থানসমূহে ক্ষমতাসীন দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, চিহ্নিত অপরাধী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমনকি বিরোধী দলের নেতা কর্মিরাও সাংবাদিকদের উপর হামলা চালাতে দ্বিধা করছেন না। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দলীয় চরম কোন্দলে জর্জরিত নেতারা সাংবাদিকদেরও পক্ষে বিপক্ষে ঠেলে দেন এবং পরস্পর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত করেন। সারাদেশেই কমবেশি সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা ঘটলেও সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে হুমকিপূর্ণ এলাকাগুলো হচ্ছে, পাবনা, জামালপুর, কুষ্টিয়া, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ঢাকার সাভার ও ধামরাই, গাজীপুর সদর ও টঙ্গী, নারায়নগঞ্জের সদর, সোনারগাঁও ও রুপগঞ্জ, ঝালকাঠি জেলার সদর ও রাজাপুর। এছাড়া খোদ রাজধানীতেও উত্তরা, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী এলাকা ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাবলী পর্যবেক্ষণকালে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

বিএমএসএফ এর তথ্য, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ বিভাগের কর্তৃক প্রণীত গবেষণা প্রতিবেদনের বিষয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহমত পোষন করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।

পর্যবেক্ষন প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করেছেন বিএমএসএফের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাঈদুর রহমান রিমন ও তথ্য, গবেষনা ও প্রশিক্ষণ বিভাগের সম্পাদক আবুল হাসান বেলাল। প্রতিবেদনটি সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে ব্যাপক ভুমিকা রাখবে বলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আশা করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Blogger
Facebook

Emoticon
:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget