তৌফিক তাপস নওগাঁ : ঈদুল আজহা উপলক্ষে সারাদেশে শিথিল করা হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। এদিকে করোনাকালীন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলায় পশুর হাটগুলো পরিচালিত হচ্ছে। তবে এবার ঈদে দাম না পাওয়া নিয়ে আতঙ্ক কাজ করছে খামারিদের মাঝে।
বিগত বছরগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতারা পশুর হাটে গিয়ে সাধ্যের মধ্যে পছন্দ করে পশু কিনতেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে পশুর হাটের চিত্র পাল্টে গেছে। দীর্ঘ সময় হাটে ক্রেতা-বিক্রেতারা অপেক্ষা না করে দ্রুত পশু কিনেছেন। বিক্রেতারা ভাবছেন, ক্রেতা ফিরে গেলে হয়তো আর আসবেন না। আবার ক্রেতারা ভাবছেন, কিছু টাকা বেশি দিয়ে হলেও পশু কিনে নিবেন।
বুধবার (১৪ জুলাই) জেলার রানীনগরের সবচেয়ে বড় হাট আবাদপুকুরে গিয়ে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য মাইকিং, প্রবেশমুখে মাস্ক বিতরণ ও মোড়ে মোড়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছে।
উপজেলার কালিগ্রামের গরু বিক্রেতা ওহেদুল ইসলাম বলেন, ‘গো-খাদ্যের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি। এবার গরু লালনপালন করতে খরচ বেশি পড়েছে। ফলে গরুর দাম বেশি নাহলে লোকসান গুনতে হবে। হাটে বেশি সময় অপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। এরপরও গরু বিক্রি করতে পেরে খুশি। তবে পশুর দাম নিয়ে খামারিদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।’
দামুয়া গ্রামের গরু ক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি ষাঁড় এক লাখ টাকায় কিনেছি। কয়েকটি গরু দেখেছি। দামের সঙ্গে সাধ্যের সামঞ্জস্য হচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিলো, গরু কিনে হাট থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে বাঁচি। বাজারও চড়া মনে হচ্ছে।’
নওগাঁ শহরের চকদেব জনকল্যাণ মহল্লার সুখবার্তা ডেইরি ফার্মের মালিক সেলিম রেজা ডালিম বলেন, ‘কুরবানি উপলক্ষে ছয়টি ষাঁড় প্রস্তুত করেছিলাম। বিধিনিষেধে পশুর হাট বন্ধ থাকায় গরু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকে গরু কিনে নিয়ে গেছে এবং দামও ভাল পেয়েছি।’
এদিকে ধামইরহাট উপজেলার জাহানপুর গ্রামের আলহাজ আব্দুল করিম বলেন, ‘খামারে বিভিন্ন জাতের ১০টি গরু রয়েছে। কোরবানি উপলক্ষে এরইমধ্যে শাহীওয়াল জাতের একটি ষাঁড় বিক্রি করার উপযোগী করেছেন। এর উচ্চতা পাঁচ ফুট, লম্বায় প্রায় ৮২ ইঞ্চি ও ওজন প্রায় ১৫ মণ। নাম দিয়েছেন টাইগার। এর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রয়েছে ১৫ কেজি খুদের ভাত, আটা, ভুসি ও সবুজ ঘাস। ষাঁড়টির দাম রেখেছেন পাঁচ লাখ টাকা। করোনাকালীন সময়ে পশুর হাটের ঝামেলা এড়াতে ষাঁড়টি তিনি বাড়ি থেকেই বিক্রি করতে চান।’
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে জেলার ১১টি উপজেলায় ৩১ হাজার ৩৪০টি খামারে পশুপালন করা হয়েছে। এরমধ্যে ৯৮ হাজার ৮৮৩টি ষাঁড়, ৩২ হাজার ৪২৯টি বলদ, ৩৬ হাজার ১১৫টি গাভী ও ৬ হাজার ৯৬০টি মহিষ রয়েছে। এছাড়া ছাগল রয়েছে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৪৩৭টি, ভেড়া ২৫ হাজার ৬৫১টি ও অন্যান্য রয়েছে ৪২৪টি।
নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. হেলাল উদ্দিন খাঁন বলেন, প্রাকৃতিকভাবে গবাদি পশু মোটাতাজাকরণের জন্য খামারিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করার জন্য খামারিদের সচেতন করা হয়েছে। এ বছর জেলায় ৩ লাখ ৮০ হাজার ৪৯১টি কোরবানির পশুপালন করা হয়েছে। যেখানে জেলায় চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ পশুগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে পশু ক্রয়-বিক্রয় নামের অনলাইন ভিত্তিক একটি মোবাইল মার্কেটিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই অ্যাপে জেলার বিভিন্ন খামারিদের ঠিকানা, পশুর ছবি, ওজন ও মূল্যসহ ইত্যাদি উল্লেখ করে পোস্ট দেয়া হচ্ছে। এতে ভালোই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.