অনলাইন ডেস্ক : পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদ্য সাবেক হওয়া সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। তিনি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে চুক্তিভিত্তিক এই বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছেন। রবিবার (১৮ জুলাই) প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন তিনি।
বিষয়টি
নিশ্চিত করে গণমাধ্যমকে ড. শামসুল আলম
বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে জিইডিতে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন
সেটি আমি সূচারুভাবে পালন করেছি। এখন যে বিশ্বাস ও
আস্থা রেখে নতুন দায়িত্ব দিচ্ছেন সেটিও যথাযথভাবে পালন করবো ইনশাআল্লাহ। আমার প্রধান কাজ হবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বৃদ্ধি করা।
মন্ত্রিপরিষদ
বিভাগ থেকে জানা গেছে, শামসুল আলমকে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে
পাঠানো হয়েছে। রোববার বঙ্গভবনে তার শপথ এবং ওইদিনই দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা
হতে পারে।
বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন এম. এ. মান্নান। মন্ত্রিসভায় এখন ২৫ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রী রয়েছেন। নতুন একজন যুক্ত হলে প্রতিমন্ত্রী হবেন ২০ জন।
ড. শামসুল আলম এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অর্থনীতি স্নাতক (সম্মান) কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে এমএসসি, ১৯৮৩ সালে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ অর্থনীতি এবং ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল আপন টাইন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন।
কর্ম জীবনে তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডের ভাগিনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকস স্কুলে শিক্ষকতায় যুক্ত ছিলেন।
ড. আলম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় ২০০২ সালের মার্চ থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পূর্ণকালীন চাকরিরত ছিলেন। ইউএনডিপি বাংলাদেশে ১৪ মাস সিনিয়র স্কেলে পূর্ণকালীন জাতীয় কনসালটেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
৩৫ বছরের অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা শেষে শামসুল আলম ২০০৯ সালের ১ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। সবশেষ গত ৩০ জুন তার মেয়াদ শেষ হয়।
এদিকে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার শামসুল আলমকে ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে। এর আগে ২০১৮ সালে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডিউলিং তাকে ‘ইকোনমিক অব ইনফ্লুয়েন্স অ্যাওয়ার্ড’ দেয়।
এছাড়া
কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে দক্ষতা ও অবদানের স্বীকৃতি
হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি ২০১৮ সালে শামসুল আলমকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করে। তার গবেষণা, পাঠ্যপুস্তকসহ অর্থনীতি বিষয়ক প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১২টি।
ড. শামসুল আলমের হাত ধরে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন পরিকল্পনা। যেগুলো এখন চলমান। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে তার হাত ধরে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে দ্বিতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (২০০৯-১১) সংশোধন ও পুনর্বিন্যাস করে ‘দিনবদলের পদক্ষেপ’ ২০১১ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে বাংলাদেশের প্রথম পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১) তৈরি করে জিইডি।
এ ছাড়া প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র, সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র প্রণীত হয়েছে তার সময়ে। বর্তমানে ১০০ বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শেষের পথে। এগুলোর বাইরে তার দায়িত্ব পালনকালে এমডিজি অর্জন বিষয়ক ১৫টি গ্রন্থ, তার তত্ত্বাবধান ও সম্পাদনায় ৬৩টি মূল্যায়ন প্রতিবেদন, অধ্যয়ন ও গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন