রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু, ঝালকাঠি : ঝালকাঠির রাজাপুরে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় নির্মিত ১১টি ঘরের অবকাঠামো হস্তান্তরের পূর্বেই জোয়ারের পানিতেই ধ্বসে পড়েছে। স্থানীয় দুর্গাপুর এলাকায় নদীপারের নির্ধারিত জমিতে উপজেলা প্রশাসন সরাসরি নির্মাণকাজের তত্ত্বাবধান নির্মাণাধীন ঘরগুলোর আঙিনা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যেয়ে ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। গরীব মানুষের মাথা গোজার ঠাই হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর দানকৃত এ ঘরগুলো নির্মাণের শুরুতে জেলার কয়েকটি উপজেলার নির্মাণ কাজের দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। শেষ পর্যন্ত প্রশাসন সরাসরি তত্ত্বাবধান আশ্রয়ন প্রকল্পের এ ঘর নির্মান শেষ হতে না হতেই ধ্বসের মধ্য দিয়ে অনিয়ম ও নিন্মমানের কাজের অভিযোগটি প্রমান হলো। এ অবস্থায় বর্তমানে এ উপজেলায় ঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত পরিবার গুলো আর কতো দুর্ভোগে পড়ে সে ব্যাপারে সচেতন মহল আশংকা ব্যক্ত করেছে।
রাজাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় উপজেলায় ৩৩৩টি পরিবারকে এ আবাসন সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। ঘরপ্রতি ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা নির্মাণ ব্যয় ধার্য করে উপজেলার দুর্গাপুর ব্যারাকে মোট ৪৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১১টি ঘরের নির্মাণ শেষ হতেই জোয়াড়ের পানির প্লাবনে অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে।দুর্গাপুর এলাকার এ ব্যারাকটির ৪৬টি ঘরই একটু নিচু জমিতে নির্মাণ করায় জোয়ারের পানিতে বাড়ির আঙিনা তলিয়ে য ওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে তারা জানিয়েছে।
গালুয়া ইউনিয়নের দুর্গাপুর আবাসন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাজাপুর উপজেলার মাথামোটা প্রশাসন পোনা নদীর পাড়ের জমি ভরাট করে উচু না করেই নিচু জমি আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করেছে। নদীরতীরে এমন স্থানে আবাসন প্রকল্পের ৪৬টি ঘর নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে যেখানে স্বাভাবিক জোয়ার পানিতে তলিয়ে যায়।
ঘরের মেঝে, বারান্দা ও দেয়ালসহ ভেঙ্গে একদিকে হেলে পরেছে। প্রকল্পের সবকটি ঘরের আশেপাশের এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরগুলোর মেঝেতে ফেলানো বালু জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়েছে। শনিবারে সরেজমিন ১১টি ঘরের অধিকাংশ ভেঙে পড়েছে এবং অন্যান্য ঘরগুলোও যে কোন সময় ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছে, উপজেলা প্রশাসনের দায়ত্ব পালনকারী কমকর্তাদের তত্তাবধানে নদীর তীরের জমি উন্নয়ন না করে নামমাত্র বালু ভরাট করে ইট বিছিয়ে ঘরগুলোর নির্মাণ সম্পন্ন করায় সামান্য জোয়ারা-ভাটাতেই এ অবস্থা হয়েছে।
ঘরের জন্য আবেদনকরী স্থানীয় বাসিন্দা আঃ খলিল সাংবাদিকদের বলেন, তাদের এলাকায় নির্মাণাধীন আবাসন প্রকল্প এলাকায় বর্ষা মাসের শুরু থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত জলাবদ্ধতা থাকে। স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে সর্বত্র তলীয়ে যায় আবার ভাটার সময় পানি কিছুটা কমে আসে। প্রধানমন্ত্রী সৎ উদ্দেশ্যে গৃহহীনদের আশ্রয়ের জন্য ঘর দিতে প্রকল্প গ্রহন করলেও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও অনিয়মের কারনে যাঁরা ঘরগুলো বরাদ্দ পাবেন, তাঁদের কপালে দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।
এ ব্যাপারে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আবাসন প্রকল্প এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি উঠেছে তবে পরবর্তীতে স্বাভাবিক হয়ে যাবে। যে ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তা শীগ্রই মেরামত করা হবে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন