প্রতিনিধি নওগাঁ: নওগাঁর আত্রাইয়ে ঠিকাদারির টাকা ভাগবাটোয়ারা ও এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার সোয়েবের হাত-পা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলা ও কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা পরিষদ ভাইস (মহিলা) চেয়ারম্যান মমতাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
ঘটনায় আহতের স্ত্রী সাবরিনা বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। গতকাল সোমবার দুপুরে আদালতের সোপর্দ করা হলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মমতাজকে জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন। রবিবার রাতে থানা পুলিশ এক অভিযান চালিয়ে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে।
রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় উপজেলা নিউমার্কেটের দ্বিতীয় তলায় সোয়বের নিজ অফিসে এ ঘটনা ঘটেছে।
সরদার সোয়েব পাথাইঝাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসর শিক্ষক খাজা রাফিউদ্দিন সরদারের ছেলে ও উপজেলা শ্রমিক লীগ সাধারণ সম্পাদক ।
ঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বাজারে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে ।
সোয়েবের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে আত্রাই উপজেলা পরিষদ ভাইস (মহিলা) চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম এবং তার ছেলে উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা বাচ্চুর সাথে সোয়েব যৌথভাবে ঠিকাদারি কাজ করে আসছে। এমতাবস্থায় এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও ঠিকাদারি কাজের টাকা নিয়ে বিরোধ দেখা যায়। এরই জেরে মমতাজ বেগমের নির্দেশে তার ছেলে উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা রাব্বি, লিটনসহ ১৫/১৬ জন সোয়েবের অফিসের ভিতরে ঢুকে রবিবার ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে তার হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়। এতে গুরুতর জখম হয়েছেন সোয়েব। বাজারের লোকজন টের পেয়ে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
খবর পেয়ে নওগাঁ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার জাকারিয়া হোসেন বলেন, চার হাত-পায়ের মধ্যে দুইহাত ও বাম পায়ের অবস্থা খুব খারাপ।
সোয়েবের বাবা খাজা রাফিউদ্দিন সরদার অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী মনোনীত আত্রাই উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম ও তার ছেলে মির্জা বাচ্চুর সাথে দীর্ঘদিন থেকে আহত সরদার সোয়েব এর মধ্যে ঠিকাদারি কাজ করে আসছে। এমতাবস্থায় টাকা নিয়ে বিরোধ ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এর ফলে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। দ্রুত আসামীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
গ্রেপ্তারের আগে রবিবার মমতাজ জানান, রাজশাহীর বাগমাড়া উপজেলায় ঠিকাদারি ৬৫ লাখ এবং ধারকৃত ২ লাখ মোট ৬৭ লাখ টাকা সরদার সোয়েবের কাছ থেকে পাবেন তারা । আমি ও আমার ছেলে রাব্বী বহুবার অনুরোধ এবং দেন-দরবার করেও টাকা পাইনি ।
আত্রাই থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, আহতের স্ত্রী সাবরিনা বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত নামা ৪/৫ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলার মূল আসামি মমতাজ বেগমকে গ্রেপ্তার করে সোমবার সকালে নওগাঁ আদালতে পাঠানো হলে আদালত জেল হাজতে প্রেরণ করেছেন।
ওসি আরো জানান, মামলার অন্য আসামিরা পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া ঘটনার সময় বাজারের সিসি টিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চলছে ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন