মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে দিনদিন বেড়েই চলেছে চোরাচালান ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত ৯ দিনের ব্যবধানে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের তাড়া খেয়ে আবারোও এক কয়লা শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মৃত শ্রমিকের নাম- রমজান মিয়া (৩৫)। সে উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট-গুচ্ছ গ্রামের আলমাছ মিয়ার ছেলে। আজ বুধবার (৩১শে মার্চ) দুপুরে মৃত কয়লা শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করে ঘোপনে দাফন করার সময় সচেতন এলাকাবাসী বাঁধা দেয় বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের চারাগাঁও সীমান্তের লালঘাট, বাঁশতলা ও চারাগাঁও এলসি পয়েন্ট এলাকা দিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে চাল ও কয়লাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করে জমজমাট ব্যবসা করছে বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী শফিকুল ইসলাম ওরফে ভৈরব, রমজান মিয়া ও আনোয়ার মিয়াগং। তাদের নেতৃত্বে প্রতিদিনের মতো আজ বুধবার (৩১শে মার্চ) সকাল ৬টায় প্রায় অর্ধশতাধিক লোক লালঘাট ও বাঁশতলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে কয়লা পাচাঁরের সময় বিএসএফ তাড়া করে। ওই সময় শ্রমিকরা কেউ কয়লার বস্তা নিয়ে আবার কেউ কয়লার বস্তা ফেলে দিয়ে যে যার মতো করে পালিয়ে যায়। কিন্তু শ্রমিক রমজান মিয়া তাড়া খেয়ে পাহাড়ের খাদে পড়ে তার মাথায় পাথরের আঘাত লাগার কারণে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। কিন্তু বিএসএফ টহলে থাকার কারণে লাশ তখন আনতে পারেনি। দুপুরে বিএসএফ চলে যাওয়ার পর মৃত কয়লা শ্রমিক রমজান মিয়ার লাশ ভারতের ভিতর থেকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে সোর্স ও অন্যান্যরা শ্রমিকরা। তারপর প্রশাসনকে না জানিয়ে ঘোপনে তাড়াহুড়া করে মৃত কয়লা শ্রমিক রমজান মিয়ার লাশ দাফন করতে চায়। এঘটনার খবর পেয়ে বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
এব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড কৃষকলীগের সহ-সভাপতি গুলেনুর মিয়াসহ আরো অনেকেই বলেন- সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাসান মেম্বার, সোর্স শফিকুল, রমজান আলী ও বিজিবি ক্যাম্পের এফএস আফসার সিন্ডিকেডের মাধ্যম্যে চারাগাঁও এলসি পয়েন্ট, বাঁশতলা ও লালঘাট এলাকা দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে লক্ষলক্ষ টাকার চাল ও কয়লা পাচাঁর করছে। তাদের জন্য কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে বিএসএফের তাড়া খেয়ে শ্রমিক রমজান মিয়ার মৃত্যু হয়েছে। আমরা তাদের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলে হয়রানীর শিকার হতে হয়। কারণ চোরাচালান বন্ধের জন্য প্রশাসন আমাদেরকে কোন সহযোগীতা করেনা।
তাহিরপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন-কয়লা শ্রমিক রমজান মিয়ার মৃত্যুর ব্যাপারে আমাকে কেউ কোনকিছু জানায়নি, এব্যাপারে বিজিবির সাথে কথা বলব।
সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের নবাগত বিজিবি অধিনায়ক লে.কর্ণেল তছলিম এহসান সাংবাদিকদেরকে জানান- তিনি জানতে পেরেছেন কয়লা শ্রমিক রমজান মিয়া কয়লা আনতে গিয়ে বিএসএফের তাড়া খেয়ে ভারতের ভিতরে মরেনি। সে মোটর সাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে নো-ম্যান্সল্যান্ডে অবস্থিত ব্রিজের সাথে ধাক্ষা লেগে আহত হয়ে মৃত বরন করেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
উল্লেখ্য, এরআগে গত সোমবার (২২শে মার্চ) সকালে লাউড়গড় সীমান্তের বারেকটিলায় অবস্থিত নোম্যান্সল্যান্ড এর ১২০৩ পিলারের উত্তর দিক দিয়ে অবস্থিত যাদুকাটা নদী দিয়ে বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী আমিনুল ইসলাম, রফিক মিয়া (নবীকুল), জসিম মিয়া, নাজিম মিয়া ও নুরু মিয়াগং ভারতের ভিতর থেকে অবৈধ ভাবে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কয়লা ও পাথর পাচাঁরের সময় বিএসএফের তাড়া খেয়ে নদীতে ডুবে কয়লা শ্রমিক সাইদুলের মৃত্যু হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন