মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া, হাওরাঞ্চল,সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জে জাতীয় দৈনিক সংবাদ ও সিলেট থেকে প্রকাশিত দৈনিক শুভ প্রতিদিন পত্রিকার প্রতিনিধি ও তাহিরপুর প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেনকে গাছের সাথে বেঁধে নির্মম ভাবে নির্যাতনের ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের গাগটিয়া গ্রামের গোলাম হোসেনের ছেলে মাহিবুল মিয়া (২৫), একই গ্রামের সাজ মিয়ার ছেলে তাহের মিয়া (২২), সাজিদুর রহমানের ছেলে আনহার মিয়া (৩৫) ও সামসু মিয়ার ছেলে ফয়সাল মিয়া (২০)। আজ মঙ্গলবার (২রা ফেব্রুয়ারী) ভোর অনুমান ৪টায় সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়- জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের কামড়াবন্দ গ্রামের মৃত বদ মিয়ার ছেলে হাবিব সারোয়ার আজাদ মিয়া ও তার চাচাতো ভাই মাহমুদ আলী শাহ সিন্ডিকেড তৈরি করে লাউড়গড় সীমান্তে অবস্থিত যাদুকাটা নদীতে অর্ধশতাধিক অবৈধ কোয়ারী নির্মাণ করাসহ কামড়াবন্দ গ্রামে মদ,গাঁজা ও ইয়াবার ব্যবসা করছে দীঘদিন যাবত। সেই সাথে প্রতিদিন যাদুকাটা নদীর তীর কেটে লক্ষলক্ষ টাকার বালি বিক্রি করে হয়েগেছে কোটিপতি। সম্প্রতি তাদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতি নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করার কারণে চরম ক্ষেপে যায় আজাদ মিয়া ও মাহমুদ আলী শাহ। তারই জের ধরে গতকাল সোমবার (১লা ফেব্রুয়ারী) সকাল ১০টায় সীমান্তের যাদুকাটা নদীর গাগটিয়া এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বালি ও পাথর উত্তোলন করার ফটো তুলতে গেলে সাংবাদিক কামাল হোসেনের ক্যামেরা,মানিব্যাগ,মোবাইল ও মোটর সাইকেল কেড়ে নেয় আজাদ মিয়া ও তার চাচতো ভাই মাহমুদ আলী শাহ। পরে তাদের সিন্ডিকেডের সদস্য দিন ইসলাম ও রইছ উদ্দিনসহ ৮-১০জন রামদা,ছুরি ও লাঠিসুটা দিয়ে সাংবাদিক কামালকে নির্মম ভাবে নির্যাতন করার পর যাদুকাটা নদীর তীর থেকে টেনে হেচড়ে পাশর্^বর্তী গাগটিয়া চকবাজারে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এরপর রক্তমাখা অবস্থায় গুরুতর আহত সাংবাদিক কামালের ফটো ও ভিডিও মোবাইল ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে দিলে তা ভাইরাল হয়।
সন্ধ্যায় এঘটনার খবর পেয়ে বাদাঘাট ফাঁড়ি ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংবাদিক কামালকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাতেই সাংবাদিক কামালকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসাপাতালে পাঠায়।
এঘটনা প্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার রাত ১টা থেকে আজ মঙ্গলবার ভোর ৪টা পর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণ করার অপরাধে ৪জনকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু মূল অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। আর এই ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর থেকে জেলা ও উপজেলার সর্বস্তরের জনসাধারণের মাঝে সমালোচনার ঝড় উঠে।
তাই প্রকৃত অপরাধীদেরকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের জন্য প্রশাসনের কাছে জোরদাবী জানানিয়ে আজ মঙ্গলবার (২রা ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌরশহরে মানববন্ধন করেছে জেলার কর্মরত পিন্ট, অনলাইন ও টিভি মিডিয়ার কর্মরত সাংবাদিকরা।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিক নির্যাতনের ভিডিও ধারনের কারণে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, মামলা দায়েরের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন