সালমান ফার্সী, (সজল) নওগাঁ : নওগাঁর পোরশায় এখন খুব কম দেখা যায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহি হাতে তৈরি খেজুর পাটি। কিন্তু এক সময় এ এলাকার মানুষের কাছে খেজুর পাটির ব্যাপক চাহিদা ছিলো। চাহিদা কমায় সময়ের বিবর্তনে তা বিলুপ্তির পথে এই পাটি। আশির দশকে খেজুর পাটি উপজেলার সাধারন মানুষের ঘরে ঘরে নিত্য প্রয়োজনে ব্যবহার হতো।
খেজুর পাটিতে ধান শুকানোর কাজ করতো অনেকে। আদিবাসী নারী-পুরুষরা বৃষ্টি বাদলে ছাতার বদলে খেজুর পাটির তৈরী ঘোমটা বৃষ্টি আটকানো ঢাল হিসাবে ব্যবহার করত। বর্তমান আধুনিকতায় মানুষের জীবন মানের পরিবর্তনের ফলে খেজুর পাটি হারিয়ে গেছে।
মানুষের পারিবারিক ব্যবহার্য্য উপকরন ঐতিহ্যবাহী খেজুর পাটির স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক শীতলপাটি, নলপাটি, পেপসি পাটি, বিভিন্ন ধরনের চট ও কার্পেট, মোটা পলিথিন সহ নানা রকমের উপকরন। এই উপকরন গুলো সহজেই বাজারে পাওয়া যাওয়ায় মানুষ খেজুর পাটির পরিবর্তে এসব আধুনিক উপকরন ব্যবহারে দিন দিন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে হারিয়ে গেছে খেজুর পাটির কদর। খেজুর পাটির চাহিদা কমে গেলেও উপজেলার আদিবাসী গ্রাম মধুপুর, মঠবাড়ি, কাঠপুকুর, সরাইগাছি সহ বিভিন্ন গ্রামে বসবাসরত
আদিবাসী নারীরা আজও অবসর সময়ে খেজুর পাটি তৈরির কাজে ব্যাস্ত থাকে। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী খেজুর পাটিকে তারা নিজস্ব সংস্কৃতিতে আজও আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। এব্যাপারে কথা হয় সরাইগাছি আদিবাসী পাড়ার সেনচেরি পাহান, আলোমতি পাহান, বিশোমনি, জলেশ্বরী ও জিরুয়া পাহান জানান, আগের মতো আর খেজুর গাছও নেই, খেজুরের পাতাও পাওয়া যায় না। ফলে পাটি তৈরীর প্রধান উপকরন খেজুর পাতার অভাবে খেজুর পাটি বিলুপ্ত হতে চলেছে। এ পাটি তৈরীকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন খেজুর গাছ ও পাতা। সরকারের বন বিভাগ খেজুর গাছ লাগানোর জন্য জনসাধারনকে উদ্বুদ্ধ করলে একদিকে যেমন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া খেজুর গাছ রক্ষা পাবে।
অপর দিকে পাটি তৈরীর সাথে জড়িত আদিবাসী ও অন্যান্যরা এ পাটি ব্যবহার সহ বিক্রি করে কর্মস্থানের সৃষ্টি করতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন