সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত সোর্সদের নিয়ন্ত্রণে: রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

 
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত সোর্সদের নিয়ন্ত্রণে: রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

 
মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত এখন বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারীদের নিয়ন্ত্রণে। সরকারের লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সোর্সরা প্রতিদিন ভারত থেকে অবৈধভাবে কয়লা,মদ,গাঁজা,ইয়াবা, অস্ত্র,ভারতীয় ফালি (কাঠ),লাকড়ি,জাল টাকা,মাছ ধরার বরশি,শাক-সবজি,ভারতীয় বিড়ি ও গরু পাচাঁর করছে। এবং পাচাঁরকৃত মালামাল থেকে নামে-বেনামে চাঁদা উত্তোলনের অভিযোগ নিয়ে পত্রিকায় একাধিক বার সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে সোর্সদের দাপট ও চাঁদাবাজির পরিমান আরো বেড়ে গেছে বলে জানাগেছে। এলাকাবাসী জানায়-চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত চাঁরাগাঁও সীমান্ত। এই সীমান্তের ১১৯৬পিলার সংলগ্ন লালঘাট ও বাঁশতলা তেতুলগাছ সংলগ্ন এলাকা দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন আড়াই লক্ষ টাকা মূল্যের ৩শত থেকে ৪শত বস্তা (১৭ থেকে ২৩মে.টন) চোরাই কয়লা পাচাঁরের পাশপাশি কয়লার বস্তার ভিতরে করে মদ,গাঁজা ও ইয়াবা পাচাঁর করছে লালঘাট গ্রামের মাদক মামলা আসামী-বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী আব্দুল আলী ভান্ডারী,রমজান মিয়া,খোকন মিয়া ও চাঁরাগাঁও গ্রামের বিজিবি সোর্স পরিচয়ধারী শফিকুল ইসলাম ভৈরব ও তার মামতো বোন জামাই বাবুল মিয়াগং। তারা প্রতিদিন সকালে অর্ধশতাধিক লোক দিয়ে ভারতের ভিতর থেকে কয়লা ও মাদক পাচাঁর করে কাটা তারের বেড়ার পাশে জংগলের ভিতরে মজুত করে রাখে। সন্ধ্যার পরপর বিজিবির উপস্থিতে পাচাঁরকৃত কয়লা ও মাদক জংগল থেকে বাহির করে সীমান্তের লালঘাট,বাঁশতলা ও চাঁরাগাঁও গ্রামের বসতবাড়ি,রান্নাঘর ও বাড়ি সংলগ্ন পুকুরসহ হাওরের পানিতে আবার লুকিয়ে রাখে। এরপর রাত গভীর হলে লালঘাট গ্রামের চোরাচালানী জসিম মিয়া ১টি,হারুন মিয়ার ১টি,পাশর্^বর্তী নবাবপুর গ্রামের শাহানুর মিয়ার ১টি ও সোর্স শফিকুলের মামাতো ভাইয়ের ১টি ছোট বারকি নৌকাসহ মোট ৫টি নৌকায় চোরাই কয়লা ও মাদক বোঝাই করা হয়। তারপর সেই অবৈধ মালামাল সমসার হাওর দিয়ে পাটলাই নদী পথে নবাবপুর গ্রামের জুয়েল মিয়ার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে চোরাচালানী খোকন মিয়ার বড় ইঞ্জিনের নৌকা অপেক্ষায় থাকে। সেই নৌকায় সব অবৈধ কয়লা ও মাদক বোঝাই করা হয়। তারপর জুয়েল মিয়া ও খোকন মিয়া দুজন মিলে নদীপথে নেত্রকোনা জেলার কমলাকান্দা উপজেলার মনতলা নামকস্থানে নিয়ে বিক্রি করে। এসব অবৈধ মালামাল পাচাঁরের সময় আলোচনা সাপেক্ষে মাঝে মধ্যে ২০বস্তা আবার কখনো ৩০বস্তা কয়লা জব্দ করে বিজিবি। পরে জব্দকৃত কয়লা আবার সোর্সদের কাছেই বিক্রি করে। আর এই নাটক করার জন্য চাঁরাগাঁও বিজিবি ক্যাম্পের নামে ১বস্তা চোরাই কয়লা থেকে ৬০টাকা,ক্যাম্পের এফ.এসের নামে ১০টাকা,সুনামগঞ্জের সি.ও’র নামে ৩০টাকা,থানার নামে ৪০টাকা ও স্থানীয় কয়েকজন সংবাদকর্মীর নামে ৩০টাকা চাঁদা নিচ্ছে সোর্স শফিকুল ইসলাম ভৈরব ও রমজান মিয়া। ১বস্তা চোরাই কয়লার মূল্য ৩শ থেকে ৩৫০টাকা। একই ভাবে সীমান্তের লামাকাটা ও জংগলবাড়ি এলাকা দিয়ে কয়লা পাচাঁর ও চাঁদাবাজি করছে সোর্স লেংড়া জামালগং। অন্যদিকে চাঁনপুর সীমান্তের রাজাই ও বারেকটিলা এলাকা দিয়ে সোর্স আবু বক্কর ও রফিকুলের নেতৃত্বে গরু,মদ,বিড়ি ও অস্ত্র পাচাঁর করা পাচাঁর করার পর বিজিবি,ইউনিয়ন চেয়ারম্যান,মেম্বার ও পুলিশের নামে মোটা অংকের চাঁদা নিচ্ছে ওই দুই সোর্স। বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট, লাকমা ও টেকেরঘাট সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা মামলার আসামী সোর্স কালাম মিয়া তার লোকজন দিয়ে চোরাই কয়লা ও ভারতীয় কাঠ,লাকড়ি,বরশি পাচাঁর করে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত ড্রাম্পের বাজার ও নতুন বাজার নিয়ে ওপেন বিক্রি করে চাঁদা উত্তোলন করছে। লাউড়গড় সীমান্তের যাদুকাটা নদী,পুরান লাউড়,সাহিদাবাদ এলাকা দিয়ে একই ভাবে ৬জন সোর্সের মাধ্যমে কয়লা,মাদক,গরু,বিড়ি ও গাছ পাচাঁর করার পর চাঁদা উত্তোলন করা হচ্ছে। এব্যাপারে বড়ছড়া,চাঁরাগাঁও,বালিয়াঘাট,লাউড়গড় ও চাঁনপুর গ্রামের ব্যবসায়ী-সাদেক আলী,রুস্তুম আলী,আলী হোসেন,আব্দুল জব্বার,আলী আহমদ,সাফিল উদ্দিন,কাসেম আলী,দিন মোহাম্মদ,হাসান মিয়া,শাজাহান মিয়া, আশরাফ আলী,ইকবাল মিয়া,লালন মিয়া,জলিল মিয়া,নুর জামালসহ আরো অনেকেই বলেন-সীমান্তের প্রতিটি ক্যাম্পে রয়েছে বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী ২ থেকে ৬জন লোক। তারা বিজিবি ক্যাম্পের হাট-বাজার করাসহ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে পাচাঁরকৃত মালামাল থেকে চাঁদা উত্তোলন করে। সোর্সদের বিরুদ্ধে থানায় ইয়াবা,মদ ও কয়লা পাচাঁরসহ বিজিবির ওপর হামলার মামলা থাকার পরও কেউ কোন পদক্ষেপ নেয় না। তবে সোর্সদের চোরাচালান ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে মামলা ও হামলার শিকার হতে হয়। সোর্সদের নেতৃত্বে কিছু দিন পরপর প্রতিটি সীমান্ত এলাকায় বাংলা কয়লার নামে হাজার হাজার মে.টন চোরাই কয়লা মজুত করা হয়। পরে সুনামগঞ্জের ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ককে ম্যানেজ করে ৩দিনের জন্য অনুমতি নিয়ে রাজস্ব বিহীন অবৈধ বাংলা কয়লা ওপেন পাচাঁর করা হয়। সীমান্তের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয় নিয়ে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাকসুদুল আলমের বক্তব্য জানতে তার সরকারী মোবাইল (০১৭৬৯-৬০৩১৩০) নাম্বারে বারবার কল করার পর শুধু ব্যস্ত পাওয়া যায়,রহস্য জনক কারণে তিনি ফোন রিসিভ করেন না। তবে দীর্ঘদিন যাবত তিনি সুনামগঞ্জে কর্মরত রয়েছেন বলে জানাগেছে। এব্যাপারে বিজিবির সিলেট সেক্টর কমান্ডারের সরকারী মোবাইল নাম্বারে কল করার পর ফোন রিসিভ করে নাম প্রকাশ না করে সেক্টর কমান্ডার পরিচয় দিয়ে বলেন-সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানের সাথে জড়িত সোর্স পরিচয়ধারীদের বিরুদ্ধে শীগ্রই আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Blogger
Facebook

Emoticon
:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget