আব্বাস আলী, নওগাঁ : নওগাঁর মহাদেবপুরে প্রভাবশালী সুদ ব্যবসায়ী দুই সহোদরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টায় আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করে এক আদিবাসী পরিবার বাড়ি ছাড়া। জামিনে বেরিয়ে আসার পর থেকে ওই পরিবারকে হুমকি ধামকি অব্যহৃত রাখার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের দক্ষিন লক্ষ্মিপুর গ্রাম থেকে জীবনের ভয়ে ওই পরিবারের তিন সদস্য দুইদিন থেকে নওগাঁ শহরে এসে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন।
মামলা ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের দক্ষিন লক্ষ্মিপুর গ্রামের আদিবাসী বিধবা নারী একাই বাড়িতে থাকেন। তার দুই ছেলে ঢাকায় থাকেন। তার বাড়ির রাস্তার পশ্চিম পাশে পবাতৈড় গ্রামের মৃত মোসলেম এর ছেলে আজাদুল ইসলাম ওরফে জারদেশ (৩৫) বিভিন্ন ভাবে ওই বিধবাকে উত্ত্যক্ত ও কুপ্রস্তাব দিতো। বিষয়টি একাধিকবার আজাদুলকে নিষেধ করা হয়। গত ৩জুন রাত ১০ টার দিকে বিধবা প্রকৃতির ডাকে বাড়ির বাহিরে গেলে গোপনে আজাদুল ঘরে ঢুকে। পরে বিধবা ঘরে আসলে তাকে ধর্ষনের চেষ্টা করে। তার ডাক-চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আজাদুলকে আটক করে। বিষয়টি তার ভাই একরামুল (৪০) হক জানার পর লোকজন নিয়ে এসে আজাদুলকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
বিধবা বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অবগত করা হলে আজ নয় কাল বলে সময়ক্ষেপন করে। এরপর থানায় মামলা করার জন্য কয়েকদিন ঘুরেও মামলা করতে না পারায় অবশেষে গত ৩০ জুলাইয়ে বিধবা বাদী হয়ে নওগাঁ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে দুই ভাইকে আসামী করে মামলা করে। মামলার পর গত ১৬ আগস্টে আসামী দুইজনকে আটক করে পরদিন আদালতে প্রেরণ করে থানা পুলিশ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আসামীরা জামিনে বেরিয়ে আসার পর থেকে ওই বিধবার পরিবারকে হুমকি ধামকি অব্যহৃত রাখা হয়েছে।
বিধবার ছেলে নিপেন অভিযোগ করে বলেন, আজাদুল ইসলাম মা’কে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিতেন। আমরা নিষেধ করেছিলাম। জীবিকার জন্য দুইভাই ঢাকায় থাকি। একদিন রাতে তিনি মায়ের ঘরে ঢুকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। পরে তার ভাই একরামুল লোকজনকে নিয়ে এসে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এছাড়া গত ৫ বছর আগে সাদা স্ট্যাম্পে লিখিত দিয়ে আমরা ২০ হাজার টাকা একরামুলের কাছ থেকে সুদের উপর নিয়েছিলাম। ৫ বছর পর সুদে-আসলে ৭০ হাজার টাকা তাকে ফেরত দিয়েছি। কিন্তু তারপরও তিনি স্ট্যাম্পটি ফেরত দিচ্ছেন না। তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আমাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে গতকাল থেকে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসছি। আমরা এর সুবিচার দাবী করছি।
অভিযুক্ত একরামুল হক বলেন, ওই পরিবারের কাছে ৭০ হাজার টাকা পেতাম। তারা টাকা না দিতে বিভিন্ন ভাবে পায়তারা করছে। টাকা যেহেতু তারা দেয়নি এজন্য আমি স্ট্যাম্পও ফেরত দিবো না। তারা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। ওই পরিবারকে হুমকি দেয়ার বিষয়টি মিথ্যা।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার হোসেন বলেন, শ্লীলতাহানির ঘটনাটি নিয়ে আমরা স্থানীয় ভাবে আপোশের চেষ্টা করছিলাম। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা আইনের আশ্রয় নেয়ায় ভাল হয়েছে। তবে হুমকি-ধামকি দেয়ার বিষয়টি জানা নেই।
মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।#
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.