সোমবার(১৯ই অক্টোবর)দুপুরে নওগাঁ শহরের সরিষাহাটির মোড়ে বিএফএর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এই দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের সভাপতি রেজাউল করিম।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শস্য ভান্ডার নওগাঁ জেলায় বাৎসরিক রাসায়নিক সারের চাহিদা প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন। অথচ এখনও মজুত ও বিতরণে এ জেলায় কোন গুদাম নির্মান হয়নি। এই দাবি তাদের দীর্ঘ দিনের। অথচ স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষা করে কুমুরিয়া এলাকায় স্থলে কোটি কোটি বেশি টাকা ব্যায়ে খাট্টাসাহাপুর নামক একটি আবাসিক এলাকায় গুদাম নির্মান করার পায়তারা করছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্পোরেশন বিসিআইসি। ইতোমধ্যেই সেখানকার জমি অধিগ্রহনে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে শিল্প মন্ত্রনালয়। এতে স্থানীয় ও নওগাঁবাসিদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নওগাঁ জেলায় বাফার গুদাম নির্মানের জায়গা নির্ধারনে কর্তৃপক্ষ ভূল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। বগুড়া জেলার সান্তাহার সংলগ্ন খাট্টাসাহাপুর আর নওগাঁ জেলার শেষ সীমানায় অবস্থিত একটি আবাসিক এলাকা। সেখানে গুদাম নির্মান করতে গেলে একদিকে জমি অধিগ্রহনে বেশী অর্থ ব্যয় হবে, অন্যদিকে সুফল থেকে বঞ্চিত হবে নওগাঁর কৃষক, ডিলারসহ সর্বস্তরের মানুষ। সরকারের গুদাম নির্মানের উদ্দেশ্য সফল হবে না।
আবাসিক এলাকা হওয়ায় খাট্টাসাহাপুর গুদাম নির্মান করা হলে সরকারী স্থাপনা নির্মানের শর্ত ভঙ্গ হবে। সান্তাহারে বিসিআইসির একটি বাফার গুদাম আছে। সেখানে সার নিতে গিয়ে নওগাঁর ডিলারদেরকে চরম বিরম্বনা পোহাতে হয়। সঠিক সময়ে কৃষকের মাঝে সার সরবরাহ কঠিন হয়ে পরে। খাট্টাসাহাপুরে গুদাম নির্মান হলে সার আনা-নেয়া, পরিবহন চলাচল ও পরিবহন বন্দোবস্ত করার ক্ষেত্রে ডিলারগণকে চরম হয়রানী ও বিরম্বনার শিকার হতে হবে।
অন্যদিকে, কুমুরিয়া নওগাঁ জেলার ১১টি উপজেলার জন্য একটি সুবিধা জনক স্থান। সেখানে গুদাম নির্মান করা হলে প্রতিটি উপজেলায় সার সরবরাহ সহজ হবে। কুমুরিয়ার জমিগুলো প্রায় সবই পরিত্যাক্ত। সেখানে অধিক পরিমান পরিত্যাক্ত জমি আছে। ভবিষ্যতে প্রয়োজন মত আরও জমি অধিগ্রহনের সুযোগও রয়েছে।
খাট্টাসাহাপুর মৌজায় জমি অধিগ্রহন করতে লাগবে প্রায় ৩২ কোটি টাকা। আর কুমুরিয়া মৌজায় মাত্র ১০ কোটি টাকা হলেই জমি অধিগ্রহন করা সম্ভব। স্থান পরিবর্তন করলে সরকারের প্রায় ২২ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। সব দিক বিবেচনায় ‘স্থানীয় ভাবে সার সংরক্ষন ও বিতরন সুবিধার্থে’ গুদাম নির্মান করতে হলে কুমুরিয়াতেই করতে হবে। তাই স্থান পরিবর্তন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ‘খাট্টাসাহাপুর’ মৌজার পরিবর্তে ‘কুমুরিয়া’ মৌজায় বাফার গুদাম নির্মানের পক্ষে ইতোমধ্যেই মতামত দিয়েছেন নওগাঁ-১ আসনের এমপি ও খাদ্যমন্ত্রী বীর মুক্তযোদ্ধা সাধন চন্দ্র মজুমদার। এছাড়া নওগাঁ-৫ (সদর) আসনের এমপি ব্যারিষ্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন, নওগাঁ-২ (পতœীতলা-ধামইরহাট) আসনের এমপি আলহাজ্ব শহীদুজ্জামান সরকার, নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের এমপি ছলিম উদ্দিন তরফদার মতামত দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়।
প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে নির্মান কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। অথচ বাস্তবায়নের শুরুতেই গোড়ায় গলদ দেখা দিয়েছে। গুদাম নির্মাণের স্থান নির্ধান একটি গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় স্থানীয়দের মতামতকে মূল্যায়ন করা হয়নি। এতে ব্যবসায়ী মহলে, বিশেষ করে সার ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থান পরিবর্তন করার দাবি দ্রুত মানা না হলে আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষনা করা হবে বলে হুশিয়ারী দেন বিএফএ নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বিএফএর সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান, সাধারন সম্পাদক রেজাউল হাসানসহ কার্যকরী পরিষদের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের সহ-সভাপতি ও সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম জানান, নওগাঁবাসিদের দাবি উপেক্ষা করে বগুড়া জেলার পাশে ওই খানে ২২ কোটি টাকা অতিরিক্তি বেশি ব্যায়ে নির্মাণের চেষ্টা করছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। এই অতিরিক্ত বেশি ব্যায়ের পিছনে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের যোগসাজশ থাকতে পারে। তাদের কাছে জানতে চাইলেও তার কারণ জানাননি তারা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন