রাজশাহীয় ভুয়া সনদে ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা

 

রাজশাহীয় ভুয়া সনদে ১০ বছর ধরে শিক্ষকতা!



ফেরদৌস সিদ্দিকী, রাজশাহী : রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে মোবাসসেরা খাতুন নামের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ভুয়া নিবন্ধন সনদে ১০ বছর ধরে চাকরির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত মোবাসসেরা খাতুন গোদাগাড়ী উপজেলার রিসিকুল ইউনিয়নের সৈয়দপুর শহীদ মঞ্জু উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষিকা। ২০১১ সাল থেকে কর্মরত তিনি। তার ইনডেক্স নং ১০৮৪৩৩। শুরু থেকেই এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে নিচ্ছেন যাবতীয় সুযোগ সুবিধা।

মোবাসসেরা খাতুনের বিরুদ্ধে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন নম্বর ও প্রত্যয়ন জালিয়াতি করে অবৈধভাবে নিয়োগের অভিযোগ এসেছে শিক্ষা দফতরে। গত ১ আগস্ট লিখিত অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করে সত্যতাও পেয়েছে জেলা শিক্ষা দফতর।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন। তিনি জানান, যেহেতু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চল দফতরের ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কোনো প্রকার রেকর্ড এখানে নেই (ঢাকায় রেকর্ড রয়েছে) সেহেতু প্রকৃত নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীর রোল নম্বর আমাদের অনলাইন ডেটাবেজের সার্ভার থেকে যাচাইপূর্বক জালিয়াতির সত্যতা পাওয়া গেছে।

অভিযোগ সম্পর্কে তিনি আরও জানান, এক লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে নিয়োগকালে ওই শিক্ষিকার দাখিলকৃত নথিতে দেখা গেছে, ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নেন। তার রোল নম্বর ২১১৬০৭৭৯। ৪৬ দশমিক ৫০ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন তিনি। কিন্তু যাচাইয়ে ধরা পড়ে ওই সনদধারী আদতেই মোবাসসেরা খাতুন নন। সেটি রোজি খাতুনের। সনদ জালিয়াতি করে মোবাসসেরা খাতুন নিয়োগ নিয়েছেন। তার এই কাণ্ডে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির যোগসাজস রয়েছে। রহস্যজনক কারণে অডিটেও আপত্তি ওঠেনি।


নিয়োগকালীন প্রধান শিক্ষক খোশ মোহাম্মদ অবসরে যাওয়ার পর তরিকুল ইসলাম বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হন। তিনি জালিয়াতির বিয়ষটি জানতে পেরে ওই শিক্ষককে জিম্মি করেন। প্রতি মাসে তার বেতন থেকে একটি অংশ নিজের পকেটে নেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক খোশ মোহাম্মদ বলেন, ওই নিয়োগে তার কোনো হাত ছিল না। সব দায়দায়িত্ব নিয়োগ কমিটিরই। সম্প্রতি তিনি জালিয়াতির বিষয়টি শুনেছেন। আগে টেরই পাননি এত বড় জালিয়াতি।

তবে অভিযোগ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি মোবাসসেরা খাতুন।

জানতে চাইলে বর্তমান প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলাম বলেন, তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন ২০১৩ সালে। কিন্তু মোবাসসেরা খাতুন নিয়োগ পেয়েছেন তারও দুই বছর আগে। কাজেই বিষয়টি তার জানার কথা নয়।

তিনি যোগ করেন, ২০১৮ সালের অডিটেও ওই শিক্ষকের জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়েনি। এ সময় ওই শিক্ষিকাকে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে আঞ্চলিক শিক্ষা দফতরের উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী জানান, একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিবন্ধন সনদ জালিয়াতির বিষয়টির প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। পূর্ণাঙ্গ যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। পরিপূর্ণ সত্যতা মিললে আমাদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget