সালমান ফার্সী (সজল) নওগাঁ : নওগাঁর পোরশা উপজেলায় বরেন্দ্র ভুমিতে মাল্টা চাষ করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন ওবায়দুল্লাহ শাহ নামের একজন সৌখিন কৃষক। প্রতি বছর তাঁর উৎপাদিত মাল্টা থেকে আর্থিক আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অধিক লাভজনক হওয়ায় তাঁকে অনুসরন করে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠেছেন মাল্টা চাষে।
নওগাঁর বরেন্দ্র ভুমি অধ্যুষিত পোরশা উপজেলা। উঁচু নিচু ষ্টেডিয়ামের গ্যালারী সাদৃশ্য জমিতে পানি ধরে রাখা খুবই কঠিন। তাই ধান চাষে উপর্যপরি লোকশানের মধ্যে পড়ে এই অঞ্চলের কৃষকরা লাভজনক বিকল্প ফসলের দিকে আগ্রহী হওয়ায় জেলার পোরশা , সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পতœীতলা উপজেলায় প্রচুর পরিমাণ আম বাগান গড়ে উঠছে। এই এলাকায় যে দিকে চোখ যায় শুধু আম আমের বাগান।
এরই পাশাপাশি কেউ কেউ লাভজনক ভিন্ন ফসল উৎপাদনের নজির সৃষ্টি করেছেন। তাঁদেরই একজন পোরশা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের সৌখিন চাষী ওবায়দুল্লাহ শাহ। তিনি তাঁর নিজস্ব ৫৫ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন মাল্টা, বিভিন্ন প্রজাতির আম এবং পেয়ারা বাগান। এর মধ্যে প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন মাল্টা বাগান। এই বাগান গড়ে তুলতে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা। তাঁর উৎপাদিত মাল্টা বাগানের মধ্যে ৮ বিঘা জমির বাগানে বিগত ৩ বছর ধরে মাল্টা ধরছে আর ১০ বিঘা নতুন বাগান। এই ৮ বিঘায় রয়েছে মোট এক হাজার মাল্টা গাছ। প্রথম বছর প্রতি গাছে ৭ থেকে ৮ কেজি করে মাল্টা উৎপাদিত হয়েছে। এতে এ বছর মোট মাল্টা উৎপাদিত হয়েছে ৭ হাজার কেজি থেকে ৮ হাজার কেজি। প্রতি কেজি পাইকারী ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন ৭ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকায়। দ্বিতীয় বছর প্রতি গাছে কমপক্ষে ২০ কেজি করে মাল্টা উৎপাদিত হয়েছে যার বিক্রি মুল্য ছিল প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। আর এ বছর তৃতীয় বারের মত প্রতি গাছে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ কেজি করে মাল্টা ধরেছে। এতে এ বছর এই বাগানে ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার কেজি মাল্টা উৎপাদিত হবে। তাঁর মাল্টা বিক্রির প্রধান বাজার নাটোর। নাটোর-এর ব্যবসায়ীদের নিকট তাঁর বাগানের মাল্টা বিক্রি করছেন প্রতি কেজি আগের মতই ১০০ টাকা দরে। সেই হিসেবে এ বছর তাঁর জমির মাল্টা বিক্রি হবে ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা। তাই এখন তিনি আর্থিকভাবে খুবই লাভবান।
এ ছাড়াও তিনি তাঁর মোট ৫৫ বিঘা জমির সমন্বিত বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির আম এবং পেয়ারাও চাষ করেছেন। এ বছর কেবলমাত্র পেয়ারা বিক্রি করেছেন প্রায় ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকার। এ ছাড়াও কিছু জমিতে আম, পেয়ারা এবং মাল্টার চারা তৈরী করেছেন। এ বছর কেবলমাত্র আম, মাল্টা ও পেয়ারা চারা বিক্রি করেছেন ১০ লক্ষ টাকার।
ওবায়দুল্লাহ শাহ’র মাল্টা চাষে সফলতা এবং আর্থিক লাভবান হওয়া প্রত্যক্ষ করে এলাকার অনেক চাষী তাঁদের জমিতে মাল্টা চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আবার অনেকে ছোট আকারে মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। তাঁরা নিয়মিত এই মাল্টা বাগানে এসে তাঁর পরামর্শ গ্রহণ করছেন।
তাঁর এই মাল্টা বাগানে এলাকার প্রায় ১৫/২০ জন পুরুষ এবং নারী শ্রমিক নিয়মিত পরিচর্যার কাজ করছেন। একদিকে যেমন তাদের কাজের স্থায়ী নিশ্চয়তা হয়েছে অন্যদিকে প্রতিদিন ২৫০ টাকা করে মজুরী পেয়ে তাদের সংসার পরিচালনার আর্থিক সংগতি হয়েছে।
পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাহফুজ আলম জানান, বরেন্দ্র অধ্যুষিত এসব উঁচু জমিতে মাল্টা চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে। তার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থ্পান করেছেন উপজেলার তেঁতুলিয় গ্রামের ওবায়দুল্লাহ শাহ। তিনি একটি বড় মাল্টা বাগান গড়ে তুলে অনেক লাভবান হয়েছেন। তাঁকে অনুসরন করে এলাকার অনেকেই এখন মাল্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এলাকার মাল্টা চাষীদের সার্বক্ষনিক সব ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন