মোঃ সাইফুল ইসলাম বাগমারা রাজশাহীঃ রাজশাহীর মোহনপুর ও বাগমারায় নিষিদ্ধ পলিথিনে দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। পলিথিন ব্যাগে বাজার ভরে থাকা কেবলই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যর্থতা নয়। এটি বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের একটা অঙ্গীকারগত শোচনীয় ব্যর্থতার নজিরও বটে। পলিথিনের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও পরিবেশের উপর এর বিরুপ প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষিত ও সচেতন মানুষরা ভালভাবেই জানেন। তাঁরাও কিন্তু বাজার থেকে সওদা কিনতে গিয়ে পলিথিন দেখে মুখ ঘুরিয়ে নেন না।
গত ১৭ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা আমাদের এটা শিখতে ও ভাবতে বাধ্য করছে। অবশ্য তার অর্থ এই নয় যে, রাজধানী ঢাকায় পুলিশের নাকের ডগায় নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিনের ব্যবসা ও সারা দেশে এর যে ব্যবহার চলছে, তা ঠেকাতে না পারার বিষয়টি অযৌক্তিক। উপরন্তু মোবাইল কোর্টকেও এই অবৈধ পলিথিন ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার দেওয়া আছে। কিন্তু অনৈতিক সুবিধা পাওয়ায় রাষ্টযন্ত্র গুলো কাজ করে না। কোনো জুত সই বিকল্প না থাকলেও শুধু পুলিশি কড়াকড়ির কারণে ২০০৬-০৭ সাল পর্যন্ত পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার উঠেই গিয়েছিল।
নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যাগ আবার বাগমারা ও মোহনপুর দুই উপজেলার বাজারে ফিরে এসেছে। সরকারের নজরদারি কম থাকায় দিনে দিনে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে নিষিদ্ধ পলিথিনে। বর্তমানে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাটে অবৈধ পলিথিনের পাইকারী ব্যবসা করেন খায়রুল, আলাউদ্দিন, আনারুলসহ আরো ২ /৩ জন। এই রকমি ভাবে বাগমারাতে ভবানিগঞ্জ বাজারে, ও তাহেরপুর বাজারে রয়েছে অনেক দোকানদা। পাইকারী দোকান হতে উপজেলার সবক’টি বাজারের ষ্টেশনারী ও মুদি দোকান থেকে শুরু করে ও কাঁচা বাজার বর্তমানে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার প্রায় আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে কম টাকায় পলিথিন হাতের কাছে পাওয়া যায়,তাই তারা আবার পলিথিন ব্যবহার শুরু করেছেন। আবার অনেকেই জানান,পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ার সেই আইন এখনও কার্যকর আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা।
সবজি, মাছ দোকানীরা বলেন, আমরা তো পলিথিন ব্যাগ বিক্রি করিনা বড় বড় মুদির দোকান থেকে এনে কাস্টমারের সুবিধার্থে দিয়ে থাকি। কেশরহাটে সবজি ও মাছ কেনার সময় রফিকুল ইসলাম, বাগমারা ভবানিগঞ্জ বাজারে মোঃ এনামুল ইক, তাহেরপুর বাজারে রনি নামে এক ক্রেতার কাছে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ ও আইনগত দন্ডনীয় অপরাধের কথা জানালে তিনি বলেন, আসলে ইচ্ছা করে যে নিষিদ্ধ জিনিস ব্যবহার করেছি তা নয়। বাজারে পাওয়া যায় এবং দোকানিরা পলিথিনের ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দিয়ে থাকে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন জিনিস আমিও ব্যবহার করতে চাইনা। সবার আগে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন বন্ধ করা প্রয়োজন। ব্যবহারের সুবিধা ও কম মূল্যের কারণে সহজেই প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। পলিলিথিন অপচনশীল দ্রব্য। পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি ও ক্ষতিকর দিকগুলো প্রকাশ হওয়ায়।
২০০২ সালে ১ জানুয়ারী রাজধানী ঢাকায় এবং ১ মার্চ থেকে সারাদেশে তৎকালীন সরকার ২০ মাইক্রোনের চেয়ে পাতলা ব্যাগ বাজারজাত, মজুদ করণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সুরক্ষা আইন (সংশোধিত) ২০০২ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন মোতাবেক পলিথিন উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহারকারীদের ১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত জেল এবং নূন্যতম ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান আছে। এক’ই আইনে পলিথিন বাজারজাত কারীকে ৬ মাস কারাদন্ড ও দশ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। বর্তমানে এগুলো শুধুই আইনের কথা হয়ে আছে। ২০০২ সালে আইন করে পলিথিন নিষিদ্ধ করার বছর কয়েক পর বন্ধ না হলেও ব্যবহার অনেকটা কমে গিয়েছিলো। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত চালু করা হয়েছে।কিন্তু বাগমারা মোহনপুর উপজেলার বাজার গুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম মাঝে মধ্যে দেখা গেলেও পলিথিনের বিষয়ে কোন নজরদারী না থাকায় এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ও পাইকারী বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে দ্বিগুণ হারে যার ফলে দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে বাগমারা, মোহনপুরের পরিবেশ বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুকি।
পলিথিন ব্যবহারের ক্ষতি নিয়ে কথা বলেন, বাগমারা উপজেলার ও মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পলিথিন এমন একটি পদার্থ, যা মাটির সঙ্গে মিশতে শত শত বছর সময় লাগে। এটি মাটির অভ্যন্তরে গেলেও ক্ষয় হয় না বা মিশে যায় না। পলিথিনের রাসায়নিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ ছাড়া পলিথিন মাটিতে থাকলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। মাটির অভ্যন্তরে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে। এ ছাড়াও ‘পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সিসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে চর্মরোগ তৈরী হয়।
বর্তমান বাগমারা, মোহনপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই ম্যাজিষ্ট্রেট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ শরিফ আহম্মেদ স্যার ও সানওয়ার হোসেন স্যার জানান, এ ব্যাপারে খুব শিগগির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনীয় উদ্ভাবনের জননী। নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকলে এত দিনে একটা সুবিধাজনক সমাধান সূত্র নিশ্চয়ই বের হতো এবং ভোক্তা সমাজও এত দিনে হয়তো সেই নতুন বিকল্প পণ্য ব্যবহারে অভ্যস্ত হতো।
জানা যায়, পলিথিন বন্ধের আইন কার্যকর করা এবং ভোক্তাদের চাহিদা মেটাতে বেশ আগেই একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী সোনালি ব্যাগ উদ্ভাবন করেছেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সব মহলের কাছে রীতিমতো ধরনা দিয়ে চলছেন। তিনি যে সফল হবেনই, সেটাও ইতিমধ্যে হাতে-কলমে পরিষ্কার। পরিবেশমন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকেরা স্বীকার করেছেন যে, ড. মোবারক আহমেদ খান উদ্ভাবিত সোনালি ব্যাগের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা উজ্জ্বল। আর সেটা শুধু বাংলাদেশের চাহিদা মেটানোর দিক থেকেই নয়, এই ব্যাগ বিশ্বের আরও বহু দেশের কাছে সমাদৃত হবে। নীতিনির্ধারকদের এটাও অজানা নয়, জাপানসহ কয়েকটি উন্নত দেশ বাংলাদেশি সোনালি ব্যাগ আমদানির বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার রোল মডেল হলেও দেশের ‘স্বর্ণসূত্র’সংশ্লিষ্ট একটি শিল্পের বিকাশে কেন বিনিয়োগ মিলছেনা তা সত্যিই চিন্তার বিষয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন