নাজমুল হোসাইন, কুড়িগ্রাম: চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে। দুচোখ যে দিকে যায় শুধু পানি আর পানি। এই পানির মধ্যে সবুজ সমারোহের দেখা মিললেও মাটির খোঁজ পাওয়া দুষ্কর। নদীতে দুলতে দুলতে যাত্রীবাহী কিছু ডিঙি নৌকা ছুটে চলছে। অন্যদিকে পাল তোলা নৌকার চলার দৃশ্য যে কারোর মনকে নাড়া দেবে। এসব দৃশ্যের মাঝে হঠাৎ চোখ পড়ল ছোট্ট একটি ঢিবির দিকে।
বন্যার পানি থেকে মাত্র হাত দুয়েক উঁচু ঢিবিতে কয়েকটি টিনের একটি চাল। ঘেরা রয়েছে বস্তা আর ভাঙাচোড়া বাঁশের কাবারির বেড়া দিয়ে। এখানে মানুষ থাকাটা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হবে। কিন্তু হঠাৎ বড় সিলভারের পাতিল নিয়ে এক বুক পানি ডিঙ্গিয়ে ভেজা শরীরে এক নারীকে ঢিবির দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। একটু এগিয়ে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। পাতিলে কী? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নারীর উত্তর- ‘খাবার পানি।’ কথা শুনেই চোখ কপালে উঠে গেল!
কোথা থেকে এই পানি নিয়ে আসলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নারীর সাদামাটা উত্তর- ‘বাহে মেলা দূর থেকে আনা নাগে।’ কৌতূহল নিয়ে ঢিবির দিকে এগিয়ে যেতেই ঘরের দৃশ্য দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। যেন বানের পানিতে একঘরে হয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে একটি পরিবারকে। বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা-কষ্ট এবং মানবেতর জীবন সব যেন একত্রিত হয়ে ভর করছে পরিবারটির ওপর। মাত্র ১২-১৫ ফুটের দৈর্ঘ্যের একটি টিনের চালের ঘরে এক মাস যাবৎ দিন কাটছে পরিবারের সাতজনের। এই চালের এক কোণে রয়েছে একটি গরু থাকার ব্যবস্থা।
বাঁশের টংয়ের ওপর স্বামী, সন্তান, নাতি, মেয়ে, জামাইসহ মানবেতর জীবন কাটছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের রহিমা বেগমের।
রহিমা বেগম জানান, তার স্বামী খোরশেদ একজন কৃষক। বছর চারেক আগে বোর্ডের হাটে নদী ভাঙনে বসতভিটে সব হারিয়েছেন। এখন অন্যের দেয়া জায়গায় কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। নিচু জায়গা হওয়ায় বানের পানিতে ঘরবাড়িতে কোমর পানি। আশপাশে কোনো উঁচু জায়গা না থাকায় ধরলা নদীর তীর ঘেঁষা একটি উঁচু ঢিবিতেই আশ্রয় নিয়েছেন। এক মাস ধরে এমন কষ্টে দিন কাটলেও আজও কোনো সাহায্য পাওয়া দূরে থাক চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউ খোঁজ নেয়নি। এক বেলা কোনো রকমে রান্না করে তাই দিয়ে দিন পার করেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্বামী এবং জামাই বেকার দিন কাটলেও কোনো রকম সংসার চলত। কিন্তু বন্যা আসায় সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নদীতে মাছ ধরে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে সবার।
তিনি বলেন, এই ছোট্ট চালার মধ্যে সাতজন মানুষ আর একটি গরু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। নদী দিয়ে নৌকা গেলে কিংবা বাতাস উঠলে ভয়ে জেগে রাত পার করতে হয়। কখন যেন নদীতে ঢিবিটা ভেঙে সবাই ভেসে যাই। বৃষ্টি এলে এই কষ্ট আরও দ্বিগুণ হয়। নিজেদের খাবার জুটুক বা নাই জুটুক বিপাকে পড়তে হয়েছে দেড় বছরের নাতি আর গরুর খাদ্যের সঙ্কট নিয়ে। প্রাকৃতিক কাজ নদীতেই সারছেন তারা। সাপ কিংবা ঢিবি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা সব কিছু তুচ্ছ করে জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে যুদ্ধ করতে হচ্ছে এই পরিবারটি।
পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, বন্যায় তার ইউনিয়েনের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাসভাসিদের জন্য যে ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা অপতুল।
তিনি বলেন, বন্যার সময় অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চায় না। কষ্ট করে হলেও তারা বাড়িতে থাকার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ বাড়ির আশপাশে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়।
এদিকে শনিবার (২৫ জুলাই) সকালে ওই পরিবারের দুর্দশার খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক কর্মকর্তা পরিবারটিকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে।
বন্যার পানি থেকে মাত্র হাত দুয়েক উঁচু ঢিবিতে কয়েকটি টিনের একটি চাল। ঘেরা রয়েছে বস্তা আর ভাঙাচোড়া বাঁশের কাবারির বেড়া দিয়ে। এখানে মানুষ থাকাটা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হবে। কিন্তু হঠাৎ বড় সিলভারের পাতিল নিয়ে এক বুক পানি ডিঙ্গিয়ে ভেজা শরীরে এক নারীকে ঢিবির দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায়। একটু এগিয়ে গিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। পাতিলে কী? এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নারীর উত্তর- ‘খাবার পানি।’ কথা শুনেই চোখ কপালে উঠে গেল!
কোথা থেকে এই পানি নিয়ে আসলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নারীর সাদামাটা উত্তর- ‘বাহে মেলা দূর থেকে আনা নাগে।’ কৌতূহল নিয়ে ঢিবির দিকে এগিয়ে যেতেই ঘরের দৃশ্য দেখেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। যেন বানের পানিতে একঘরে হয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে একটি পরিবারকে। বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশা-কষ্ট এবং মানবেতর জীবন সব যেন একত্রিত হয়ে ভর করছে পরিবারটির ওপর। মাত্র ১২-১৫ ফুটের দৈর্ঘ্যের একটি টিনের চালের ঘরে এক মাস যাবৎ দিন কাটছে পরিবারের সাতজনের। এই চালের এক কোণে রয়েছে একটি গরু থাকার ব্যবস্থা।
বাঁশের টংয়ের ওপর স্বামী, সন্তান, নাতি, মেয়ে, জামাইসহ মানবেতর জীবন কাটছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের রহিমা বেগমের।
রহিমা বেগম জানান, তার স্বামী খোরশেদ একজন কৃষক। বছর চারেক আগে বোর্ডের হাটে নদী ভাঙনে বসতভিটে সব হারিয়েছেন। এখন অন্যের দেয়া জায়গায় কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। নিচু জায়গা হওয়ায় বানের পানিতে ঘরবাড়িতে কোমর পানি। আশপাশে কোনো উঁচু জায়গা না থাকায় ধরলা নদীর তীর ঘেঁষা একটি উঁচু ঢিবিতেই আশ্রয় নিয়েছেন। এক মাস ধরে এমন কষ্টে দিন কাটলেও আজও কোনো সাহায্য পাওয়া দূরে থাক চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউ খোঁজ নেয়নি। এক বেলা কোনো রকমে রান্না করে তাই দিয়ে দিন পার করেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্বামী এবং জামাই বেকার দিন কাটলেও কোনো রকম সংসার চলত। কিন্তু বন্যা আসায় সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নদীতে মাছ ধরে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে সবার।
তিনি বলেন, এই ছোট্ট চালার মধ্যে সাতজন মানুষ আর একটি গরু নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। নদী দিয়ে নৌকা গেলে কিংবা বাতাস উঠলে ভয়ে জেগে রাত পার করতে হয়। কখন যেন নদীতে ঢিবিটা ভেঙে সবাই ভেসে যাই। বৃষ্টি এলে এই কষ্ট আরও দ্বিগুণ হয়। নিজেদের খাবার জুটুক বা নাই জুটুক বিপাকে পড়তে হয়েছে দেড় বছরের নাতি আর গরুর খাদ্যের সঙ্কট নিয়ে। প্রাকৃতিক কাজ নদীতেই সারছেন তারা। সাপ কিংবা ঢিবি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা সব কিছু তুচ্ছ করে জীবন বাঁচানোর সংগ্রামে যুদ্ধ করতে হচ্ছে এই পরিবারটি।
পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন জানান, বন্যায় তার ইউনিয়েনের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাসভাসিদের জন্য যে ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা অপতুল।
তিনি বলেন, বন্যার সময় অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চায় না। কষ্ট করে হলেও তারা বাড়িতে থাকার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ বাড়ির আশপাশে উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়।
এদিকে শনিবার (২৫ জুলাই) সকালে ওই পরিবারের দুর্দশার খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক কর্মকর্তা পরিবারটিকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন বলে জানা গেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন