জাহিদুল ইসলাম: টানা বৃষ্টি ও গজলডোবা থেকে পানি ছেড়ে দেয়ায় ফুঁসে উঠেছে তিস্তা নদী। শুক্রবার (১০ জুলাই) সকাল ৬টার পর হতে ১৫ ঘণ্টায় নদীর পানি ৪৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে রাত ৯টায় বিপৎসীমার (৫২ দশমিক ৬০) ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অথচ এ দিন সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচে ছিল। সেই সঙ্গে ঢলের পানি দ্রুতগতিতে অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে।
নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর পানি সর্বপ্রথম গত ২০ জুন বিপৎসীমার ওপরে ওঠে। যা পরের দিন ২১ জুন সকালে নেমে যায়। এর ছয়দিনের মাথায় ২৬ জুন তিস্তা নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় পুনরায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে ২০ সেন্টিমিটার ওপরে উঠে ২৮ জুন সকালে নেমে যায়।
এরপর তৃতীয় দফায় ৪ জুলাই সকালে তিস্তার পানি ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ওইদিন সন্ধ্যায় তা নেমে গিয়েছিল। এবার শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে উজানের পানি বেড়ে গেলে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে চলে আসে। তিন ঘণ্টা পর উজানের ঢল আরও ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে যায়। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় আরও বৃদ্ধি পায় ১৩ সেন্টিমিটার। ফলে তিস্তা ১২ ঘণ্টায় পানি ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর (৫২ দশমিক ৮৮) দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রাত ৯টায় তা আবারও ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রচণ্ডভাবে উজানের ঢল ধেয়ে আসা অব্যাহত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
এদিকে ওপারে দোমহনী হতে বাংলাদেশের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ভারত কর্তৃপক্ষ তিস্তা নদীর অরক্ষিত এলাকায় লাল সংকেত জারি করেছে।
উত্তরাঞ্চল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, উজানে ভয়াবহতার কারণে ভারত লাল সংকেত জারি করেছে। অপরদিকে বাংলাদেশ অংশে হলুদ সংকেত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে লাল সংকেত দেয়া হবে। তিস্তা ব্যারাজের কর্মকর্তারা নজরদারিতে মাঠে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে উজানের ঢলে তিস্তায় চতুর্থ দফায় ভয়াবহ বন্যায় তিস্তা অববাহিকায় নতুন করে ১৫ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চরবেষ্টিত গ্রামের মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ৬ ইউনিয়ন পূব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, গয়াবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাঁপানী ও ঝুনাগাছ চাঁপানীর ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, তিস্তা ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। ডিমলার কিছামত ছাতনাই, ঝাড় শিঙ্গেশ্বর, চর খড়িবাড়ী,পূর্ব খড়িবাড়ী, পশ্চিম খড়িবাড়ী, তিস্তা বাজার, তেলির বাজার, বাইশ পুকুর, ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ী এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন গরু ছাগল, জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদে সরে গেছেন। প্রায় ৫ হাজার পরিবার নতুন করে বন্যা কবলিত হয়েছে।
পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান জানান, পরিস্থিতি ভালো না। উজানের ঢল প্রচণ্ডভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এবার ভয়ংকর বন্যা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, দুপুরের পর থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে মানুষজনকে সরিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। ডিমলা উপজেলায় তিস্তা এলাকায় সরকারিভাবে ছয়টি নৌকাসহ অসংখ্য নৌকা বন্যা কবলিত মানুষজনকে সরিয়ে নিতে সহায়তা করছে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় বলেন, আমরা সতর্ক রয়েছি। জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তিস্তা অববাহিকার চর ও গ্রামের লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.