ফজলুল হক শাওন: রাজধানীর কাঁচাবাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশিরভাগ সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। আজ শনিবার (১৮ জুলাই) সকালে বগুড়ার মহাস্থান বাজারে যে দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে ঢাকার বাজারে প্রায় চারগুণ বা তারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এই সময় উত্তরাঞ্চলে তরকারি সস্তা হলেও ঢাকার কোনো ব্যবসায়ী যাচ্ছেন না সেখানে। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে যে টাকা দিয়ে সবজি কেনেন তার চেয়ে বেশি লাগে গাড়ি ভাড়া।
গতকাল শুক্রবার মুগদা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, করলা ৬০-৭০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা ও খিরা ৫০-৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স, ধুন্দল, ঝিঙা, কাঁকরোল ও চিচিংগা ৫০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কচুরলতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচকলা প্রতি হালি ৩০-৪০ টাকা, লেবু প্রতি হালি ২০-২৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের কেজি এখন ১৬০ থেকে ২০০ টাকা।
বগুড়ার মহাস্থান বাজারের আড়তদার মুস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আজ শনিবার করলা প্রতিকেজি ১৫ টাকা, পটল ১৬ টাকা, মুলা ১৫ টাকা, শসা ২০ টাকা, ঢ্যাঁড়স, ধুন্দল, ঝিঙা, কাঁকরোল ও চিচিংগা ১৫ থেকে ২০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, বরবটি ২০ টাকা, কচুরলতি ১০ থেকে ১৫ টাকা, কাঁচকলার হালি ১২ থেকে ১৫ টাকা, লেবু ৬ টাকা থেকে ৮ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়ার ধুনটের সবজি বিক্রেতা হেলাল জানান, আজ শনিবার হাটের দিন। এই হাটে সকাল থেকে প্রচুর তরকারির আমদানি হয়েছে। বন্যা ও অতি বৃষ্টিতে সবজির গাছ মারা যাচ্ছে। এ কারণে সবাই সবজি তুলে বাজারে নিয়ে আসছেন। কিন্তু বাজারে ঢাকার পাইকার নেই। এই বাজারে আজ পটল বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১২ টাকা, বেগুন ১৫ টাকা, ঢ্যাঁড়স ১২ টাকা, কাঁকরোল ১০ টাকা, চিচিংগা ১৫ টাকা, কচুরলতি (মোটা) ১০ টাকা, আর চিকন কচুরলতি (দেশি) ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
হেলাল মাঝেমধ্যে ঢাকায় সবজি নিয়ে আসেন। ঢাকার সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, ধুনট বাজারে আজ যে চাল কুমড়া (জালি) ৫ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে ঢাকায় সেটা ৩০ টাকা, যে লাউ এখানে ১৫ টাকা, তা ঢাকায় ৬০ টাকা, কচুরলতি এখানে ১০ টাকা ঢাকায় সেটা ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
ধুনটে তরকারির দাম এত সস্তা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে হেলাল বলেন, আগে এই হাটে ঢাকার যথেষ্ট পাইকার আসতো কিন্তু এখন আর পাইকার আসছে না। যে টাকা দিয়ে এক ট্রাক তরকারি কিনবে তার চেয়ে ট্রাক ভাড়া বেশি পড়ে। তাছাড়া পথের মধ্যে ট্রাকের নানা খরচে পোষায় না। তবে আলুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা এবং বগুড়ায় আলুর দাম একই। এখানেও প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
হেলাল বলেন, আর দেড় সপ্তাহের মধ্যেই বন্যার কারণে বগুড়াতেও সবজির দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হবে।
মুগদা বাজারের সবজি বিক্রেতা শহীদ বলেন, গ্রামে-গঞ্জে সব জায়গায় এখন বন্যার পানি উঠে গেছে। অনেকের ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সবজির দাম এখন একটু বেশি। গত এক দুই সপ্তাহ ধরেই সব ধরনের সবজি বাড়তি দামে বিক্রি করছি। কারণ আমাদের পাইকারিতে কিনতে হয় বেশি দামে।
মুগদা বাজারের সবজি ক্রেতা আবুল কালাম জাগো নিউজকে বলেন, সবজি কিনতে গেলেই ৬০ টাকা। দাম করা যায় না, সবার কাছে এক দর। মিডিয়ায় খবর আসে গ্রামের কৃষক সবজির মূল্য পায় না। আর আমরা বাজারে এসে কম দামে কোনো সবজি পাই না। তার মানে ঢাকায় এনেই দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তিন থেকে চারগুণ। আমাদের দেশে এই কারসাজি দেখার কেউ নেই। কথা বলেও লাভ নেই।
শুক্রবার (১৭ জুলাই) রাজধানীর মতিঝিল, মুগদা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এসব বাজারে বেগুন, বরবটি, কাঁকরোল, করলা, মুলা, ঝিঙা, চিচিংগা, ধুন্দলসহ বেশিরভাগ সবজি কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন