বাঁধ ভেঙ্গে হাজারো লোক ঘর ছাড়া নওগাঁয় নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত

বাঁধ ভেঙ্গে হাজারো লোক ঘর ছাড়া নওগাঁয় নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত

তন্ময় ভৌমিক: কয়েক দিনের একটানা প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বিপদসীমার উপরদিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নওগাঁর আত্রাই নদ ও ছোট যমুনাসহ প্রায় সবকটি নদীর পানি। ফলে পানি বন্দি হওয়ায় হাজারো পরিবার নিজ বসত বাড়ি থেকে বাঁধ ও উঁচু সাথে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকেই বৃহস্পতিবার সকালে রান্না করতে না পারায় শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করেছেন। বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষজন গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।
নওগাঁর মান্দা উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই নদের পানি জোতবাজার পয়েন্টে এখন বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার ও আত্রায়ে প্রায় ৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মান্দায় ৫টি আত্রাই ৪টি ও রাণীনগরে ১ স্থানে বাঁধ ভেঙে হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। শতশত পরিবার মান্দা ও আত্রাইয়ের বাঁধ ও উঁচু স্থানে বাড়ির আসবাপত্র নিয়ে অবস্থান করছে।
এদিকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মান্দা ও আত্রাইয়ে বন্যাদুগর্ত প্রায় ২ হাজার পরিবারের মাঝে বিকেলে খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বন্যার কবলে পড়ে আত্রাই নদ ও রাণী(ফকিরনি) নদীর উভয় তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৫০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে এ দুই নদীর উভয় তীরের ৫টি বেড়িবাঁধ ও জোকাহাট দাসপাড়া পানি উন্নয়ন বোডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে মান্দা-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দুর্গত এলাকার মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ মূল বাঁধে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। এসব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ বাধতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকরা প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ভাঙ্গনকৃত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ জোকাহাট দাসপাড়া, বেড়িবাঁধগুলো হচ্ছে পার-নুরুল্লাবাদ মন্ডলপাড়া, চকরামপুর, কয়লাবাড়ি ও বাইবুল্যা।
বুধবার এসব বেড়িবাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে ধান, পাট ও সবজির ক্ষেত। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের বন্যায় চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর আর মেরামত করা হয়নি। এতে করে নদীর পানি বাড়ার ফলে এসব ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে দুই গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
এদিকে পানির প্রবল চাপে আত্রাই ও রানীনগর নদীর উভয় তীরের বনকুড়া, দক্ষিণ চকবালু, জোকাহাট, চকরামপুর, উত্তর চকরামপুর, কয়লাবাড়ি, শহরবাড়ি ভাঙ্গীপাড়া, নুরুল্লাবাদ নিখিরাপাড়া, করাতিপাড়া, জোতবাজার, বাগাতিপাড়া, পশ্চিম নুরুল্লাবাদ, শামুকখোল, আত্রাই ও রাণীনগরে ৫০টি পয়েন্ট চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দিনরাত কাজ করছেন স্থানীয়রা। বাঁধে রাতে বসানো হয়েছে পাহারা।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা আত্রাই নদীর ডান তীরে পারনুরুলন্ডা বাদ থেকে মিঠাপুর পর্যন্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাত্র এক ফুট নিচে পানি অবস্থান করছে। কোথাও কোথাও মূল বাঁধ টপকে পানি পার হচ্ছে। বালুর বস্তা ফেলে পানি ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করার কাজ চলছে। দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে খোলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ৫শ’ পরিবারের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
এদিকে, আত্রাইয়ে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে উপজেলার আত্রাই-বান্দাইখাড়া সড়কের জাতআমরুল নামক স্থানের সড়ক, পাঁচুপুর পালপাড়া সংলগ্ন বেঁড়িবাঁধ, আত্রাই-সিংড়া সড়কের বৈঠাখালী বেড়িবাঁধ, ভরতেঁতুলিয়া ও মধুগুড়নই গ্রামে বেড়ি বাঁধ ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শিবপুর গ্রামের অর্ধেকাংশ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় ৭ হাজার পরিবার। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে পানিবন্দী প্রায় ১ হাজার ৮০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ হিসেবে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার সব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে। আত্রাই-নওগাঁ সড়কের সদুপুর নামক স্থানে সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে এবং আত্রাই-পোড়াখালী সড়কের উপর হাঁটু পরিমাণ হয়েছে ফলে এ সড়ক দিয়ে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এদিকে এসব সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আত্রাই-নওগাঁ, আত্রাই-কালীগঞ্জ এবং আত্রাই-সিংড়া সড়কে ভারি যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
আত্রাই উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নভেন্দু নারায়ন চৌধুরী বলেন, পানিবন্দী প্রায় ১ হাজার ৮০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ হিসেবে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। পানিবন্দী মানুষের মাঝে ত্রাণ হিসেবে শুকনো খাবার চিড়া, মুড়ি, গুড়, খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হয়েছে। এদিকে আত্রাই-সিংড়া এবং আত্রাই-বান্দাইখাড়া সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার লোকজন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে এসব রুটে চলাচলকারী সিএনজি, অটোচার্জার ও রিক্সা ভ্যান চলকরা চরম বিপাকে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কেএম কাউছার হোসেন বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে উপজেলার কয়েক স্থানের বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে প্রায় ২ হাজার ৫৭ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে কৃষক অনিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানাউল ইসলাম জানান, আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার প্রায় ৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দী পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে এবং এ কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন যেসব স্থানের সড়কগুলো ঝুঁকিপূর্ণ তা রক্ষায় জোর চেষ্টা চলছে।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget