নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীর পানি কিছুটা কমলেও এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে হু হু করে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় এখন প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের আত্রাই নদীর ৬টি পয়েন্টে ও ছোট যমুনা নদীর কয়েকটি স্থানে রেরী বাধ ভেঙে জেলার রানীনগর, আত্রাই ও মান্দা উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে এই তিন উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের দেড় লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি। এসব এলাকার প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের কোটি কোটি টাকার মাছ। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ এখন উঁচু স্থানে, সড়ক, বেড়িবাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ পানিতে নিমজ্জিত বাড়ির পাশেই নৌকায় অবস্থান করছেন। এসব এলাকায় এখন বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবারসহ গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
এদিকে আত্রাই নদীর ৬টি বাধঁ ভেঙ্গে যাওয়ার কারনে নওগাঁর মান্দা-আত্রাই,বান্দাখাড়া-আত্রাই,নাটোর সিংড়া-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছানাউল্লাহ জানিয়েছেন, আত্রাই উপজেলার জাত আমরুল এবং বৈঠাখালি নামকস্থানে বাঁধ ভেঙ্গে পাচুপর,আহসানগঞ্জ, কালিকাপুর, হাটকালুপাড়া ও ভোপাড়া ইউনিযন নতুন করে প্লাবিতসহ ৫টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। উপদ্রুত ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৬০টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। তাৎক্ষণিক ভাবে প্রায় ২ হাজার পরিবারের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে শুকনা খাবার এবং চাল বিতরণ করা হয়েছে। আহসানগঞ্জ মেমোরিয়াল একাডেমীতে ৫০/৬০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানিয়েছেন,আত্রাই নদীর ডান তীরে ৬টি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় উপজেলার কশব,নুরুল্লাহবাদ ও বিষ্ণপুর ৩টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ৪০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। এদের অনেকেই নদীর বাঁধসহ বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এই ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই উপজেলায় তাৎক্ষণিক ভাবে ৫০০ পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার এবং চাল বিতরণ করা হয়েছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।
রানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ছোট যমুনা নদীর নান্দাইবাড়ি-কৃষ্ণপুর-মালঞ্চি বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ৩টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, গত ৩ দিনে জেলায় ৩ হাজার ৮৪৮ হেক্টর জমির ধান ও শাকসবজি নিমজ্জিত হয়েছে। এপর্যন্ত ৩১৩৪ হেক্টর আউশ, ৩৭৬ হেক্টর রোপা আমণের বীজতলা, ২০০ হেক্টর বপণ আমণ, ৫০ হেক্টর রোপনকৃত আমণ, ১১ হেক্টর মরিচ, ১৫৪ হেক্টর সবজি এবং ৭৭ হেক্টর পাটসহ সর্বমোট ৩৮৪৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়েছে। যেহেতু নদীর পানি কমতে শুরু করেছে এতে পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমান অনেকাংশে কমে আসবে।
নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে আত্রাই নদী, ফকিরানী ও ছোট যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ৯টি স্থানে ও বেরীবাঁধের ৭টি স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে তিন উপজেলার ২৪২টি পুকুরের ৬৮ হেক্টর জমিতে ৩ কোটি ৪২ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।
জেলা প্রশাসক মো. হারুন অর রশীদ বন্যা কবলিত বিভিন্ন গ্রামে পায়ে হেঁটে ও নৌকায় চড়ে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং বানভাসী মানুষের সাথে কথা বলেন, তাদের বিভিন্ন সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থা করেন। পরে তিনি সহস্রাধিক বানভাসী মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী হিসেবে ১০ কেজি করে চাল, চিড়া, স্যালাইনের প্যাকেট বিতরণ করেন। এছাড়াও বানভাসী মানুষের বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল, ভ্রাম্যমান ল্যাট্টিন ও স্ট্রীট লাইটের ব্যবস্থা করে দেন।
তিনি আরও জানান, বন্যা কবলিত মানুষের মাঝে ১৩৫ মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ ২ হাজার ৫ শত নগদ টাকা ত্রাণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ২১৫ মে:টন চাল, ২ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট, নগদ ২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা ও গো খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা মজুদ রয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে বিতরন করা হবে বলে জানান তিনি। উজানে বৃষ্টির পানি না হলে নদীর পানি কমতে শুরু করবে। আমাদের খাদ্যে কোন অভাব নাই বলে জানান তিনি।
শনিবার বিকেলে নওগাঁর আত্রাই নদীর পানি জোতবাজার পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬.১০ সেন্টিমিটার ও ছোট যমুনা নদীর লিটন ব্রীজের ১৫.২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এখনও প্রবাহিত হচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন