তন্ময় ভৌমিক, নওগাঁ : নওগাঁর মাঠে কৃষকরা আউশ ধান পরিচর্যায় ব্যস্থ সময় পার করছেন। গত ইরি-বোরো ধান নায্য দাম ও কৃষি প্রণোদনা পাওয়ায় নওগাঁয় গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ১০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের প্রণোদনাসহ সহযোগিতা আরো বেশি করা হলেও আগামীতে কৃষকরা বৃষ্টি নির্ভর আউশ ধান চাষে আরো উদ্বুদ্ধ হবে এমনটাই জানালেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁয় চলতি আউশ ধান চাষ করা হয়েছে ৭১ হাজার ৩শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে। গত আউশ মৌসুমে ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছিল। চলতি আউশ মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলা মধ্যে মান্দায় সবচেয়ে ১৯ হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছে। আউশ ধানের বীজ তলা থেকে ধান কাটা পর্যন্ত ১শ’ থেকে ১শ’ ১০ দিন সময় লাগে। তাছাড়া সারের পরিমাণ বোরো এবং আমন ধান চাষ থেকে আউশ ধান চাষে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ খরচ কম হয়।
চলতি আউশ মৌসুমে নওগাঁ সদরে ৪ হাজার ২শ’ ৭৫ হেক্টর, রাণীনগরে ১ হাজার ৪শ’ ২৫হেক্টর, আত্রাইয়ে ১ হাজার ৫শ’ ৩৫হেক্টর, বদলগাছীতে ১হাজার ৫শ’ ২০হেক্টর, মহাদেবপুরে ১৫হাজার ৬শ’ ৭০হেক্টর, পতœীতলায় ৯হাজার ২শ’ ৪০হেক্টর, ধামইরহাটে ৩ হাজার ৬শ’ ৯০হেক্টর, সাপাহারে ১ হাজার ৮শ’ ১৫হেক্টর, পোরশায় ১ হাজার ১শ’ ২০হেক্টর, মান্দায় ১৯ হাজার ৭শ’ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ১১হাজার ৭শ’ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে।
কৃষি বিভাগ আউশের প্রণোদনা হিসেবে জেলায় ৩০ হাজার ২শ’ ৬৮জন কৃষকদের মাধ্যে ৫ কেজি উন্নত জাতের বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০কেজি এমওপি সার সরবরাহ করছেন। বন্যায় জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হলেও কৃষি বিভাগ আশা করছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আউশের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের চৌঘাট গ্রামের কৃষাণী সেলিনা বলেন, ইরি ধানের দাম ভালো পেয়েছি। চলতি বছরে দুই বিঘা জমিতে আউশ ধান চাষ করেছি ধানের ভালো দাম পাওয়ার আশায়।
চকমহেশ গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে বীজ, সার বিনামূল্যে প্রদান করায় আমরা এ ধান চাষ করেছি। বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের পরেই আউশ ধান চাষ করা হয়ে থাকে। ফলে জমি পতিত না থাকায় জমিতে আগাছা জন্মাতে পারে না। অন্যদিকে প্রাকৃতিক বৃষ্টিতেই প্রায় এই আউশ ধান চাষ সম্পন্ন হয়। এই ধান ঘরে তোলারপর আমন ধান চাষ করা হয়। বছরে বোরো, আউশ ও আমন ধান চাষ করায় কৃষকদের বেশি লাভ হয়ে থাকে।
মহাদেবপুর উপজেলার স্বরসতীপুর গ্রামের খাঁপাড়ার কৃষক আব্দুস ছাত্তার জানান, গত বছর ৪ বিঘা ধান লাগিয়েছিলেন। প্রতি বিঘায় ১৭ মণ করে ধান উৎপাদন হলেও ৫শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকায় বিক্রি করেছিলেন। লাভ বেশি না হলেও কিছু লাভ হয়েছিল। তবে গত ইরি-বোরো ধানের কাটা মাড়াইয়ের শুরু থেকে প্রকার ভেদে ৯শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০ টাকা দরে প্রতি মণ ধান কেনা-বেচা হচ্ছে। বোরো ধানের নায্য মূল্য পাওয়ায় এ বছর ৬ বিঘা আউশ লাগিয়েছেন। কৃষি প্রণোদনা না পাওয়ায় অভিযোগ করে বলেন, আগামীতে তাদের মতো অনেক কৃষকই সরকারি এই সহযোগিতা পাননি। সঠিক কৃষকদের এই সহযোগিতা দেওয়ার দাবি জানান।
একই গ্রামের আদিবাসিপাড়ার কৃষক শয়ন ভুঁইয়া জানান, বোরো ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর প্রথম ১ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন। জমিতে পানি, চাষ, নিরানি, সার দিয়ে এ পর্যন্ত মোট খরচ ৪ হাজার টাকার মতো। এখন কাটা-মাড়াইয়ের খচর হবে ২ হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা। তাহলেই তারা ঘরে ধান তুলতে পারবেন।
মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরু চন্দ্র রায় বলেন, কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় মহাদেবপুরে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বেশি আউশ চাষ করেছেন। গত বছর প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছিল। কৃষি বিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছেন। কৃষকরা যতক্ষণ ফসল ঘরে না তুলছেন ততক্ষণ কৃষি বিভাগ তাদের পাশে থাকবে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ জানান, আউশ ধান চাষে তেমন সেচ ও সারের প্রয়োজন হয় না। নওগাঁয় আউশ মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার কৃষকদের মধ্যে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে সার ও ধান বীজ দেওয়া হয়েছে যাতে কৃষকরা বেশি করে আউশ ধান চাষ করেন। বন্যায় জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হলেও কৃষি বিভাগ আশা করছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আউশের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
অপরপ্রশ্নে তিনি আরো বলেন, জেলার বাঁকি কৃষকদের কৃষি সুবিধা দিতে পারলে আগামিতে নওগাঁয় আরো ধান উৎপাদন চাষে কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হবে। ফলে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন